রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে জঙ্গল পীরের মাজার

প্রকাশিত: ১০:০৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০১৮

রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে জঙ্গল পীরের মাজার

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি : কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক পীর জঙ্গী শাহের মাজারটি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ ধ্বংসের পথে। এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি দরগার বিভিন্ন ধরনের মূল্যবান গাছ বিক্রি করে দিয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের ভেতর ৪ একর ৭০ শতক জমির ওপর অবস্থিত জঙ্গী পীরের দরগা। যা আজ জঙ্গল পীরের দরগা নামে পরিচিত। জঙ্গল পীরের দরগাটি ছিল উপজেলাবাসীর মুখে মুখে। এলাকাবাসী শ্রদ্ধা ভরে জঙ্গী পীরকে আজো স্মরণ করে। তার নামে দরগায় মানত করে। এমন এক সময় ছিল তখন প্রতিদিন সকালে বিকেলে মানতের সিন্নি আসত। কিন্তু দরগাটি আগের মতো আর নেই।

দরগার প্রায় ৫ একর জমি নিয়ে গাছপালায় পরিবেষ্টিত ছিল। সূর্যের আলো মাটি পর্যন্ত স্পর্শ করত না। বর্তমানে দরগার অনেক জমি প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে। গাছপালা কেটে সাবাড় করেছে। আজ জঙ্গী পীরের দরগার অস্তিত্ব বিলীন হতে চলেছে। এলাকায় জনশ্রæতি রয়েছে, এক সময় এ অঞ্চলে কলেরা বসন্ত মহামারী আকার ধারণ করে। এতে পার্শ্ববর্তী গ্রামে অনেক মানুষ মারা যায়। এ বিপদের সময় আড়পাড়া গ্রামবাসী এই দরগায় মানত করে কলেরা বসন্তের হাত থেকে রক্ষা পায়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বছরের অগ্রহায়ণ মাসের শেষ রবিবার গ্রামবাসী সমবেত হয়ে দরগায় সিন্নি দিয়ে আসছে।

স্থানীয়রা আরো জানান, অগ্রহায়ণ মাসে শেষ রবিবার ও বৃহস্পতিবার আড়পাড়া গ্রামের বিল থেকে রাতে বাঘ উঠে আসত। এ বাঘ দেখার জন্য গ্রামবাসী আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকত। বাঘটি জনসাধারণের পাশ দিয়ে এসে দরগার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট রয়না গাছের তলায় বসত। সেই রয়না গাছের গোড়াই লোকজন মানত করে সিন্নি রেখে আসত। এখন সেই রয়না গাছ না থাকলেও মানুষ মানত করে ওই স্থানে সিন্নি রেখে আসে। জঙ্গল পীরের দরগাটি রক্ষা করতে ও দরগার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এলাকায় সচেতন ব্যক্তিরা কেউ এগিয়ে আসেনি। বরং যে যখন সুযোগ পেয়েছে সে তখন দরগার জমি দখলসহ দরগার গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছে।

বর্তমানে দরগাটির নাম শুধু কাগজ কলমে ও ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি জঙ্গল পীরের দরগার কোনো সীমানা প্রাচীর না থাকায় এবং সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় এই দরগায় নানাভাবে অত্যাচার হচ্ছে। ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী এ দরগাটি সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অতি প্রয়োজন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ