তারেক মাহমুদ, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি : বাড়ির পাশের কাঁচাবাজারে চায়ের দোকান। খুব সকালে বিভিন্ন গ্রাম থেকে কাঁচা সবজি নিয়ে আসা মানুষের ভিড়ে বেচা বিক্রি ভালো হয়। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাড়তি কিছু আয় রোজগার করতে প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে প্রান্তকে যেতে হয় দোকানে। এরপর দোকান বন্ধ করে সকাল ৯টায় রওনা হন কলেজে। বিকেলে বাড়ি ফেরা। সন্ধেয় বাড়ি গিয়ে টিউশনি করা। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় একটু বেশি চাপ সামলাতে হয় প্রান্তকে। তাছাড়া কিইবা করার আছে! বাবার ইজিবাইক কেনা, লেখাপড়া আর সংসার চালাতে গিয়ে স্থানীয় চারটি এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়েছে। যে কারণে প্রতি সপ্তাহে প্রায় চার হাজার টাকা কিস্তির টাকা গুণতে হয়।
শনিবার দিনগত রাত একটার দিকে এক সড়ক দুর্ঘটনা প্রান্তকুমার সাহার (২৪) এই সংগ্রামের চির অবসান ঘটিয়েছে।
প্রান্ত যশোর বিসিএমসি কলেজের কম্পিউটার প্রোকৌশল বিষয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি কালীগঞ্জ শহরের কলেজপাড়ার প্রকাশকুমার সাহা ও পলিরানি সাহার একমাত্র সন্তান। মাত্র দুই শতক জমির ওপর সেমি পাকা দুই রুমের একটি বাড়িতে বাবা-মা আর প্রান্তর বসবাস ছিল।
নিহত প্রান্তর মা পলিরানি সাহা বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন আর বিলাপ করছেন, ‘আমার প্রান্তকে আর ঋণের টাকার কিস্তির চিন্তা করতে হবে না। কিস্তির টাকা শোধের জন্য কাকডাকা ভোরে চায়ের পানি গরম করতে চুলা জ্বালাতে হবে না। পৃথিবীর সব ঝামেলা চুকিয়ে তুই চলে গেলি! এখন এতগুলো ঋণের টাকা আমরা কীভাবে শোধ করবো! আমরা তোরে ছাড়া কারে নিয়ে বাঁচবো! আমাদের স্বপ্ন ছিল, তুই লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করবি। সংসারের অভাব কেটে যাবে। কিন্তু তোর সব স্বপ্ন পাথর হয়ে আমার বুকে পড়েছে। এখন আমি কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো!’
নিতহ প্রান্তর মামা শিপনকুমার সাহা জানান, অভাব অনটনের মধ্যে ওদের সংসার চলছিল। কিন্তু বোন-জামাই একটু বাড়তি আয় করতে ঋণ নিয়ে ইজিবাইক কিনেছিলেন। এছাড়া ভাগ্নের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে বেশ ঋণী হয়ে যান। যে কারণে ওরা বাবা-ছেলে মিলে ঋণ পরিশোধ করতে বেশ পরিশ্রম করতেন।
কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, শনিবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে ওষুধ কিনতে যাচ্ছিলেন প্রান্ত। কালীগঞ্জ শহরের যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের বৈশাখী তেল পাম্পের সামনে ভাঙা-চোরা রাস্তার ওপর মোটরসাইকেল নিয়ে পড়ে যান তারা। এসময় যশোর থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাস প্রান্তকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। আহত হন তার বন্ধু বিজয় ও কায়েস। পরে আহতদের উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।