ঢাকা ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:২১ অপরাহ্ণ, মে ১, ২০১৮
মহান মে দিবস….
হায়,
কেউ কি জানে যে, বাংলাদেশের শ্রমজীবী সাংবাদিকদের দৈনিক কর্মঘণ্টা কত?
কেও কি জানার চেষ্টা করে,
কেও চেষ্টা করে কিনা জানতে ইচ্ছে করে?
গত শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে আমি যখন সাংবাদিকতা পেশায় পাকাপাকিভাবে যুক্ত হই, তখনও দেখেছি সাংবাদিকদের জীবনে খানিকটা হলেও ‘জীবন’ ছিল, অবসর ছিল, অবসরযাপনও ছিল। তখন ঢাকার সাংবাদিকরা বিকেলটা প্রেস ক্লাবে কাটিয়ে, কিংবা দিনভর ছোটাছুটির ক্লান্তি কাটাতে কোথাও একটুখানি বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যার পরে, কিংবা তারও পরে, রাত ৮টারও পরে অফিসে পৌঁছাতেন।
তখন সংবাদপত্রের রাতের পালা শুরু হতো রাত ৮টায়, শেষ হতো রাত ২টা কিংবা আরো পরে।
এই পালাক্রমে একটা অসুবিধার দিক ছিল রাত্রি জাগরণ। কিন্তু সুবিধা ছিল- এতে নিউজ ডেস্কের মানুষগুলো অন্তত দিনটা, বিকেলটা এবং সন্ধ্যার পরের সময়টাও নিজের মতো কাটাতে পারতেন। রিপোর্টারদের সুবিধা ছিল তারা দিনভর খাটাখাটনি করে যে খবরটা সংগ্রহ করলেন, তা লিখতে বসার আগে একটু ভেবে নিতে এবং মনে-মনে সাজিয়ে নেওয়ার সময় পেতেন। নিউজ ডেস্কের হাতেও থাকতো বেশ-কিছুটা সময়। তারাও হাতে পাওয়া রিপোর্টটি পড়ার এবং তা নিয়ে ভাবার কিছুটা হলেও সময় পেতেন। এতে উপকৃত হতো রিপোর্টিং ও ডেস্ক দু’পক্ষই অর্থাৎ সত্যিকার অর্থে পুরো পত্রিকা।
এ সবই হ্যান্ড কম্পোজের ঢিলেঢালা সময়ের কথা। এর পর এলো নতুন-নতুন প্রযুক্তি। টেলিফোনের বদলে ফ্যাক্স এবং সবশেষে ইন্টারনেট। হ্যান্ড কম্পোজের বদলে প্রথমে এলো ব্যয়বহুল ফটো কম্পোজ। অল্প দিনের মাথায় তাকে সরিয়ে দিয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো ব্যয়সাশ্রয়ী কম্পিউটার। নব নব প্রযুক্তির কল্যাণে সব কিছু দ্রুততর হলো। আগে যে কাজ হতে সময় লাগতো এক ঘণ্টা, এখন তাতে লাগছে বড় জোর পাঁচ-সাত মিনিট।
এই গতি অর্জনে তো অনেক সময় সাশ্রয় হওয়ারই কথা। সংবাদকর্মীদের ব্যস্ত জীবনে আরো কিছু সময় যোগ হওয়ারই কথা। হয়েছে কী? না, হয়নি। কারণ, গতির হাত ধরে এসেছে প্রতিযোগিতা। সংবাদমাধ্যম এখনও, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, পরস্পরের সহযোগী নয়, প্রতিযোগী।
প্রতিযোগিতা কি খারাপ কিছু? না, প্রতিযোগিতা খারাপ নয়, খারাপ হলো অসুস্থ ও অপরিকল্পিত প্রতিযোগিতা। মুদ্রিত সংবাদমাধ্যম নতুন নতুন প্রযুক্তি হাতে পেয়ে প্রথমে মেতে উঠলো সার্কুলেশন ওয়র অর্থাৎ প্রচারযুদ্ধে। প্রচারসংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা বা যুদ্ধে কোনো অন্যায় বা অস্বাভাবিকতা নেই। তবে এটাও ভাবতে হবে, শুধু সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা বাড়লো, বিজ্ঞাপন বাড়লো, আয় বাড়লো, কিন্তু এর ভেতরের মানুষগুলোর কী হলো।
আমাদের সংবাদমাধ্যম এই ভাবনাটা ভাবেনি। তারা প্রতিযোগিতায় নেমেছে, কিন্তু সংবাদকর্মীদের কথা মাথায় রাখেনি। ফলে সাংবাদিকদের জীবন থেকে ‘জীবন’ উধাও হয়ে গেছে। এক সময় তাদের রাত কর্মব্যস্ততায় কাটলেও দিনের কিছু অংশ নিজেদের ছিল। বিকেল ছিল, ছিল সন্ধ্যাও। তখন রাত ২টায় কাজ শেষ হলেও নিউজ ডেস্কের মানুষগুলো অফিসে ঢুকতেন রাত ৮টায়। এখনও তারা রাত ২টায়ই কাজ শেষ করেন, কিন্তু আগের মতো রাত ৮টায় অফিসে ঢুকতে পারেন না, ঢুকতে হয় বেলা ৩টা বা সর্বোচ্চ ৪টায়। ফলে তাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে দিন, বিকেল ও সন্ধ্যা।
দৈনিক কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা নির্ধারণের দাবিতে আজ হতে শতবর্ষ আগে আমেরিকায় আন্দোলন করেছিলেন শ্রমিকরা, দিয়েছিলেন প্রাণ। তার বিনিময়ে হৃদয়হীন পুঁজিতন্ত্র শ্রমিকদের কর্মঘণ্টার অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছিল। সারা বিশ্বে ১ মে এলে মানুষ এখনো সেদিনের সেই বীরদের কথা পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। সংবাদপত্রে লেখালেখি হয়। মে দিবসের শোভাযাত্রা সভা সেমিনারের খবর ও ছবি ছাপা হয়। হায়, কেউ কি জানে যে, বাংলাদেশের শ্রমজীবী সাংবাদিকদের দৈনিক কর্মঘণ্টা কত?
(লেখক-হুমায়ুন সাদেক চৌধুরী)
সংগ্রহ
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com