কালীগঞ্জ শহরসহ প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চল পর্যন্ত মরণ থাবা ইয়াবার ভয়াবহ বিস্তার

প্রকাশিত: ১:৫৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০১৮

সোহরাব হোসেন,ক্রাইম প্রতিবেদক ঝিনাইদহ:

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরসহ আশেপাশের উপজেলার প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ক্রেজি মেডিসিন ইয়াবার ভয়ঙ্কর বিস্তার ঘটেছে। এতে আসক্ত হচ্ছে উঠতি বয়সি স্কুল কলেজ পড়ুয়া তরুণ তরুণীরা। মাদক সিন্ডিকেটের ছড়িয়ে থাকা বিশাল শক্তিশালী জালের মাধ্যমে সহজে ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা।

মরণনেশা ইয়াবার সর্বনাশা থাবায় হাজার হাজার পরিবারের সন্তানের জীবন আজ বিপন্নের পথে। এমন সন্তানদের মায়ের কান্না এখন ঘরে ঘরে। অথচ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে প্রসার ঘটছে ইয়াবা ব্যবসার। সমাজের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিকরা এই ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা সূত্র ও তথ্য অনসন্ধানে জানা যায়, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী সিন্ডিকেট ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রন করছে। যে কারণে কোন ভাবেই ইয়াবার আগ্রাসন রোধ করা যাচ্ছে না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধ্বংস করে মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। জেলার সর্বত্রই এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ‘ক্রেইজি ড্রাগ’ ইয়াবা।

মোবাইল ফোনে অর্ডার দিলেই মুহুর্তেই হাতে চলে আসছে হরেক রঙের ইয়াবা ট্যাবলেট। ইয়াবা মিলছে জেলা সদর ঝিনাইদহ সহ প্রতিটি উপজেলার প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের টং ও মুদি দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় দোকান গুলোতে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্য ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগীতায় সুচারুভাবে চলছে এই ইয়াবার ব্যবসা।

জানা গেছে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী শুধু নয়, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশও এখন ইয়াবায় আশক্ত। সহজলভ্যতার কারণেই ইয়াবা আসক্তির সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে বলে মনে করছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর। ১৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারী-পুরুষ মাদক সেবন করছে। তবে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী মাদকসেবীর সংখ্যাই বেশি।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবদেহের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর নেশা দ্রব্যের মধ্যে ইয়াবা অন্যতম একটি। ইয়াবা অর্থ হলো ক্রেজি মেডিসিন বা পাগলা ঔষুধ। মেথ্যাম ফিটামিন, উত্তেজক পদার্থ ক্যাফিনের সঙ্গে হেরোইন মিশিয়ে তৈরি করা হয় ইয়াবা। এ নেশা দ্রব্য হেরোইনের চেয়ে ভয়াবহ। তাদের মতে, ইয়াবা সেবন করার পর সাধারণত নির্ঘুমতা, চাঞ্চল্যতা ও শরীরে উত্তেজনা দেখা দেয়। ক্রমান্বয়ে আসক্ত হওয়ার পর এটা মনব শরীরে নানা প্রকার ক্ষতি করে থাকে। মনে হতাশা, বিষাদ, ভয়, অনিশ্চয়তার উদ্ভব হতে পারে। এ ছাড়া এটি সেবনকারীকে আচরণগত ভাবে সহিংস করে তুলতে পারে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধীরা ক্রমশ সহিংস হয়ে উঠছে ইয়াবার প্রভাবেই।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ইয়াবার খুচরা ব্যবসায়ীরা মাঝে মধ্যে গ্রেফতার হয়। কিন্তু মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এতে করে ঠেকানো যাচ্ছে না ইয়াবা ব্যবসা। বানের পানির মতো ঢুকছে ইয়াবার চালান। আর যারা গ্রেফতার হচ্ছেন তাদের আটকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আইনের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে কোন এক অদৃশ্য শক্তিতে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসছে তারা । আবার ফিরছে ইয়াবা ব্যবসায়।

স্থানীয় সুনামধন্য একজন আইনজীবীর সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মাদক ব্যবসা ও ব্যবহারে জড়িত ব্যক্তিদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ধরে আদালতে পাঠানোর পর জামিনে মুক্তি পাচ্ছে। জামিন যোগ্য সব ধারা পরিবর্তন করে অজামিন যোগ্য করাটাই এখন শুধুমাত্র সময়ের দাবী। তানাহলে এ অপরাধ কমবে না। কমবে না মাদক ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্কও।