ধানের ব্লাস্ট প্রতিরোধে অবহেলা নয়

প্রকাশিত: ১০:৪৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০১৮

ধানের ব্লাস্ট প্রতিরোধে অবহেলা নয়
ইত্তেফাক
গত বত্সর অকাল বন্যায় ও বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের কারণে হাওরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বোরো আবাদ ঘরে তুলিতে পারেন নাই কৃষক। এইবার সারের সরবরাহ, নিরবচ্ছিন্ন সেচ, সময়মতো বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বোরোর বাম্পার ফলন হইয়াছে। স্বাভাবিকভাবে ইহাতে কৃষকদের খুশি হইবার কথা। কিন্তু কয়েকটি জেলায় তাহাদের মুখের হাসি ম্লান করিয়া দিয়াছে ব্লাস্ট রোগ। ইত্তেফাকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এইসকল জেলায় এই রোগে ক্ষেতের আধাপাকা ধান চিটা হইয়া গিয়াছে। বিশেষত সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, চুয়াডাঙ্গা ও শেরপুর জেলায় এই সংকট কিছুটা প্রকট বলিয়া জানা যায়। আমরা আশা করি, তৃণমূলের কৃষি কর্মকর্তা ও কর্মীদের প্রচেষ্টায় এই রোগের উপদ্রব শীঘ্রই নিয়ন্ত্রণে আসিয়া যাইবে।
কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে, এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে ব্লাস্ট রোগের বিস্তার ঘটে। পাতা ব্লাস্ট, গিট ব্লাস্ট ও শীষ ব্লাস্ট—এই তিন ধরনের ব্লাস্ট রোগের মধ্যে নেক বা শীষ ব্লাস্ট সবচাইতে বেশি ক্ষতিকর। সাধারণত দিনে অধিক তাপমাত্রা, রাতে নিম্ন তাপমাত্রা, আগাম বৃষ্টিপাত, ঝড়ো আবহাওয়া, সকালের কুয়াশা ও শিশির, মৃদু বাতাস, ইউরিয়া সারের অধিক ব্যবহার, পটাশ সার কম দেওয়াসহ অধিক আর্দ্রতার কারণে ঐ ছত্রাকের প্রকোপ বাড়ে। আশঙ্কার বিষয় হইল, এই রোগ বাতাসে দ্রুত ছড়াইয়া পড়ে এবং ইহার কারণে আক্রান্ত জমিতে শতভাগ পর্যন্ত ফলন বিপর্যয় হইতে পারে। গত বত্সর এই রোগটি মার্চ মাসের শুরুর দিকে দেখা যায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলায়। পরে তাহা যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ আশেপাশের জেলাগুলিতে ছড়াইয়া পড়ে। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে ইহা দেশের মধ্যাঞ্চল— বিশেষত গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে দেখা দেয়। মধ্য এপ্রিলে তাহা উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সংক্রমিত হয়। তাই এইবারের এই রোগের বিস্তার নিয়াও উদ্বিগ্ন হইবার যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে।
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। তাই ধানে যে কোনো রোগ-বালাই সকলের মনে শঙ্কা তৈরি করে। ফসলকে সব ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত রোগ-বালাইয়ের হাত হইতে রক্ষার জন্য কৃষকদের প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য। প্রতিকার হিসাবে টুপার, নিটাভো ও ফিলিয়া নামক কীটনাশক ঔষধ পানিতে মিশাইয়া স্প্রে করিবার কথা বলা হয়। আর ভবিষ্যতে রোগটি প্রতিরোধে ধান কাটার পর নাড়া-খড়কুটা জমিতেই পোড়াইয়া ফেলা, আক্রান্ত জমি হইতে বীজ সংগ্রহ না করা, শোধিত বীজ ব্যবহার করা, অতিরিক্ত পরিমাণে ইউরিয়া সার ব্যবহার না করা, কয়েক কিস্তিতে ইউরিয়া সার দেওয়া, পটাশ সার যথাযথ মাত্রায় ব্যবহার করা, প্রয়োজনে দুই কিস্তিতে পটাশ সার দেওয়া এবং জমিতে সবসময় পানি ধরিয়া রাখিবার পরামর্শ দেন কৃষিবিদরা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফসলের রোগ-বালাই সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তাহাছাড়া টেকসই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে অন্যান্য অনেক দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ফসলের রোগ-বালাই সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া অপরিহার্য। তাহাছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতি মোকাবিলায় শস্যবীমা চালু এবং ব্লাস্ট-প্রতিরোধী ধানের জাত উদ্ভাবন একান্ত জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।