ঢাকা ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০১৮
নয়ন খন্দকার
হাসপাতালের বেডে অসুস্থ্য ছোট বোন আঁখিকে(২) অভিভাবক হিসেবে দেখভাল করছে বড় বোন আলো(৯)। মা বাজারে কাজে গিয়েছে। দশ দোকানে পানি দিয়ে আরো দুই বাসায় কাজ করবে, তারপর হাসপাতালে আসবে। মা আসার পূর্ব পর্যন্ত আঁখির দায়িত্বে আছে সে। বড় বোন বলে কথা। বয়স যাইহোক দায়িত্ব অনেক বড়, বুঝেছে এক বছর আগেই, বাবা মারা যাবার পরেই।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে পেটে ব্যাথা করছিলো আঁখির। শুক্রবার সকালে মা নাজমা খাতুন (৩০) আঁখিকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সাথে আলোও আসে। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক অরুন কুমার আঁখিকে ভর্তি করে নেন। শুক্রবার বিকেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক শম্পা মোদকের সাথে কথা হলে তিনি জানান বর্তমানে আঁখির অবস্থা ভালো। তিনি আশা করছেন আঁখি দ্রুতই সুস্থ্য হয়ে যাবে।
আলো জানায়, এক বছর পূর্বে তার বাবা আলম শেখ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার পর মা সংসারের হাল ধরেন। বাসায় বাসায় কাজ করেন। আর বাজারে দশটি দোকানে তিন বেলা পানি সরবরাহ করেন। এতে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তাদের মা-মেয়ের সংসার।
আলো জানায় সে ও তার বোন আরিফা(৮)দুই জনেই উপজেলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তারা যখন স্কুলে থাকে, তখন মা ছোট বোন আঁখিকে দেখাশুনা করে। স্কুল ছুটি হলে তারা দুইজন আঁখিকে দেখভাল করে। মা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করে। মায়ের জন্য খুব কষ্ট হয়। পড়াশুনা করে একদিন ডাক্তার হবে। বাবার মতো তাদেরকে অসুখে মরতে দিবে না। ছলছল ছোখে কথাগুলো বলছিলো আলো।
আলোর মা নাজমা কাজ শেষে হাসপাতালে আসলে কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের পশু হাসপাতাল পাড়ায় মাসিক ৩৫০টাকা চুক্তিতে এক খন্ড জমি ভাড়া নিয়ে কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরী একটি খুপরি ঘরে তিন মেয়ে আলো, আরিফা ও আঁখিকে নিয়ে থাকেন তিনি। তিনি আরো জানান, প্রায় ১৪ বছর আগে কুস্টিয়ার রাহিনী পাড়ার আলম শেখের সাথে বিয়ে হয় তার। স্বামী পুরাতন কাগজ কেনা বেচার ব্যবসা করতেন। হঠাৎ কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর (২০১৭) রমজান মাসে মারা যান তিনি। সংসারের ভার তার পরে বর্তায়।
প্রথমে উপজেলায় কয়েকজনের রান্নার কাজ নেন। কিন্তু সেখান থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চলছিলো না। পরে ওই কাজ ছেড়ে দুইটি বাসায় কাজ নেন ও কয়েকটি দোকানে পানি সরবরাহের কাজ নেন। এতে মাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় হয়। এই স্বল্প আয়েই কোন রকম চলে যায়। মেয়ে দুটো পড়তে চায়। তাই তাদের স্কুলে পাঠাই। কিন্তু কতো দিন তাদের পড়াতে পারবো তা কে জানে-দীর্ঘাশ্বাস ছেড়ে বলে বিধাবা নাজমা খাতুন।
নাজমার বাবার বাড়ি সদর উপজেলার গান্না গ্রামে। বাবা-মা দুই জনই জীবিত আছেন। তারাও দিন আনে দিন খায়। একটু থেমে নাজমা বলেন সমাজের বিত্তবানেরা এগিয়ে আসলে হয়তো মেয়েদের পড়া লেখা করাতে পারতাম।
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com