চলমান বৈধ হবার প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে আগামীকাল, কঠোরতা সত্ত্বেও থামছেনা মানব পাচার

প্রকাশিত: ৯:৪৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৭

চলমান বৈধ হবার প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে আগামীকাল, কঠোরতা সত্ত্বেও থামছেনা মানব পাচার

মাহবুব হাসান,
কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া

অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশী শ্রমিকদের রি-হায়ারিং কর্মসূচির( মাই-ইজি,বুকিত মেগা ও ইমান) মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর।নির্ধারিত ডেটলাইনের মধ্যেই বাংলাদেশিসহ অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মরত বিদেশিদের বৈধতার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় ৩১ ডিসেম্বরের পরপরই শুরু হবে বড় ধরনের সাঁড়াশি অভিযান। রি-হিয়্যারিং কর্মসূচির আওতার বাইরে থেকে যাওয়া কোনো অভিবাসী কর্মী ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলে তার ১০ হাজার রিংগিত জরিমানাসহ এক বছর জেল হতে পারে।

মূলত যারা উড়োজাহাজে করে দেশটির ইমিগ্রেশন পার হয়ে মালয়েশিয়ায় গিয়ে পরে অবৈধ হয়েছেন, ৬ মাস অতিবাহিত হয়েছে এবং অবৈধ ভাবে বসবাসরত এ কর্মসূচির আওতায় কেবল তারাই বৈধ হতে পারবেন।

অপর দিকে যারা সমুদ্রপথে কিংবা অবৈধপথে দেশটিতে প্রবেশ করেছেন এ সুযোগের মধ্যে তাদের রাখা হয়নি। তাদের জন্য চালু ছিল ই-কার্ড (এনফোর্সমেন্ট কার্ড) প্রোগ্রাম। ই-কার্ড কর্মসূচির মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। ই-কার্ড কর্মসূচিতে নিবন্ধিত হলেও দীর্ঘমেয়াদে বৈধতা পেতে প্রত্যেককে অবশ্যই রি-হায়ারিং কর্মসূচিতেও নিবন্ধন করতে হবে এ সময়ের মধ্যে। এ দুই কর্মসূচি সম্পর্কে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অবহিত করতে প্রক্রিয়ার শুরু থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশন সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করে আসছিল।

সর্বশেষ তথ্যমতে, চলমান রি-হায়ারিংয়ের আওতায় প্রায় সাড়ে ৫ লাখ অবৈধ বাংলাদেশি নিবন্ধিত হয়েছেন। এর মধ্যে এক লাখ ৬৫ হাজার কর্মী ভিসা পেয়েছেন।

ই-কার্ড কর্মসূচির আওতায় এসেছেন প্রায় এক লাখ ২০ হাজার। যার মেয়াদ রয়েছে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত।

অন্যদিকে হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে,নাম ও বয়স জটিলতার কারণে কমপক্ষে ৫৫ হাজার কর্মী ভিসা পাননি। তারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন এবং এ সব কর্মী জটিলতা নিরসনের সুযোগ পাবেন নাকি দেশে ফিরতে হবে এখনো নিশ্চিত নয়। তবে নিবন্ধিত প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার শ্রমিকের ভিসাসহ বৈধতার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিবন্ধন শেষ হওয়ার পর পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে তাদের ভিসাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ দিয়েছে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।

এদিকে কঠোরতা সত্ত্বেও মালয়েশিয়ায় থামছে না অবৈধভাবে পাড়ি জমানোর সংখ্যা। অতি সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ নাইটস’ নামক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আড়ালে মানব পাচারের অভিযোগে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা অনন্য মামুনকে গ্রেপ্তারের পর থেকে দেশটির সবকটি বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশন বিভাগ কড়া নজরদারি আরোপ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে মানবপাচার রোধে মালয়েশিয়া সরকারের পদক্ষেপগুলোতে নজর রাখছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

এ ছাড়া মানব পাচারের সাথে সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতারে মাঠে রয়েছে দেশটির গোয়েন্দা পুলিশ। এমন পরিস্থিতিতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকদের। এ ঘঠনার সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দাবি করেছেন প্রবাসীরা।

রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ দেশটির কোনো-না-কোনো এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই পুলিশি অভিযানে কাগজপত্রবিহীন বাংলাদেশীসহ বিদেশীরা ধরা পড়ছে। পরে গ্রেফতারকৃতদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ শ বাংলাদেশি বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক রয়েছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আটকৃতরা টিকিটের টাকা ও হাইকমিশন থেকে আউট পাস সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হলে তাদের সেখান থেকে পাঠানো হচ্ছে সেন্ট্রাল জেলে।

এমতাবস্তায় দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।

মাহবুব হাসান
কুয়ালালামপুর,মালয়েশিয়া
+৬০১৬৬১৩৯৫৭৫

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ