ঢাকা ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৩রা জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ২:৫৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২০
ড. খান মোঃ মনিরুজ্জামান
তামিলনাড়ুর এক জেলে পাড়ার মাইনর স্কুল,
উনআশি বছর আগে সেখানে ফুটেছিল ফুল।
বিদ্যালয় সেখানে সভ্যতারই ফুল ফুটানো হয়,
কিন্তু বর্ণ প্রথা সভ্যতার প্রকট অন্তরায় নিশ্চয়।
ব্রিটিশ ভারতে তখন হিন্দুদের মধ্যে জাতভেদ,
উচ্চ ও নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের মধ্যে তাই বিচ্ছেদ।
আর দরিদ্র মুসলমানদের সাথে সম্পর্ক নিষ্ঠুর,
বিদ্যেষে কদর্য সমাজ ছিল একেবারে ভরপুর।
স্কুলে ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলেমেয়েরা অগ্রনী,
নিম্ন বর্ণের হিন্দু ও দরিদ্র্য মুসলমানদের শনি।
ক্লাসের প্রথম, দ্বিতীয় বেঞ্চে বসত ব্রাক্ষণ যারা,
পেছনের বেঞ্চে নিম্নবর্ণের হিন্দু ও মুসলমানরা।
ব্রাক্ষণ ছাত্ররা পরতো একেবারে ধবধবে ধুতি,
গরীব মুসলমানেরা পরতো ময়লা কাপড় সুতি।
স্যার প্রশ্ন করলে এপিজে কালাম তুলতো হাত,
দ্রুত প্রশ্নের জবাব দিতো সে টপাটপ অত্রসাত।
এভাবে শিক্ষকগণের স্নেহার্থী হয়ে উঠে কালাম,
মাইনর স্কূলে আজও তাঁরে করে সকলে সালাম।
শিক্ষকদের সবাই ছিল উচ্চ বর্ণের হিন্দু ব্রাহ্মণ,
সমুন্নত নীতি আদর্শে তাঁরা শ্রদ্ধাভাজন সর্বক্ষণ।
বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম হলো কালাম,
বিফল সমাজে ফল ফলিয়ে কালাম সফলকাম।
শিক্ষক অনন্ত বাবু বলতো, তুমি মস্ত বড়ো হবে,
তোমার কারণে সবে জেলে পাড়ার সুনাম কবে।
শ্রীজ্ঞান অনন্তের বাসায় কালামের হল নিমন্ত্রণ,
ব্রাক্ষণ স্যারের নিমন্ত্রণে বেজায় খুশি তাঁর মন।
টিচার তাঁর ব্রাহ্মণী গিন্নীকে বলল, ‘ছাত্রের কথা,
সে দুপুরে মোদের বাসায় লাঞ্চ খাবে যথা যথা’।
শিক্ষকের স্ত্রী ছাত্রের নাম, জাত-ধর্ম জানতে চায়,
শ্রীজ্ঞান অনন্ত তাঁকে কালামের কুলশীল শুধায়।
নাম শ্রবণে ব্রাহ্মণী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন,
জেলে পাড়ার মুসলমানদের প্রতি তাঁর দৃষ্টি শ্যেন।
জেলে পাড়ার মুসলমান ছেলে মোদের ঘরে খাবে,
জাত পাতের ভেদাভেদ ঠিকই শিকেয় উঠে যাবে।
ভগবানের দোহাই লাগে নিমন্ত্রণ বাতিল কর ক্ষণে,
জেলে পাড়ার মুসলমান খাবে ও মানবো কেমনে?
অনন্ত বললেন, ‘আমি তো নিমন্ত্রণ দিয়ে ফেলেছি’।
শিক্ষক ছাত্রের কাছে ছোট হবে মোরা কি ভেবেছি?
শেষে ঢের ঝগড়া শেষে ব্রাহ্মনীর সাথে হলো রফা,
ছাত্রটি মোদের উঠানে বসে খাবে এ তার একদফা।
ভগবান ঠিকই ঐ শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা করেছেন,
ঐ ব্রাক্ষণী ভগবানের পথ বাদে অন্য পথ ধরেছেন।
পরের দিন এপিজে কালাম এলেন শিক্ষকের বাড়ি,
উঠানে বসেই তৃপ্তিভরে খেলেন কালাম তাড়াতাড়ি।
খাবারে তার ব্যবহার্য দ্রব্যাদী উঠলো না আর ঘরে,
ধর্মতলে মানবতা মার খেল সেদিন এ বিশ্ব চরাচরে।
জেলে মুসলমানের ব্রাক্ষণালয়ে বসার সুযোগ নাই,
ধরাধামে তো মানুষের তরে ধর্ম, ধর্মে মানুষের ঠাঁই।
বিদায়কালে কালাম শিক্ষকের পা ছুঁয়ে দোয়া চায়,
শিক্ষক মাথায় হাত রেখে তাকে আশির্বাদ ফর্মায়।
অনন্ত বাবু বললেন, ‘বাবা, একদিন তুমিই বড় হবে,
তোমার মেধালোকই ভারতবর্ষ আলোকিত করবে’।
পরদিন আর স্কূলে গেলেন না শ্রীজ্ঞান অনন্ত বাবু,
প্রধান শিক্ষক ভাবলেন হয়ত ব্যামো করেছে কাবু।
ঝড়বৃষ্টিতেও অনন্ত বাবুর স্কুল করাতে নাই কামাই,
মানসিক ব্যামো তাঁরে নীতি হতে টলাতে পারে নাই।
দুই দিন পরে অনন্ত বাবু স্কুলে এলেন বিষন্ন বদনে,
কে জানে কি তুফান বহিয়া চলেছে তাঁর হৃদয় মনে।
হেড স্যারের রুমে কিছুক্ষণ বসিয়া তাঁর চোখে জল,
সব যেন বিফলে গেল তাঁর শিক্ষকতার নীতি ফল।
কাগজে লিখা ইস্তফা পত্র দিলেন হেড স্যারের ঠাঁই,
অশ্রুসজল কন্ঠে বল্লেন তাঁর শিক্ষকতার ইচ্ছা নাই।
সমব্যাথী হেড স্যার হেতু কারণ জানতে চান পিছে,
কেন তাঁর সার্থক শিক্ষকতা আজ হয়ে যাবে মিছে।
সব শিক্ষকের উপস্থিতিতে তিনি বল্লেন বেদন ভরে,
ক্লাসে বলা নীতিকথার প্রয়োগ করতে পারিনি ঘরে।
শিক্ষক হয়ে বলেছি যে সবার উপরে মানুষের স্থান,
অথচ লাঞ্চে আমার ছাত্রের স্থান ঘর বাদে উঠান।
সবার উপরে মানব ধর্ম ক্লাসে বলেছি আপন মনে,
এই কথা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি আমার জীবনে।
তাই ক্লাসে দাঁড়িয়ে আমার নীতিকথা বলা না সাজে,
আজ আর কোন মিল নাই আমার নীতিকথা কাজে।
আমি অন্য পেশায় যাব যেখানে মিথ্যে আশ্রয় পাবে,
কষ্ট রবেনা আর কেউ যখন মোর উঠানে বসে খাবে।
এভাবে সব শিক্ষক ছাত্রদের অনুরোধ উপেক্ষা করে,
কেঁদে ও কাঁদিয়ে শিক্ষা পেশা ছেড়ে গেলেন চিরতরে।
বিফলে যায়নি ঐ প্রিয় শিক্ষক অনন্ত বাবুর দোয়া,
আলোকিত হয়েছে ভারত পেয়ে কালামের ছোয়া।
মাদুরে বসে খাওয়া কালামের সনে গুরুর রাজটিকা,
তাঁর ভালবাসায় জ্বালিয়েছে সর্বভারতীয় দ্বীপ শিখা।
অনন্ত বাবুরা চাকুরী ছেড়ে আজ ভারতের ইতিহাস,
ভারতবাসির হৃদয়ে কালাম ও অনন্ত বাবুদের বাস।
রচনাকালঃ ১২/০৯/২০২০ খ্রি.
সময়কালঃ ১০.০০ পিএম।
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com