আসন্ন একদশ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-২ আসনের হালচাল

প্রকাশিত: ৫:৪১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০১৮

আসন্ন একদশ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-২ আসনের হালচাল

মানবজমিন

ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝিনাইদহ-২ আসন। একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে এ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটি ২০০৮ সালের নির্বাচনে  আওয়ামী লীগের দখলে যায়। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সফিকুল ইসলাম অপু পরাজিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজিব আলম সিদ্দিকী সমির কাছে। পরে তাহজিব সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাহজিব ছাড়াও আরো তিনজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে লবিং করছেন।অন্যদিকে বিএনপি থেকে চারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান দলের টিকিট পাওয়ার ব্যাপারে  আশাবাদ ব্যক্ত করলেও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কি না সেটা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৩টি ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসন।দশম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা বঙ্গবন্ধুর চার খলিফাখ্যাত এক খলিফা সাবেক সংসদ সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সফিকুল ইসলাম অপুকে হারিয়ে বিজয়ী হন। দলের প্রার্থী সফিকুল ইসলাম অপু ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মসিউর রহমানকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল  পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী জয়লাভ করেন। এই আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন ৪ জন। তাঁরা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সফিকুল ইসলাম অপু, সাধারণ সম্পাদক ঝিনাইদহ পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, সহসভাপতি শিল্পপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। সফিকুল ইসলাম অপু এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মজিদের ছেলে। পরপর দুই বার দল তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। প্রথমবার নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন এবং পরের বার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে তাঁর সমর্থকরা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দল আমাকে দুই বার মনোনয়ন দিয়েছে। নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে চারবারের নির্বাচিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মসিউর রহমানকে পরাজিত করেছি। গতবার দলীয় কিছু নেতা-কর্মীর কারণে আমার পরাজয় হয়েছে। ওই সমস্যা এবার আর থাকবে না বলে আমি আশা করছি।’ নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব।

আরেক মনোনয়ন প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। দলের এ তরুণ নেতা ছাত্রলীগের তৃণমূল পর্যায় থেকে দলের জেলা পর্যায়ের গুরুত্ব্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১১ সালে পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়ে পৌর এলাকার সমস্যা শক্তহাতে সমাধান করে চলেছেন। অন্যান্য পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাকি থাকলেও এই পৌরসভার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বাকি নাই। সাইদুল করিম মিন্টু বলেন,একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করতে চাই। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করব। তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত, দলীয় মনোনয়ন যে পাবে, তাঁকেই সমর্থন দেবো এবং তাঁর পক্ষেই আমি কাজ করব।’ এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি। দশম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়াই করে জয়ী হন তিনি। এ ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতার পাশাপাশি পিতার ইমেজ তাকে এগিয়ে নেয়। এমপি হওয়ার পর এলাকার উন্নয়নে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। এলাকায় তিনি সজ্জন ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত। এছাড়া সমসাময়িক বিষয়ে সংসদে তিনি সব সময় সরব। তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় দলের তৃণমূল নেতাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং করে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী। তিনি ঝিনাইদহের প্রবীণ রাজনীতিবিদ, ভাষা সৈনিক জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার ছেলে। জাহেদী ফাউন্ডেশন নামের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এলাকার অসহায় গরিব দুস্থ মানুষকে সহায়তা করে আসছেন।

এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মসিউর রহমান, জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হরিণাকুন্ডু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম.এ. মজিদ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাবলু।ঝিনাইদহ-২ আসনে বরাবরই বিএনপির অবস্থান যথেষ্ট শক্ত। দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অন্তর্দ্বন্দ্ব নির্বাচনকে সামনে রেখে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান একক প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আসছেন। কিন্তু এবার মসিউর রহমানের সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন মীর রবিউল ইসলাম লাভলু। তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির আশায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তবে আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে মসিউর রহমানই মনোনয়ন পাবেন এবং তিনিই বিজয়ী হবেন এমন জোরালো দাবি করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের করা একটি মামলায় গতবছর ২৫শে অক্টোবর আদালত তাঁকে ১০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঐ মামলায় জামিনে আছেন। এ অবস্থায় মসিউর রহমান নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না ওই নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। তবে মসিউর রহমানের হাত ধরেই এ আসনের ব্যাপক উন্নয়ন হয়। চারবারের এমপি হিসেবে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী, আলহাজ অ্যাডভোকেট এম.এ. মজিদ। তিনি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। ২০০৩ থেকে ২০০৯  সাল পর্যন্ত হরিণাকুন্ডু চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, হরিণাকুন্ডু উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং হরিণাকুন্ডু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি  মানবজমিনকে  জানিয়েছেন, ‘এ আসন থেকে চারবার নির্বাচিত মসিউর রহমানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে আগামী নির্বাচনে তাঁকে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে তার বিরুদ্ধে সম্পদ আত্মসাতের দুর্নীতি মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছিল। নির্বাচনের আগেই সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে মসিউর রহমান নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে আমরা আশাবাদী। যদি কোনো কারণে মসিউর রহমান নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন তাহলে আমি দলের মনোনয়ন চাইব। এদিকে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মীর রবিউল ইসলাম লাবলু জানান, বর্তমান সরকারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ নেতকর্মীরা। দলকে সংগঠিত করার জন্য মাঠে ময়দানে কাজ করে যাচ্ছি। নেত্রী যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নির্বাচন করব। মনোনয়ন পাবার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে লবিং গ্রুপিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ