আমার দেখা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রজ্ঞা ও করণীয়

প্রকাশিত: ৩:২৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২০, ২০১৭

আমার দেখা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রজ্ঞা ও করণীয়

১৯৬৯ সাল, আমি তখন ৪র্থ ক্লাসে ঝিনাইদহ সরকারী উচ্চ বালক বিদ্যালয় এ পড়ি বয়স ৯/১০ বৎসর হবে । তখন সম্ভবতঃ সেপ্টেম্বর মাস আমার খাতনা (মোসলমানী) দেওয়া হয়েছে, ঝিনাইদহ শহরের কাঞ্চননগর বাসায় অবস্থান করছি এবং শুনলাম বঙ্গবন্ধু আসবে আমাদের বাসায় তাই চারিদিকে হইচই পড়ে গেছে, খাসি জবাহ করা হয়েছে, প্রচুর রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী সাথে আসবে । এর আগেও বঙ্গবন্ধুর আমাদের বাসাই যাতায়ত ছিল কারণ আমার পিতা মরহুম এ.বি.এম গোলাম মজিদ তখন ছিলেন একজন আইনজীবী এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনিতী করেন, ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ১৯৭০ এর নির্বাচনে প্রার্থী নমিনেশন পেয়েছেন ।

এখানে উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহকর্মী ৯০% ছিলেন আইনজীবী এমনকি ১৯৭০ এর গণপরিষদ সদস্য ৯০% ছিল আইনজীবী কারণ আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি সারা বাংলাদেশের আইনজীবী বার কাউনসিলে ব্যাপক ভাবে পদচারনা, সাংগঠনিক কর্মকান্ড করতে বা তাদেরকে রাজনিতীতে আগ্রহী করার সাংগঠনিক দক্ষ্যতা পরিলক্ষিত হয় । তারপর বঙ্গবন্ধু আমাদের বাসাই আসলেন সাথে প্রচুর নেতা ও কর্মী ছিল, বঙ্গবন্ধুর একটা জনসভার জন্য ঝিনইদহে আগমন ঘটে এবং আমার রুমে এসে খোজ খবর নিলেন, আমাকে উপহার স্বরূপ পাকিস্তানি রুপি ৫০০/- দিলেন এবং বললেন, “বাপেরও ভাই আবার ছেলেরও ভাই” কারণ আমার রুমে ঢুকার দরজার উপরে আমি একটি পোস্টার লিখেছিলাম “আমার ভাই ! তুমার ভাই ! মুজিব ভাই ! মুজিব ভাই !” তিনি পরিবর্তন করে বলেছিলেন “আমার চাচা, আমার চাচা মুজিব চাচা মুজিব চাচা,” ।

 

বঙ্গবন্ধুর এই উক্তির মধ্যে আমি বুঝেছিলান প্রকৃত আত্মীয়তার বন্ধনে রাজনীতি আওয়ামী পরিবারের পরিচয় পরে অবশ্য ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমি তখন ঝিনাইদহ কে.সি কলেজ এ পড়ি, তখন আমিসহ বেশকিছু জন ঝিনাইদহে প্রথম আন্দোলন শুরু বা বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার চেয়ে অসংখ্য পোস্টার, দেওয়াল লেখন করেছিলাম যেমন- লিখতাম “বঙ্গবন্ধুর হত্যার পরিণাম বাংলা হবে ভিয়েতনাম” পরিণামে আমাকে থানায় বা জেলে যেতে হয়েছিল । পরবর্তীতে শেখ হাসিনা যখন প্রথম ঝিনাইদহে রাজনৈতিক সফরে আসেন তখন সারাদিন রাত আমিসহ অনেকেই পাহারা দিয়ে রেখেছিলাম ।

 

যাই হোক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দীর্ঘকাল পর ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচন হলেও সেই নির্বাচন পাকিস্তান সামরিক চক্রের কারসাজিতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পর একটা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন এদেশের জনগনের নিকট দীর্ঘ প্রত্যাশিত ছিল৷ ১৯৭০ সালে এর নির্বাচন তাদের সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নে একটি সুযোগ এনে দেয়৷ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালী জনগোষ্ঠীকে ব্যাপকভাবে আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সুসংগঠিত করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণ করেন৷ শুধু তাই নয়, ৭০ এর নির্বাচনে তাঁর দল পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জয়লাভ করে৷

 

জেনারেল ইয়াহিয়া অজুহাত দেখান যে, আওয়ামী লীগের স্বায়ত্তশাসন দাবী ( ছয় দফা ) পাকিস্তানে সাংবিধানিক সংকটের সূচনা করবে৷ নির্বাচনের রায় অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা, এবং পরবর্তীতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালী জাতি স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করে৷ সুতরাং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন ও নির্বাচনী রায়কে কেন্দ্র করে যে নতুন পটভূমির জন্ম হয় তারই প্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীর পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ পায়৷ দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান একটি অস্থায়ী সংবিধান প্রণয়নের আদেশ জারি করেন। এ আদেশ বলে বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

তাই, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন ও বাংলাদেশের ‘অভ্যুদয়’ এ আমার পিতা মরহুম এ.বি.এম গোলাম মজিদ এ্যডভোকেট তখন ছিলেন একজন গণপরিষদ (সংসদ) সদস্য (এমসিএ) ঝিনাইদহ-হরিণাকুন্ডু (১৯৭০ইং) এরুপ ৯০% গণপরিষদ সদস্য সব এলাকার বিখ্যাতসব আইনজীবী ছিলেন, তাছাড়াও তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের একজন উল্লেখযোগ্য আইনজীবীও ছিলেন বা এখনও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আইনজীবীগণ অগ্রগণ্য অথবা সেই সব গণপরিষদ সদস্য এর ছেলে-মেয়েরা আজও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সুপ্রতিষ্ঠিত তাহলে এরুপ বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রজ্ঞা ছিল সঠিক এবং এ বীজয়ে আওয়ামী পরিবারের সহকর্মীদের যথাযথভাবে মূল্যায়ন করাই হবে আমাদের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা বা তাদের সৎ ও অক্লান্ত পরিশ্রম দ্বারা বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে, একটি স্বাধীন রাষ্টগঠন ও বাঙ্গালীর স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হয়েছে কথাটার মূল্যায়ন করার মানসিকতা সৃষ্টি করা ।

 

মূলতঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সূদুর প্রসাসী রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক প্রজ্ঞাই পরবর্তীতে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সহজেই সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে বা করবে । সকলকে ধন্যবাদ ।