আকাশ কন্যা পৃথুলা আমার

প্রকাশিত: ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০১৮

আকাশ কন্যা পৃথুলা আমার
Tahera Begum Jolly

 

আজ আমি একটু পিছনে ফিরে যাবো। এবং কথাও বলবো একটু বেশি। এটা মার্চ মাস। দেশ সমাজ স্বীকার না করুক, অগ্নিঝরা মার্চ আমার সমস্ত অধিকার স্বীকার করে। এ আমার অর্জন করা অধিকার।

৭১ সালে যারা আমাদের মেয়েদের গনিমতের মাল আখ্যা দিয়ে শকুনের মত খুবলে খেয়েছে, আজও তারা আছে বহাল তবিয়তে। উল্টো গলা ধাক্কা দিয়ে আমরা বের করে দিয়েছি স্বাধীন দেশের রক্তাক্ত কন্যাদের। আমি শুধু তৎকালীন সরকারের কথাই বলবো না। ফিরে তাকাবো নিরাপদ আশ্রয় পরিবারের দিকেও। বুকে হাত দিয়ে পরিবারগুলো আজ বলুক, আমরা ওঁদের যেতে দিতে চাইনি। সমাজ তো পরিবার নিয়েই। আবার রাষ্ট্রীয়ভাবেও সমাজকে উদ্বুদ্ধ করা হয়নি, এ কথা একবারের জন্যও কেউ বলেনি, স্বাধীনতার আগুনে ঝলসে যাওয়া জীবন ওঁদের, ওঁরা কেন দেশান্তরী হবে। বরং দলেবলে জোট বেধেই ওঁদের আমরা তাড়িয়ে ছেড়েছি। এখনও যেমন, ধর্ষিতাকেই মারা হয় ২০১টা দোররা। চরিত্রহীন সেই, যে দেহ বিক্রি করলো।

আর যে ঘরে বৌ বাচ্চা রেখে, চরিত্রহীনার দেহ নিয়ে দাঁতালের মতো পার করলো রাত, যথারীতি তিনি ধোয়া তুলসির পাতা! শুধু নিষিদ্ধ পল্লীই কেন, ঘরে-বাইরে, আনাচে-কানাচে যৌন কাতর অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলি, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে, স্বপ্ন হারানো মধ্য বয়সীরাই হেসে বেড়ায় দেঁতো হাসি। যাই হোক, কথা হচ্ছিল যৌন সন্ত্রাসীরা আমাদের সমাজে ধোপদুরস্ত ভদ্রলোক! আর যারা যৌন আক্রমণের শিকার, তারা চরিত্রহীন! আগে অন্যায়ভাবে কী হয়েছে সেখানে যাবনা। তবে স্বাধীন দেশে, যুদ্ধনারীদের ঐ দোররা খাওয়ার দলে ফেলে, আমাদের দেশে নারী লাঞ্ছনার যাত্রা শুরু এবং এটা দিনের আলোর মত সত্য। আজ অন লাইনে দেখলাম, কতিপয় মানুষ (!) দাবী তুলেছে মেয়েদের ফুটবল খেলা নিষিদ্ধ করতে হবে। কোন সন্দেহ নেই, এরাও খুঁজে বেড়ায় গনিমতের মাল। এবং নারী দেহকে ওরা যৌনসামগ্রী ছাড়া আর কিছুই ভাবে না

তারপরেও আমি যাব পৃথুলার কাছে। আহা,পায়ে পায়ে কত বিধিনিষেধ, সেই বাধা পেরিয়ে, একজন মেয়ে হয়ে উঠেছিলো আকাশচারী। ওঁর মাথা তুলে দাঁড়ানোর দৃপ্ত ভঙ্গীই বলে দেয়, ওঁ মানুষ হয়ে উঠেছিলো। মানুষ হওয়া অত সহজ নয় বাহে। যারা অন্য মানুষের সর্বনাশের কারণ হয়, নারী-পুরুষ যাই হোক, বড়জোর তারা দুপেয়ে জীব। কিন্তু বৈমানিক পৃথুলার ঐ দৃপ্ততার ভিতরে ছিলো নারী জাগরণেরর আহ্বান।

এখানেই যত গাত্রদাহ দুপেয়ে জীবদের। দুপেয়ে এই জীবেরা, আগুনে ঝলসে যাওয়া পৃথুলাকেও তাই দিচ্ছেনা নিস্তার। মানব বিধ্বংসী এক বিকৃত প্রতিহিংসা ওদের নিশ্বাসে নিশ্বাসে। ওরা যতই নারী মানুষের সৌর্যের কাছে হচ্ছে পরাস্ত, ততোই হয়ে উঠছে বেপরোয়া। যেন দিচ্ছে মরণ কামড়। সেই বিষাক্ত দংশন থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা, মানুষের জীবনের দায় নিয়ে হারিয়ে যাওয়া এক আকাশ-কন্যা পৃথুলাও