আওয়ামী লীগ-বিএনপি বিভক্ত ধারা উপধারায়

প্রকাশিত: ৯:৪১ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৮

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহ-৩ (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একাধিক ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তাদের গ্রুপের লোকজন নিয়ে গণসংযোগসহ প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অন্যতম হচ্ছেন, বর্তমান এমপি নবী নেওয়াজ, সাবেক এমপি শফিকুল আজম খান চঞ্চল, সাবেক এমপি পারভীন তালুকদার মায়া ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইন পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মাহমুদ আলী।

অন্যদিকে বিএনপির সাবেক এমপি মরহুম শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মহেশপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি, বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সহ-সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সাংস্কৃতিকবিষয়ক সহ-সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি লতিফুর রহমান চৌধুরী বাবলু দলীয় মনোনয়ন পেতে আগ্রহী।

এ ছাড়া প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর সুরা সদস্য মতিয়ার রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। এ আসনে জামায়াতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমানে রাজনৈতিক মাঠে তাদের নেতা-কর্মীদের দেখা মিলছে না। সূত্র জানায়, ঝিনাইদহ-৩ আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীকে পরাজিত করে শফিকুল আজম খান চঞ্চল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তার নিজস্ব বলয়ের কিছু নেতা-কর্মী ছাড়া দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়। এ সময় মহেশপুর আওয়ামী লীগ একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সবাই চঞ্চলের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

২০১৪ সালের নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়ে যান তৎকালীন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা নবী নেওয়াজ। এরপর চঞ্চল দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হন। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পরে চঞ্চল প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। সেই থেকে চঞ্চল বলয়ের নেতা-কর্মীরা মহেশপুরে পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নবী নেওয়াজ এমপি নির্বাচিত হলেও দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে টানতে তিনি ব্যর্থ হন। সরকারি সুযোগ-সুবিধা তার নিজ বলয়ের কিছু লোক পেলেও অধিকাংশ নেতা-কর্মী বঞ্চিত হয়েছেন। সেই ক্ষোভের বহির্প্রকাশ আগামী দিনে ঘটতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। অন্যদিকে, মহেশপুর উপজেলার কাজীরবেড় ইউনিয়নের ঝিটকিপোতা গ্রামের মৌলভী মুহাম্মদ আলীর মেয়ে পারভীন তালুকদার মায়া ২০০৮ সালে সংরক্ষিত আসন থেকে মহিলা এমপি নির্বাচিত হন।

স্থানীয় জিন্নানগর বাজারে তিনি একটি গার্মেন্টস কারখানা করার সুবাদে এলাকায় আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার হতদরিদ্র মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। বসে নেই ব্যারিস্টার মাহমুদ আলীও। তিনি ইতিমধ্যে এলাকায় নিজ উদ্যোগে ২০টি কাঁচাপাকা রাস্তা ও ২২ গ্রামের বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন। ইতিমধ্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের মন জয় করতেও সক্ষম হয়েছেন। এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য আরও যারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক এম এম জামান মিল্লাত, মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ময়জুদ্দিন হামিদ, কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুন্নেছা মিকি, জেলা কৃষক লীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ। অন্যদিকে কোন্দল থেমে নেই বিএনপিতেও।

সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম মাস্টার টানা ৩ বার এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এতদিন সেখানে একক নেতৃত্ব চলছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। শুরু হয় দলে কোন্দল। দলে জায়গা পান বর্তমান সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুল ইসলাম মমিন। তিনি আসার পর মহেশপুর বিএনপিতে নতুন করে কোন্দল বাধে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিকবিষয়ক সহ-সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান কিছু নেতা-কর্মী কাছে টানেন এবং দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে থাকেন।

এরই মধ্যে সাবেক এমপি শহিদুল ইসলাম মাস্টার মারা যাওয়ায় মহেশপুর বিএনপির হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়। দলীয় কোন্দল নিরসন করতে বর্তমানে মরহুম শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মেহেদী হাসান রনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপির দলীয় মনোনয়নের জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, কোটচাঁদপুর থানা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম গণসংযোগ ও অবিরাম চেষ্টা করছেন। এলাকার মানুষের মধ্যে নানা রকম সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আলহাজ লতিফুর রহমান চৌধুরী বাবলু।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ