দেশের সাংস্কৃতিক কর্মীদের চাওয়া সুস্থ রাজনীতি ও ভোটাধিকার

প্রকাশিত: ৮:৪২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০১৮

আসন্ন একাদশ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সহসম্পাদক দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী মনির খান বলেন, বর্তমান রাজনীতিতে কথা বলার অধিকার নেই। ১০ জন লোক একত্রে বসার সুযোগ নেই। কণ্ঠে শিকল পরিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি জনসমাবেশ ও আলোচনা সভা করার অনুমতি চাইতে গেলেও সেখানে না শব্দটি আমাদের ভাগ্যে জুটছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। দেশের সংস্কৃতির একমাত্র চাওয়া সুস্থ রাজনীতি ও ভোটাধিকার।

সম্প্রতি রাজধানীর শান্তিনগরের টুইন টাওয়ারের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে মানবকণ্ঠকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মনির খান এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদার জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে দলের সাংগঠনিক অবস্থান, রাজপথে বিএনপির আন্দোলন জোরদার, সরকারের বিরোধী দল দমনের নীতির অবস্থানের সমালোচনা, আসন্ন একাদশ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের প্রস্তুতি, তার নির্বাচনী ঝিনাইদ-মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর এলাকার বিএনপির বর্তমান অবস্থান ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন নিয়ে তার ভাবনাসহ নানা বিষয়ে খোলামেলাভাবে কথা বলেন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে।

এক প্রশ্নের জবাবে মনির খান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বন্দি হওয়ার পর থেকে আমাদের আগামীর দেশনায়ক বিএনপির কাণ্ডারী তারেক রহমান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি সুদূর লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। সেখান থেকে দক্ষতার সঙ্গে ও যোগ্যতার সঙ্গে বিএনপির রাজনীতি পরিচালনা করছেন। আপনি জেনে খুশি হবেন দায়িত্ব দেয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বিএনপির যতগুলো অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল এবং অন্যান্য অঙ্গ সংগঠন যা আছে এবং দ্রুত জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো ইতিমধ্যে শেষ করেছেন। মনির খান বলেন, নির্দেশনা আছে জেলা কমিটি শেষ হওয়ার পরে এক মাসের মধ্যে প্রত্যেক থানা কমিটিগুলোকে শেষ করে দলকে সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন তারেক রহমান। সে আলোকে নেতাকর্মীরা অত্যন্ত চাঙ্গা হয়েছে এবং সেই কাজগুলো প্রায় সমাপ্তির পথে। তিনি বলেন, আমরা আলামত পাচ্ছি রাজনৈতিকভাবে দলকে গোছানোর কাজটি তিনিই করছেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আগামী জাতীয় নির্বাচন আপনি আমি সবাই জানি ডিসেম্বরে। আনুমানিকভাবে ধারণা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনটা হবেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছে সে নির্বাচন সাধারণ মানুষ দেখতে চায় না। সমস্ত দলের অংশগ্রহণ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যেটাকে আমরা বলি স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি এবং গণতন্ত্রের সঠিক চর্চার মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচনটা আমি, আপনি, আমরা আশা করছি।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থান সম্পর্কে মনির খান জানান, দলকে গোছানো হচ্ছে। বর্তমান রাজনীতি যেখানে চলে গেছে কথা বলার অধিকার নেই। ১০ জন লোক একত্রিত বসার সুযোগ নেই। কণ্ঠে শিকল পরিয়ে দেয়া হয়েছে। অনুমতি চাইতে গেলে কোথাও জনসমাবেশ কোথাও আলোচনা অনুমতি চাইলে সেখানে না শব্দটি আমাদের ভাগ্যে জুটছে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। সে আন্দোলনের প্রস্তুতি স্বরূপ অঙ্গ সংগঠন গুছিয়ে নেয়া এবং বিএনপিকে শক্তিশালী পর্যায়ে এনে আগামী নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণে এবং স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতির মাধ্যমে নির্বাচন করার জন্য তারেক রহমান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মনির খান জানান, আমরা সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে, রাজনীতিক হিসেবে যতটুকু দায়িত্ব পালন করছি- সমস্ত সাংস্কৃতিক কর্মীর চাওয়া এ দেশে সুস্থ রাজনীতি সুস্থ গণতন্ত্রের চর্চা এবং ভোটাধিকার- যার যার ভোট তিনি দিতে পারবেন। মরা ব্যক্তির ভোট দেয়ার রহস্যজনক ইতিহাস আর যেন আমাদের চোখে না ভাসে- এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জাসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির খান বলেন, আমি একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে দেশের এবং রাজনীতির সুস্থতা কামনা করছি।

নিজ নির্বাচনী আসন ঝিনাইদ-৩ (মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর) অরজিনাল বিএনপির সিট জানিয়ে মনির খান বলেন, এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত। কখনো ওইখানে বিএনপি পরাজিত হয়নি। ১৯৯১ সাল থেকে টানা বিএনপির দখলে ছিল। ৫ জানুয়ারি ছিল ভিন্ন প্রেক্ষাপট। আওয়ামী লীগে চতুর্মুখী কোন্দল। সাবেক এমপি চঞ্চল খান, বর্তমান এমপি নবী নেওয়াজ, মায়া চৌধুরী, সাজ্জাতুজ জুম্মা। এরা ৪ জন শক্তিশালী। কেউ কাউকে একবিন্দু ছাড় দিতে রাজি নন।

স্থানীয় বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপির সাবেক শহিদুল ইসলাম মাস্টার গত ৩ বছর আগে মারা গেছেন। তিনি বেঁচে থাকা অবস্থায় ১২ বছর যাবত সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছি দলের নির্দেশ মোতাবেক। বিএনপি একটি বড় দল। এখানে সবার আশা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা বিএনপির হারানো ঐতিহ্য তথা উন্নয়নের জোয়ার ধরে রাখার জন্য কাকে বেছে নেবে সেটা বড় বিষয় স্থানীয় বিএনপির। বিগত ১২ বছর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে এটুকু পরিষ্কার হয়েছি সাধারণ জনগণ কি চায়। মহেশপুর-কোটচাঁদপুরের মানুষ কখনো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেনি।

মনির আরো জানান, বিভিন্ন (সরকারের বিভিন্ন জরিপ সংস্থা ও বেসরকারি নির্বাচন জরিপ সংস্থাগুলোর) জরিপের মাধ্যমে সেটি স্পষ্ট হয়ে গেছে। শিল্পী হিসেবে সবার সঙ্গে দারুণ সখ্যতা ছিল। মাঠে এসেও সোনায় সোহাগা হয়েছে আমার জন্য। একজন শিল্পী মাঠে মানুষের মনের ভাষা বুঝে, সেভাবে চলছেন জনগণের ভালোবাসা নিয়ে।

দল থেকে মনোনয়ন না পেলে- এমন প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, কিছুদিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ নয়, দল যাকে নমিনেশন দেবে, মনোনয়ন প্রত্যাশী সবার উচিত হবে তার পক্ষে কাজ করে বিএনপির হারানো ঐতিহ্য রক্ষা করা। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আমি বিএনপির সর্বস্তরের নেতাদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসন্তোষ দূর করে বিএনপিকে এক ছাতার নিচে আনতে সক্ষম হয়েছি। মহেশপুর-কোটচাঁদপুর বিএনপির মধ্যে কোনো ধরনের কোন্দল বলে কিছু নেই।

বিএনপির সাংস্কৃতিক নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কতটুকু ভূমিকা রাখছেন- এমন প্রশ্নে এ শিল্পী বলেন, সাংস্কৃতিক শক্তি অনেক বড় শক্তি, বিশ্বের যতগুলো রাজনীতিক যুদ্ধ সফল হয়েছে তার সঙ্গে সাংস্কৃতিক যুদ্ধ যোগ হয়েছে। সে যুদ্ধ গতিশীল হয়ে যুদ্ধ দ্রুত সফল হয়েছে। তার বাস্তব ইতিহাস বাংলাদেশে ভাষা যুদ্ধ, স্বাধীনতা যুদ্ধ। বিএনপির সাংস্কৃতিক অঙ্গন অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে মনির বলেন, এখানে অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তির উপস্থিতি আছে। দীর্ঘদিন বিএনপি বিরোধী দল থাকার কারণে এবং দেশের রাজনীতির সুস্থ পরিবেশ না থাকায় বিএনপির সাংস্কৃতিক কর্মীরা পরিস্থিতির শিকার। তবুও তারা শান্তি চায়, রাজনীতির সুস্থ পরিবেশ চায়, সঠিক গণতন্ত্রের চর্চা চায়। সাংস্কৃতিক কর্মীরা যতদ্রুত সম্ভব রাজনীতির কাদা ছোড়াছুড়ির অবসান ঘটিয়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়।

একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে আগামী বাংলাদেশকে কিভাবে দেখছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিটি সাংস্কৃতিক কর্মীই সুস্থ পরিবেশ কামনা করে। একজন শিল্পী শ্রোতাদের ভালো-মন্দ সবদিক বিবোচনা করেই মানুষের জীবনেই ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে গানে গানে অভিনয়ে নৃত্যে, কলম, লিখনীতে প্রকাশ করার চেষ্টা করেন।

শিল্পীরা কখনো সংঘাত চায় না, কারণ একটি প্রতিভা কারো পক্ষে সৃষ্টি করা সম্ভব নয়, এটি জম্ম নেয়। মুক্তিযুদ্ধের বিনিময়ে এ স্বাধীন দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে চলবে। মুক্তকণ্ঠে কথা বলবে। অধিকার আদায়ে কথা বলবে। এক কথায় গণতন্ত্র সবার জন্য সমান থাকবে। এমনটিই চাওয়া সব সাংস্কৃতিক কর্মীদের। বাংলাদেশে আর কোন যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।

মানবকণ্ঠ/