আওয়ামী লীগে কোন্দল বিপর্যস্ত্ম বিএনপি

প্রকাশিত: ৩:০৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০১৮

আওয়ামী লীগে কোন্দল বিপর্যস্ত্ম বিএনপি

শেখ সেলিম, ঝিনাইদহ ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকু-ু উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-২ আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে গণসংযোগ করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার দেখা যাচ্ছে অনেক এলাকায়। এসব পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে নিজেদের এবং নেতাদের ছবি দিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকু-ু উপজেলার ২টি পৌরসভা, ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে এ আসন গঠিত। এ আসনে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৩৯ জন ভোটার। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার ১৯৬ জন ও পুরম্নষ ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৪৩ জন।

নির্বাচনের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ১ লাখ ৬২ হাজার ৪৬৪ ভোটের মধ্যে বিএনপির প্রার্থী মসিউর রহমান পান ৭৬ হাজার ১ ভোট। তার নিটকতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের মতিয়ার রহমান পান ৩৭ হাজার ১৬৬ ভোট। আর এ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর আবুল কাশেম পান ৩৩ হাজার ৯৭৫ ভোট। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির মসিউর রহমান পান ৮৩ হাজার ৯৬৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নুর-ই আলম সিদ্দিকী পান ৬৯ হাজার ৩৫৩ ভোট, জায়ামাতের নূর মোহাম্মাদ পান ৪১ হাজার ২৪৭ ভোট। ২০০১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নূর-ই আলম সিদ্দিকী পান ১ লাখ ১৭ হাজার ৭০৬ ভোট এবং বিএনপির মসিউর রহমান পান ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৫১ ভোট। এ আসনে বিএনপির মসিউর রহমান নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সফিকুল ইসলাম অপু নৌকা প্রতীকে পান ১ লাখ ৬১ হাজার ৬২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী বিএনপির মসিউর রহমান পান ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৩৬ ভোট। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সফিকুল ইসলাম অপু পান ৫১ হাজার ২৪৪ ভোট। আর স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি পান ৬৭ হাজার ৯৮৪ ভোট। তাহজীব আলম সিদ্দিকী এ আসন থেকে নির্বাচিত হন। পরে তাহজীব সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাহজীব ছাড়াও আরও অন্ত্মত তিনজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সফিকুল ইসলাম অপু, সাধারণ সম্পাদক ঝিনাইদহ পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু ও সহ-সভাপতি শিল্পপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল।
সফিকুল ইসলাম অপু এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মজিদের ছেলে। পরপর দুইবার দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে। প্রথমবার নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন এবং পরের বার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তার সমর্থকরা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দল আমাকে দুইবার মনোনয়ন দিয়েছে। নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে চারবারের নির্বাচিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মসিউর রহমানকে পরাজিত করেছি। গতবার দলীয় কিছু নেতাকর্মীর কারণে আমার পরাজয় হয়েছে। ওই সমস্যা এবার আর থাকবে না বলে আমি আশা করছি। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব।’
আরেক মনোনয়নপ্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। দক্ষ সংগঠক হিসেবে দলের এ তরম্নণ নেতা ছাত্রলীগের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরম্ন করে দলের জেলা পর্যায়ের গুরম্নত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১১ সালে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে পৌর এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছেন। সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, ‘একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করতে চাই। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব। তবে নেত্রীর সিদ্ধান্ত্মই আমার সিদ্ধান্ত্ম, দলীয় মনোনয়ন যে পাবে, তাকেই সমর্থন দেব এবং তার পক্ষেই আমি কাজ করব।’
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা বঙ্গবন্ধুর চার খলিফাখ্যাত এক খলিফা সাবেক সংসদ সদস্য নূর-ই আলম সিদ্দিকীর ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি। দশম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে লড়াই করে জয়ী হন তিনি। এ ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতার পাশাপাশি পিতার ইমেজ তাকে এগিয়ে নেয়। সমসাময়িক বিষয়ে সংসদে তিনি সব সময় সরব। তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় দলের তৃণমূল নেতাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী শিল্পপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল। তিনি ঝিনাইদহের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, ভাষাসৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার ছেলে। জাহেদী ফাউন্ডেশন নামের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার অসহায় গরিব দুস্থ মানুষকে সহায়তা করে আসছেন। ক্রীড়াঙ্গনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেও রয়েছে তার যথেষ্ট অবদান।
আলাপকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা জানান, এখানে আওয়ামী লীগের শত্রম্ন আওয়ামী লীগ। অতীতে বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা গেছে মনোনয়ন বঞ্চিতরা এক জোট হয়ে দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরম্নদ্ধে অবস্থান নেন। ঘরের শত্রম্ন বিভীষণ হওয়ায় সাধারণ কর্মীরা বিপাকে পড়েন।
এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনজন হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মসিউর রহমান, জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হরিণাকু-ু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ মজিদ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাবলু।
এ আসনে বরাবরই বিএনপির অবস্থান যথেষ্ট শক্ত। দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অন্ত্মর্দ্বন্দ্ব নির্বাচনকে সামনে রেখে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। নেতারা মামলার চাপে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান একক প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আসছেন। অন্যদিকে বিএনপি থেকে চারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান দলের টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি না সেটা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের করা একটি মামলায় গত বছর ২৫ অক্টোবর আদালত মসিউর রহমানকে ১০ বছরের কারাদ- ও অর্থদ- দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ওই মামলায় জামিনে আছেন। এ অবস্থায় মসিউর রহমান নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না এ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এবার মসিউর রহমানের সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাবলু। তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী এমএ মজিদ। তিনি জেলা ছাত্রদল ও জেলা যুবদলের গুরম্নত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। হরিণাকু-ুর চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মজিদ বর্তমান হরিণাকু-ু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এই নেতা জানান, নির্বাচনের আগেই সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে মসিউর রহমান নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে তারা আশাবাদী। যদি কোনো কারণে মসিউর রহমান নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন তাহলে তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন।
আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মীর রবিউল ইসলাম লাবলু জানান, বর্তমান সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ নেতাকর্মীরা। দলকে সংগঠিত করার জন্য মাঠে ময়দানে কাজ করে যাচ্ছেন। নেত্রী যদি তাকে মনোনয়ন দেন তাহলে তিনি নির্বাচন করবেন।
জাতীয় পার্টির (এরশাদ) তেমন কোনো প্রার্থী ভোটের মাঠে নেই। এ আসনে জামায়াতের শক্ত অবস্থান থাকলেও পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে তাদের নেতাকর্মী সমর্থকরা নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ