একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোট যুদ্ধের আগেই নবীন প্রবীণে মনোনয়ন যুদ্ধ ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও ঝিনাইদহ সদরের একাংশ)

প্রকাশিত: ৭:৪৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০১৮

তারেক মাহমুদ কালীগঞ্জ  –

 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো বাকি প্রায় এক বছর। ঝিনাইদহ-৪ আসনের (কালীগঞ্জ ও ঝিনাইদহ সদরের আংশিক) মনোনয়নের প্রত্যাশায় বড় দুদল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তরম্নণ ও প্রবীণ নেতারা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। আগামী নির্বাচনে বড় দুদলের হাইকমান্ড থেকে তরম্নণদের প্রাধান্য দেয়ার ইঙ্গিত পেয়ে প্রবীণদের পাশাপাশি মাঠে নেমেছেন তরম্নণরা। তারা দলীয় মনোনয়ন পেতে সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি নানা ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে গণসংযোগ করছেন। প্রচারের ক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রধান হাতিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উঠে আসছে সেই সব খবর। ফলে বিভিন্ন অফিস-আদালত আর
গ্রাম, পাড়া-মহলস্ন্রা ও শহরের চায়ের দোকানগুলো জমে উঠছে নির্বাচন প্রসঙ্গে। তবে আদৌ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কিনা এমন প্রশ্নও অনেকের। এছাড়া বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি অংশ নেবে কিনা এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভোট এবং ভোটারবিহীন হওয়ায় আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের আগ্রহ একটু বেশি লক্ষ করা গেছে। তাই নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে শুরম্ন হয়েছে অনেকটা উৎসবের আমেজ।
ঝিনাইদহ-৪ আসনটি কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা এবং সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৪২ জন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির শহীদুজ্জামান বেল্টু এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান ও সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ারম্নল আজীম আনার সাংসদ হন।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনোয়ারম্নল আজীম আনার ১ লাখ ৩ হাজার ৪৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির মোস্ত্মফা আলমগীর পান মাত্র ৫ হাজার ৩৯৮ ভোট। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। ফলে বিএনপির দুর্গ খ্যাত ঝিনাইদহের অন্যান্য আসনের মতো নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিও হারাতে হয়। তবে দলের অভ্যন্ত্মরে কোন্দল থাকলেও দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের আশা আসনটি এবার পুনরম্নদ্ধার হবে। যে কারণে দল থেকে অনেকে আলাদা আলাদা মনোনয়ন চাইলেও ধানের শীষে তারা এক।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের টানা ৯ বছরের শাসনামলে দলের অভ্যন্ত্মরে কোন্দল চরমে পৌঁছেছে। নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর পর দুজন সাংসদ এই দল থেকে এ আসনে নির্বাচিত হন। সে সময় তারা কেন্দ্র ঘোষিত দলের কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করতে থাকেন। এতদিন দুভাগে কর্মসূচি পালন করলেও গেল বছরের ১৫ আগস্ট এবং চলতি বছরের ১০ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন পালন করেছে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে। ফলে দলের অভ্যন্ত্মরীণ কোন্দল আরও প্রকট আকার হয়। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারম্নল আজীম আনারের দাবি বড় দলে ছোটখাটো বিভেদ থাকবে এটা এমন কিছু নয়।
আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শহীদুজ্জামান বেল্টু, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, বিশিষ্ট সমাজসেবক, ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা একেএম হারম্নন অর রশিদ মোলস্না ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ।
অপরদিকে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে গণসংযোগ করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারম্নল আজীম আনার, সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান। এছাড়া আওয়ামী লীগের নবীন প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন চাইবেন কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মোস্ত্মাফিজুর রহমান বিজু এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মতিয়ার রহমান মতি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শহীদুজ্জামান বেল্টু। শহিদুজ্জামান বেল্টু ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনসহ ৪ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনী এলাকায় রয়েছে তার নেতৃত্বে শক্ত সাংগঠনিক কার্যক্রম। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি তিনবার সরকারি দলের এবং একবার বিরোধী দলের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তার বিরম্নদ্ধে উলেস্নখযোগ্য কোনো দুর্নীতির অভিযোগ উঠেনি। ফলে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে বেশ এগিয়ে রয়েছেন দলের এই প্রবীণ প্রার্থী।
সাবেক এমপি শহিদুজ্জামান বেল্টু তার নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের উন্নয়ন তার হাতে হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে প্রতিনিয়ত কেন্দ্রীয় ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। আশা করছেন আগামী নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি থেকে তাকেই দল মনোনয়ন দেবে। তাকে মনোনয়ন দিলে হারানো আসনটি উদ্ধার করতে চেষ্টা করবেন তিনি।
জেলা বিএনপির সদস্য আলাউদ্দীন আলা জানান, বিগত সময়ে ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে চারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ শহিদুজ্জমান বেল্টু ছাড়া অন্য কাউকে দলীয় মনোনয়ন দিলে এ আসনটি এবার হারাতে হতে পারে। কারণ হিসেবে তিনি জানান, সাবেক এই সাংসদ এখনো সক্রিয়ভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই তিনি তার নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত্ম অঞ্চলে ভোটারদের সঙ্গে গণসংযোগ করে থাকেন। এছাড়া বেল্টু ছাড়া এ আসনে এখনো কোনো বিকল্প কোনো নেতৃত্ব তৈরি হয়নি।
দলের আরেক নবীন শক্ত প্রার্থী কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ এবারই প্রথম ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে দলের মনোনয়ন চাইবেন। ইতোমধ্যে দলে হাইকমান্ডের সঙ্গে জোর তদবির করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে নির্বাচনী এলাকার গ্রামগঞ্জে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে দেখা করে দলের প্রতীক ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করছেন। ৪০ বছরের এই জীবনে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। দলের এই দুর্দিনে সীমান্ত্মবর্তী জেলা ঝিনাইদহের রাজনীতির শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে তাকেই দল থেকে মনোনয়ন দেবে বলে তিনি আশা করেন।
সাইফুল ইসলাম ফিরোজ জানান, তিনি দলের গ্রম্নপিং বোঝেন না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যাকে মনোনয়ন দেবে তার সঙ্গে দেশের উন্নয়নে কাজ করবেন। দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে তিনি নির্বাচন করবেন এবং নির্বাচিত হলে তিনি এলাকার মানুষদের সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন।
দলের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী বিশিষ্ট সমাজসেবক, ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা একেএম হারম্নন অর রশিদ মোলস্না। যিনি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি অঙ্গনে নিয়মিত পৃষ্ঠপোষকতার কারণে উপজেলার মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এছাড়া তিনি এলাকার মানুষের মধ্যে দানবীর বলেও পরিচিত। তরম্নণ এই নেতা এবার বিএনপিদলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন। হারম্নন অর রশিদ মোলস্নার দাবি, দলের মধ্যে অন্য নেতাদের কেন্দ্র করে কিছু লবিং-গ্রম্নপিং থাকলেও তাকে মনোনয়ন দিলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। ফলে সবাই এক সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এছাড়া দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবেন বলেও জানান এই নেতা।
দলের অন্য প্রার্থী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ। গত ৯ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে হামলা-মামলা উপেক্ষা করে সংগঠন করেছেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। আওয়ামী লীগের দমন-পীড়নে যখন সবাই রাজপথ ছেড়ে চলে গেছেন তখন নবীন এই নেতা নিজে কালীগঞ্জে উপস্থিত থেকে কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিটি কর্মসূচি পালন করে চরম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দল থেকে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। যদি না দেয় তাহলে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার সঙ্গে দলের জন্য কাজ করবেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারম্নল আজীম আনার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনোয়ারম্নল আজীম আনার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যর কারণে এলাকার ভোটারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় একজন নেতা। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার এলাকায় কখনো তাকে পুলিশি প্রটোকল ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। তিনি নিজেই মোটরসাইকেল চালিয়ে দিন অথবা রাত যখন প্রয়োজন তখনই নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত্ম অঞ্চলের যে কোনো গ্রামে পৌঁছে যান। এছাড়া তিনি কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত্ম নির্বাচনী এলাকার প্রত্যন্ত্ম অঞ্চলের গ্রামের পর গ্রাম চষে বেড়ান। একই দিনে ১০ জন মৃত ব্যক্তির জানাজায় অংশগ্রহণ করারও রেকর্ড রয়েছে তার। সম্প্রতি কালীগঞ্জে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের নিজে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে যশোর হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে আলোচনায় আসেন।
সাংসদ আনোয়ারম্নল আজীম আনার জানান, তার সময়ে সব থেকে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। গত চার বছরে রাস্ত্মা, কালভার্ট, ব্রিজ, বিদু্যৎ, স্কুল-কলেজের একাডেমিক ভবন, স্টেডিয়াম, স্কুল সরকারিকরণ ও মুক্তিযোদ্ধা কমপেস্নক্সসহ ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। যা ইতোপূর্বে কোনো সরকারের সময়ে হয়নি। আসন্ন নির্বাচনে দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে জনগণ আবারও তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে বলে তার বিশ্বাস।
আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে গণসংযোগ করছেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান সংসদ সদস্য থাকাকালীন তার নির্বাচনী রাস্ত্মাঘাট, ব্রিজ, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দিরসহ নির্বাচনী এলাকায় যে উন্নয়নকাজ হয়েছে তা চোখেপড়ার মতো। তারপরও তার বিরম্নদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে ভোটারদের সামনে আসে নিজ দলীয় সমালোচকরা। সমালোচকদের অভিযোগ তার সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কয়েকশ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের বাদ রেখে কতিপয় দালালনির্ভর হয়ে উঠেন এই সাবেক সাংসদ।
এবারই প্রথম আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন আরেক তরম্নণ নেতা সাবেক পৌর মেয়র মোস্ত্মাফিজুর রহমান বিজু। ইতোমধ্যে তিনি প্রথম শ্রেণির কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার হাতে কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে তিনি আত্মবিশ্বাসী দল তাকে মনোনয়ন দিলে দারম্নণ সফলতা দেখাতে পারবেন। তরম্নণ এই নেতা ২০০৪ সালে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালীন সন্ত্রাসীদের হামলায় পঙ্গু হন। এরপর উন্নত চিকিৎসার পর আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। এরপর ২০১১ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন হয়।
মোস্ত্মাফিজুর রহমান বিজু জানান, কালীগঞ্জ পৌরবাসী ভালোবেসে তাকে পৌরসভার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তিনি তাদের আশা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আশাতীত উন্নয়ন করেছেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে তিনি নির্বাচনে জয়ী হয়ে কালীগঞ্জবাসীর উন্নয়নে চেষ্টা করবেন।
তবে সাধারণ ভোটার ও নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের শাসনামলের ৯ বছরে দলের অভ্যন্ত্মরে কোন্দল চরমে পৌঁছায়। নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান। এরপর ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল থেকে আনোয়ারম্নল আজীম আনারকে মনোনয়ন দিলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময় তারা একে-অপরের প্রতিপক্ষ হয়ে কেন্দ্র ঘোষিত দলের কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। এতদিন দুভাগে কর্মসূচি পালন করেছে। সম্প্রতি দলের কর্মসূচি পালন করেছে তিনভাবে বিভক্ত হয়ে। ফলে দলের অভ্যন্ত্মরীণ কোন্দল আর বিভক্তি আরও প্রকট হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি কালীগঞ্জ পৌর অডিটরিয়ামে উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে বর্ধিত সভায় দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনন্দ মোহন (৫০) নিহত হন। একইভাবে গত ৯ বছরে কমপক্ষে ১০ জন নেতাকর্মী দলীয় কোন্দলে নির্মমভাবে খুনের শিকার হন। এসব খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকর্মীদের নামে করা মামলা নিয়ে দলের ভেতরে ভেতরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। এছাড়া বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারম্নল আজীম আনারকে হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় দলের ৪ প্রবীণ নেতার নাম অন্ত্মর্ভুক্ত হওয়ায় দলীয় অসন্ত্মোষ বেড়ে যায়। ফলে এমন কোন্দল নিয়ে যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে দলের একটি অংশ নৌকা প্রতীক বাদ দিয়ে অন্য কোনো প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য হবে। সব মিলিয়ে ভোটের আগেই যদি দলটির নেতারা বিভেদ ভুলে একত্রিত হতে না পারে তাহলে এ আসনটি এবার হারাতে হবে। অন্যদিকে বিএনপির অভ্যন্ত্মরীণ কোন্দল থাকলেও দলীয় প্রতীক ধানের শীষ যাকে দেবে সবাই তার সঙ্গে কাজ করবেন বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ