ভোটের হাওয়া : ঝিনাইদহ-৩ আওয়ামী লীগে দ্বিধাবিভক্তি বিএনপিতে জামায়াত সংকট

প্রকাশিত: ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৮

ভোটের হাওয়া : ঝিনাইদহ-৩ আওয়ামী লীগে দ্বিধাবিভক্তি বিএনপিতে জামায়াত সংকট

মাহমুদ হাসান টিপু, ঝিনাইদহ

আওয়ামী লীগে দ্বিধাবিভক্তি বিএনপিতে জামায়াত সংকট

ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পুরনো প্রার্থীদের পাশাপাশি নতুন অনেকেও নেমেছেন মনোনয়ন প্রতিযোগিতায়। কেউ কাউকে চাইছেন না ছাড় দিতে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বিএনপিতেও রয়েছে সক্রিয় পরস্পরবিরোধী দুটি গ্রুপ। দুদলের বিভক্তিই পেয়েছে প্রকাশ্য রূপ। তবে নির্বাচনী জোট হলে এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যেই সীমিত থাকবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা।

দলের দ্বন্দ্বের পাশাপাশি বিএনপির আরেকটি সমস্যা হলো, এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান শক্ত। গত উপজেলা নির্বাচনে মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও চারদলীয় জোট বা বিএনপিকে ছাড় দেয়নি জামায়াত। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সফিকুল আজম খান চঞ্চল বিজয়ী হন। জামায়াতে ইসলামীর মতিয়ার রহমান জয়ী হতে না পারলেও ভোটে এগিয়ে ছিলেন বিএনপি প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মাস্টারের চেয়ে। এ কারণে জয়ের জন্য আগামী নির্বাচনে বিএনপির ভরসা জামায়াত।

এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তেমন ভালো নেই। এখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বর্তমান এমপি নবী নেওয়াজ, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সফিকুল আজম খান চঞ্চল ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি পারভীন তালুকদার মায়া। তাদের ঘিরে নেতাকর্মীরাও তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন আলাদাভাবে। এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আরও রয়েছেন- শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও দলের উপজেলা সভাপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের নেতা ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী, যুবলীগের কেন্দ্রীয় উপ-ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এমএম জামান মিল্লাত, জেলা কৃষক লীগের সহসভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক রেজাউল করিম টিটন।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিকবিষয়ক সহ-সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান, কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সহসম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, মহেশপুর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোমিনুর রহমান মমিন, সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসান রনি, মহেশপুর উপজেলা সহসভাপতি ও জেলা কমিটির উপদেষ্টা লতিফুর রহমান চৌধুরী ওরফে বাবলু।

বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের নবী নেওয়াজ ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রচার কার্যক্রমে। তার দাবি, এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তার সময়ে। সেই সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রমেও গতি এসেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে নিয়োগের বেলায় তিনি স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছেন। অথচ প্রতিপক্ষরা অকারণেই মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচারের মাধ্যমে তার জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও তিনি কখনোই কারও বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা কিংবা হামলা করেননি। আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি।

মহেশপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট সফিকুল আজম খান চঞ্চল জানান, তিনি এর আগে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন। পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি এমপি পদে নির্বাচনের জন্য নিয়মিত জনসংযোগও করছেন তিনি। তার দাবি, দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি আবারও নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে পারবেন।

পারভীন তালুকদার মায়া বলেন, দলের মনোনয়নের জন্য তিনি জনসংযোগ করছেন। মানুষের সেবা করছেন। বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য এলাকায় ফ্যাক্টরি করেছেন। তার দাবি, প্রায় ১৪-১৫ হাজার নেতাকর্মী গত ৪ ডিসেম্বর মহেশপুরে এক গণসমাবেশে উপস্থিত হয়ে প্রমাণ করেছেন- তারা আগামী নির্বাচনে তাকেই নৌকার মাঝি হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন।

ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী বলেন, তিনি নিজ উদ্যোগে এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হলে তিনি এলাকার উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছ থেকে ন্যায্য হিস্যা আদায় করবেন।

এমএম জামান মিল্লাতের বিশ্বাস, বর্তমান এমপি নবী নেওয়াজ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন বলেই আগামী নির্বাচনে এই আসনে দলীয় মনোনয়নে পরিবর্তন আসবে। একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ জানান, তিনি জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কোটচাঁদপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন। রেজাউল করিম টিটন জানান, আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বেলায় তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হবে বলেই তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিজেকে স্বচ্ছ ইমেজের প্রার্থী মনে করছেন তিনি।

এই আসনের সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম মাস্টারের মৃত্যুর পর বিএনপির নেতৃত্ব গতিহীন হয়ে পড়ে। সাংগঠনিক অবস্থাও নাজুক। এ অবস্থায় দল গোছানোর দায়িত্ব নেন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান।

শিল্পী মনির খান বলেন, মনোনয়ন নয়- গৃহদাহ মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তিনি কাজ করছেন। তিনি জানান, আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের মনোনয়ন নিয়ে চমকের কথা শোনা যাচ্ছে। আর তিনিই হবেন সেই চমক। মনোনয়ন পেয়ে তিনি আসনটি পুনরুদ্ধার করবেন।

ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল বলেন, একজন তরুণ নেতা হিসেবে তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। জনগণের সঙ্গে রয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে আগামী নির্বাচনে জয়ের আশাবাদও ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রকৌশলী মোমিনুর রহমান মমিন বলেন, সরকারি নির্যাতনের পরও তার নেতৃত্বে দলের সব কর্মসূচি পালন করা অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা দেওয়া হয়েছে। একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে তিনি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

মেহেদী হাসান রনি জানান, তার বাবা শহিদুল ইসলাম মাস্টার এই আসনের সাবেক এমপি। তিনি তার বাবার আদর্শ ও তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতেই দলীয় মনোনয়নের আশায় গোটা নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

বিএনপির মহেশপুর উপজেলা সহসভাপতি লতিফুর রহমান চৌধুরী ওরফে বাবলু বলেন, একজন বর্ষীয়ান নেতা হিসেবে তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলে নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে জয় নিশ্চিত করতে পারবেন।

জাতীয় পার্টির আবদুর রহমানও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা গেছে।

সুত্র ঃ সমকাল

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ