হত্যা-ধর্ষণ এবং আমরা

প্রকাশিত: ৪:৫৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৭

হত্যা-ধর্ষণ এবং আমরা

Tahera Begum Jolly

হত্যা-ধর্ষণ এবং অন্যায়ের সাগরে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে আছি আমরা। বলার অপেক্ষা রাখেনা, আমাদের দেশ এবং সমাজে অন্যায়ের ঘোড়া এখন লাগামহীন। অন্যায় বা অপরাধ যে কত প্রকার হতে পারে, তা আমাদের দেশে এলেই তার হিসাব মিলানো যাবে। কী হচ্ছে না এখানে? যৌননালয় থেকে যৌন পীড়িতদের উচ্ছেদ করা থেকে শুরু করে তিন বছরের শিশুকে যৌন সামগ্রী বানিয়ে হত্যা। রুপার মৃত্যুতে, যৌন নির্যাতনের শেষ সংকরন শুধু আমরাই দেখলাম না। গোটা বিশ্বকে দেখালাম। নির্যাতনে কত ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারি আমরা।

এটা নতুন করে বলার কিছু নয় যে, এ দেশে অপরাধীরা কতটা স্বাধীন! ওরা যা খুশি তাই করে। যেন এ দেশটা অপরাধীদের অভয়ারণ্য। যেনই বা বলি কেন! আক্ষরিক অর্থেই তাই। বিচারহীনতার চূড়ান্ত সীমায় আমরা আজ বাস করছি। বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে আমরা ক্রমেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। এখন আমরা এমনই একটা সমাজে বাস করছি, যেখানে অপরাধীরা নিজেদের ভীষণভাবে নিরাপদ মনে করে। আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরা আজ চলাফেরা করছে হাতের মুঠোই জীবন এবং সভ্রম নিয়ে।

সব থেকে অদ্ভুত হয়ে উঠেছি আমরা। অন্যায় দেখছি, পড়ছি এবং যথারীতি যে যার গণ্ডিতে ঘুরছি। ভয়াবহ এটাই, অন্যায় যতটা না ভয়াবহ, তার থেকেও বড় সর্বনাশ যখন সেই অন্যায় আমাদের গা সওয়া হয়ে যায়। আমরা তো জানি, কে এবং কারা আমাদের কন্যাদের জীবন অসহনীয় করে তুলেছে। তারপরেও সেইদিকে তীরটা কেন ছুড়তে পারছিনা। এটা কিছুতেই শক্তির সংকট নয়। হয় আমরা নিজেরাও সেই অন্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছি। নয়তো আমাদের বিবেক বুদ্ধি লোপ পেতে বসেছে। একটা সমাজ রসাতলে যাওয়ার জন্য এর যেকোনো একটা থাকলেই চলে।

কিন্তু আমার সঙ্গে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করবেন না, আমরা এই দুটোর দ্বারাই আক্রান্ত। নইলে রুপার যে পরিণতি হোলো, তারপরে আমাদের কোন আনন্দতেই ঘাটতি পড়লো না কেন? রুপা কেন আমাদের সকলের কন্যা হয়ে উঠতে পারলো না? রুপা কেন শুধু এক নিভৃত পল্লীর, কোন এক দুঃখিনী মায়ের একার রাতের ঘুম কেড়ে নিলো?

তবে রোগে আক্রান্ত হওয়া নিশ্চয় কোন দোষের নয়। এবং আমরা সেই দেশের সেই সমাজের মানুষ,অন্ধকার যাদের বারবার চারিদিক দিয়ে ছেয়ে ফেলেছে, কিন্তু সকল অন্ধকার ভেদ করে আমরা আবার উঠে দাঁড়িয়েছি সূর্যের আলোতে। নিশ্চয় এবারও এই ঘোর সংকট আমরা কাটিয়ে উঠবো। এবং ক্রমেই হয়ে উঠবো সকল রুপা-পুজাদের আশা-ভরসার শক্তি