করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কালীগঞ্জের আনন্দবাগ গ্রাম “লকডাউন”

প্রকাশিত: ২:০৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২০

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কালীগঞ্জের আনন্দবাগ গ্রাম “লকডাউন”

নয়ন খন্দকার, কালীগঞ্জ॥
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার আনন্দবাগ গ্রামে যাচ্ছিলেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার। যাবার পথে তার মোটরসাইকেল টি গতিরোধ করেন গ্রামের মোড়ে বসে থাকা কয়েক ব্যক্তি। তারা এমপি সাহেবের হাতে জীবানুনাশক স্প্রে ছিটিয়ে দেন এরপর তার হাতে পরিয়ে দেন হান্ডগ্লাভস। শুধু এমপি সাহেবই নয় আনন্দবাগ গ্রামে কেউ প্রবেশ করতে গেলে তাদের সবাইকে এভাবে জীবানুনাশক স্প্রে ছিটানো হচ্ছে। গত ২৮ মার্চ থেকে আনন্দবাগ গ্রামটি “লকডাউন” করে রেখেছেন ওইগ্রামবাসী। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গ্রামের তিনটি প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। প্রবেশ দ্বার বাঁশ, চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তার সামনের সাইনবোর্ডে লেখা হয়েছে করোনা ভাইরাস মহামারি প্রতিরোধে সাময়িকভাবে বাইরের লোক প্রবেশ নিষেধ।


একান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে বের হতে দেয়া হচ্ছেনা। তেমনিভাবে কেউ ওই গ্রামে প্রবেশও করতে পারছেন না। জরুরী প্রয়োজনে কেউ গ্রামে প্রবেশ করলে সাবান দিয়ে তাদের হাত-পা ভালভাবে ধুতে হচ্ছে এরপর তাদের শরীরের দেয়া হচ্ছে জীবানুনাশক স্প্রে। এছাড়া গ্রামে কেউ প্রবেশ করলেও তাদের শরীরে জীবানুনাশক স্প্রে ছিটানো হচ্ছে।
এজন্য আনন্দবাগ গ্রামবাসী স্বউদ্যোগী হয়ে নিজেরা গ্রামের তিনটি প্রবেশদ্বারে পাহারা দিচ্ছেন। প্রবেশদ্বারে রাখা দিয়েছেন বালতিতে পটাশ মিশ্রিত পানি, স্যাভলন মিশ্রিত পানি, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ইত্যাদি।

আনন্দবাগ গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদ জানান, গ্রামটি গত শনিবার থেকে “লকডাউন” করে দিয়েছেন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গ্রামের তিনটি প্রবেশদ্বার বন্ধ করে দিয়েছেন। জরুরী বা গুরুত্বপূর্ণ কারন ছাড়া কেউকে গ্রাম থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। তেমনিভাবে কাউকে গ্রামে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া গ্রামবাসী স্বউদ্যোগী হয়ে দিনমজুর ও অসহায় ব্যক্তিদের নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী দিচ্ছেন। রবিবার দুপুরে ২০ জন দিনমজুর ও গরীব দুস্থদের চাল ডাল, আলু, ঝাল পেয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে গ্রামের অন্যান্য দিনমজুর ও গরীব-দুস্থদের এসব খাদ্য সামগ্রী দেয়া হবে।

ওই গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা মোর্শেদ তোতা জানান, গ্রামটিতে ১৪০ টি পরিবারের দুই হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। তারা যাতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না হন তার জন্য গ্রামটি “লকডাউন” করা হয়েছে। একান্ত জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কাউকে প্রবেশ ও বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি আরো জানান, শুক্রবার গ্রামবাসী একত্রে বসে মিটিং করেন। শনিবার (২৮ মার্চ ) সকাল থেকে তারা গ্রামটি “লকডাউন” করে দেন। তারা পালক্রমে গ্রামটিকে নজরদারিতে রেখেছেন। গ্রামটি লকডাউন করতে যা যা করণীয় তাঁরা সবই করছেন। গতকাল (২৮ মার্চ) থেকে তাঁরা নিজেদের গ্রামটি সুরক্ষিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত গ্রামবাসী এ কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন বলে তিনি জানান।

আনন্দবাগ গ্রামের মুরব্বী তৌফিকুল ইসলাম টুকু ও শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, নিজেদের সুরক্ষিত করতে আমরা গ্রামটি “লকডাউন” করে রেখেছি। গ্রামবাসীর উদ্যোগে রোববার দুপুরে ২০ জন দিনমজুর ও গরীব অসহায় মানুষদের চাল, ডাল, ঝাল, পেয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী দেয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এসব খাদ্য সামগ্রী গ্রামের দিনমজুর ও গরীব অসহায় ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার এমপি বলেন, আনন্দবাগ গ্রামের সকল পরিবারের সদস্যরা মিলে নিজেদের সুরক্ষার জন্য গ্রামটি “লকডাউন” করেছে। এই গ্রামে কেউ বাইরে যেতে পারবে না। কোন আত্নীয়-স্বজন প্রবেশ করতে পারবে না। তারা সব মিলিয়ে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে। আমি মনে করি এভাবে যদি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ স্ব-স্ব উদ্যোগে লকডাউনের ব্যবস্থা নেয় তাহলে প্রশাসনের যে উপস্থিতি থাকার কথা সেটিও প্রয়োজন হবে না বলে আমি মনে করেন। তিনি গ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আনন্দবাগের মত অন্যান্য গ্রামবাসীও যেন এমন উদ্যোগ করে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা বলেন, করোনা প্রতিরোধের একমাত্র ওষুধ হচ্ছে সচেতনতা। সচেতনতা বৃদ্ধি না করা গেলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। আমি আনন্দবাগ গ্রামবাসীদের সাধুবাদ জানাই তারা নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের কার্যক্রমটি এক প্রকার প্রশাসনকেও সহযোগিতার করছে বলে আমি মনে করি। তবে গ্রামের রাস্তা-ঘাট বন্ধ করা যাবে না। সচেতনতার মাধ্যমে সবাইকে উগ্যোগী হয়ে কাজ করতে হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ