ভুমিহীনের দেওয়া বন্দোবস্তকৃত জমি দখল করে খাচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতা

প্রকাশিত: ৯:০০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০১৭

ভুমিহীনের দেওয়া বন্দোবস্তকৃত জমি দখল করে খাচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতা

এম. মাহফুজুর রহমান, ঝিনাইদহ

জমি সরকারি, বন্দোবস্ত পেয়েছেন ভুমিহীন দুই ব্যক্তি। প্রতিবছর বন্দোবস্তের টাকাও পরিশোধ করে যাচ্ছেন ওই দুই ভুমিহীন। আর জমি জবরদখলে রেখে চাষ করে খাচ্ছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য, ছাত্রলীগের নেতা আব্দুল্লাহ স্বপন। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সামন্তা গ্রামের মাঠে ৪০ শতক সরকারি এই খাস জমি বন্দোবস্ত পেয়েও দখল পাচ্ছেন না হতদরিদ্ররা ভুমিহীন দুই ব্যক্তি মসলেম উদ্দিন ও সৈয়দ আলী।


সামন্তা গ্রামের ওই দুই ভুমিহীন ব্যক্তি সরকারের দেওয়া জমি দখল পেতে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদনও করেছেন। এরপরও তারা দখল পাননি বলে জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, জমি দখলের বিষয়ে কথা বললেই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করার ভয় দেখানো হয় তাদের।

ভুমিহীন সৈয়দ আলী জানান, তিনি সামন্তা বাজারে রাস্তার ধারে চায়ের দোকান করে ব্যবসা করেন। চা বিক্রি করেই চলে তার সংসার। তিনি জানান, সরকার ভুমিহীনদের মাঝে খাস জমি বন্দোবস্ত দিচ্ছেন এমন খবর পান। ২০১১ সালে তিনি ও তাদের গ্রামের মসলেম উদ্দিন কিছু জমি বন্দোবস্ত চেয়ে আবেদন করেন। সরকারের পক্ষ থেকে তিনি সামন্তা গোপালপুর মৌজায় ০১ নম্বর খতিয়ানের সাবেক ৪৩৬/৪৩৭ দাগের ১৫ শতক জমি ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত পান। আর মসলেম উদ্দিন একই নিয়মে পান ২৫ শতক জমি।
সৈয়দ আলী আরো জানান, এই জমি বন্দোবস্ত পেয়ে তারা দু’জনই দখলে নিয়েছিলেন। ধান চাষ মৌসুম শুরু হলে তারা চাষ করতে যান। কিন্তু তাদের গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি, কাজিরবেড় ইউনিয়নের বর্তমান মেম্বর ও ছাত্রলীগের মহেশপুর পৌর শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ স্বপন তাদের চাষ করতে দেন না। তিনি ও তার পরিবার ওই জমি দখলে রেখে ধান চাষ করছেন। কোনো ভাবেই তাদের দখল দেওয়া হয়নি। আজ পর্যন্ত তারা দখল করতে পারেননি। তিনি বলেন, প্রতিবছর জমি বন্দোবস্তের জন্য বরাদ্ধ অর্থ সরকারের ঘরে জমা দিচ্ছেন। কিন্তু জমি পাচ্ছেন না। জমির কর দিচ্ছেন ভুমিহীন আর চাষ করে খাচ্ছেন প্রভাবশালী ওই ছাত্রলীগ নেতা।

মসলেম উদ্দিন জানান, তিনি হতদরিদ্র কৃষক। অন্যের জমিতে কামলা বিক্রি করে তার সংসার চলে। এই অবস্থায় সরকারের কাছ থেকে পাওয়া জমিটা তার আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী মেম্বর দখল করতে না দেওয়ায় হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেন, জমির কথা বললেই মামলা-হামলার হুমকী দেওয়া হয়। জীবনের ভয়ে সব সময় প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। তবে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে এই জমি দখল পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি করে লিখিত আবেদন করেছেন। আশা করছেন তারা জমি পাবেন।

এ ব্যাপারে মহেশপুর পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কাজিরবেড় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর ও বর্তমানে আওয়ামীলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ স্বপন জানান, যারা ওই জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন তারা আসলে ভুমিহীন না। যে কারনে তিনি ওই ব্যক্তিদের জমির দখল দেননি। জমিটি বর্তমানে তারই দখল আছে স্বীকার করে বলেন সেখানে ধান চাষ করেছেন। জমির কর ওই দুই ব্যক্তি দিচ্ছেন এমন কথা বললে তিনি বলেন, দিতে পারেন।

এ বিষয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুল ইসলাম জানান, তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। এ বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি সহকারী কমিশনার (ভুমি) মহেশপুর এর কাছে লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দেন। বিষয়টি খোজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ