দয়া কলা ও পান্তা ভাত দিয়ে গরীবানা কায়দায় পহেলা বৈশাখ পালন

প্রকাশিত: ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০১৮

দয়া কলা ও পান্তা ভাত দিয়ে গরীবানা কায়দায় পহেলা বৈশাখ পালন

ড. খান মোঃ মনিরুজ্জামান

আশির দশকের গোড়ার কথা। নাপিত বাড়ির মাঠে বৈশাখী মেলা বসত। মেলার কথা মনে পড়ে ঘুম হত না। মেলাকে ঘিরে কল্পনায় কতনা আঁলপনা আঁকতাম। ভোরে ঘুম থেকে উঠা উত্তর মমতাময়ী মা জননী আমাদের পান্তা ভাত আর সাথে একটা করে বড় দয়া কলা দিতেন।তবে মাঝে মধ্যে সকালবেলা দয়া কলা দিয়ে তো পান্তা খেতামই। অনেকটা রুটিন নাস্তা বলা যেতে পারে। অবশ্য পান্তা দিয়ে ইলিশ খেতে হয় সেটা তো জানতামই না। জানলেই বা কি? তখন চারদিকে অভাব ছিল। অধিকাংশ মানুষের পক্ষে ইলিশ কেনা সম্ভব ছিলনা। বয়স বেশ কম হলেও এটা বুঝতাম। আমাদের পক্ষেও তখন কেনা সম্ভব ছিলনা। আজ মনে ভাবি আমার অতি সরলামতি মাতা দয়া কলা ও পান্তা ভাত দিয়ে গরীবানা কায়দায় পহেলা বৈশাখ পালনের ব্যাবস্থা করতেন।

মেলাকে ঘিরে একটা আমেজ কাজ করত। আমার প্রাণাধিক প্রিয় আব্বা চালের রুটি সাথে গরুর মাংস খুবই পছন্দ করতেন। পহেলা বৈশাখে মা রাত্রে সেটা তৈরি করার চেষ্টা করতেন। সব সময় গরুর মাংস কেনা সম্ভব হত না। তাই মাকে দেখেছি অনেক সময় গরুর মা্ংসের বদলে হালুয়া রুটি রান্না করতে। যাই রান্না হোকনা কেন আমরা সবাই মিলে তৃপ্তিভরে খেতাম। টিকেরডাঙ্গা মাঠে সারা রাত কবি গান হত। রাতে গান শুনতে যেতাম।আমার মনে আছে ঐ সময় এক কবিয়ালের কন্ঠে গভীর রাত্রে শুনেছি,

‘তারে কি আর পাবরে যারে হারাইয়াছি জীবনে।’

সেসময় এমনি করেই পহেলা বৈশাখ আমরা উদযাপন করতাম। উপরোন্ত বলা যেতে পারে যে, এমনি করেই গ্রাম বাংলায় নববর্ষ উদযাপন করা হত।

আজ জীবনের অনেকটা পথ পাড়ি দিলাম। অনেক নববর্ষ পার করলাম। কাছের ও দুরের অনেককেই হারালাম। সেদিনের সাধ বাসনা আর আজকের সাধ বাসনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। কবির ভাষায়,

‘বাল্যকালে বালক দলে,
শিশুকালে মায়ের কোলে।
যৌবনকালে কামিনী দলে
সময় বেশী নাইরে।………………………….।’

যাককে ওসব। আজকের পহেলা বৈশাখ সাড়ম্বরে কিছুটা ভিন্ন মাত্রায় উদযাপিত হলেও আনন্দ আমেজের কমতি কোন কালেই ছিলনা। কেননা পহেলা বৈশাখ তো বাঙ্গালী সত্ত্বায় সহজাত।