নানা ‘প্রটেকশন’ দিয়ে ৫৭ ধারা থাকছে!

প্রকাশিত: ১১:৫৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩, ২০১৭

নানা ‘প্রটেকশন’ দিয়ে ৫৭ ধারা থাকছে!

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণীত হলে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের সমালোচিত ৫৭ ধারা বাতিল হয়ে যাবে বলে শোনা গেলেও পরিস্থিতি বদলাবে না। যতদিন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট না আসছে,ততদিন পর্যন্ত কিছু ‘প্রটেকশন’ দিয়ে সমালোচিত ৫৭ ধারার বিতর্ক ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা হতে পারে বলে মন্তব্য করছেন কেউ কেউ। যদিও আইনজীবীরা বলছেন, কোনোভাবেই ৫৭ ধারাটি থাকা ঠিক হবে না। কারণ এর অপব্যবহারের উদাহরণ ইতোমধ্যে দেখা গেছে।

তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করার আগে পুলিশ সদর দফতরের আইন শাখার পরামর্শ নেওয়ার বিষয়ে বুধবার (২ আগস্ট)  নির্দেশনা জারির পর আইনজীবী ও আইনবিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারাটি বহাল রাখার জন্যই এধরনের ‘প্রটেকশন’ নেওয়া হচ্ছে। এতে মামলা হয়তো কিছুটা কমবে, কিন্তু হয়রানির সুযোগ রয়েই যাবে। তবে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘যেকোনও ধরনের মন্তব্য করার জন্য এখনও সময় আসেনি।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার বড় কমতির জায়গা হলো- এখানে শব্দের ব্যাখ্যা দেওয়া নাই।আমার অনুভূতি কিসে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে বিষয়ে কোনও সাধারণ ধারণা নাই। ফলে যেকোনও ক্ষেত্রেই সুযোগসন্ধানীরা অপপ্রয়োগের সুযোগ পেয়েছে। এই আইনটি কালো আইনের তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে মানুষের মনে। সেক্ষেত্রে সরকার চাইবে ভিন্নভাবে এটিকে রিপ্লেস করতে। যতদিন সেটি পারছে না, ততদিন এই বিতর্ক বন্ধ করতে তাদের কিছু কৌশল অবলম্বন করতেই হবে। এরই অংশ হিসেবে পুলিশের সতর্ক করে দেওয়ার নির্দেশনাটি এসেছে বলে আমার মনে হয়।’

আইসিটি অ্যাক্টের বেশকিছু মামলা তদারকির অভিজ্ঞতা থেকে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই ধারা বাতিল করার যে কথা বলা হচ্ছে, তা আসলে এক ধরনের উপহাস মাত্র। এই ধারার বিভিন্ন বিষয় যদি নতুন আইনে প্রতিস্থাপন করা হয় তাহলে এই ধারা বাতিলের বাগাড়ম্বর বাতুলতা মাত্র। নতুন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে যদি একই বিষয় থাকে, তাহলে নিপীড়নের ধরন পাল্টাবে। কিন্তু আইনের নামে নিপীড়ন বন্ধ হবে না।’

তিনি আরও বলেন,‘এই ধারা যে কেবল নাগরিকদের মত প্রকাশের অধিকার হরণ করছে তা-ই নয়,এর ফলে ব্যক্তির মুক্ত জীবন যাপন করার মতো মৌলিক অধিকারও খর্ব হচ্ছে। যেহেতু সরকার নতুন আইন দিয়ে এই ধারা প্রায় হুবহু ও কিছুটা কঠিনভাবে পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেহেতু অবশ্যই ততদিন এই আইনকে প্রটেকশন দেবে। এধরনের নিপীড়নমূলক আইন কিভাবে হয়, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তোলা জরুরি।’

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের খসড়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন ব্যারিস্টার তানজিব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘এই আইনটিতে অনেকগুলো ঘাটতির জায়গা ছিল এবং অপব্যবহার আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি। পরবর্তীতে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করার কথা উঠলো। ৫৭ ধারার সমালোচনা করা হয়েছিল কিন্তু সেটি বাদ না দিয়ে আবারও নতুন করে এটি রাখা হয়েছে।এটি যে একেবারেই বাক স্বাধীনতাবিরোধী সেটি বারবার বলতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট না আসা পর্যন্ত মামলা করতে ‘অনুমতি নেওয়া লাগবে’, ‘সতর্ক থাকতে হবে’ ধরনের কথাগুলো ব্যবহার করে বিতর্ক থামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সুত্র ঃ ট্রিবিউন

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ