মহেশপুর উপজেলার পুড়াপাড়া বাজারে খাস জমি বিক্রি বানিজ্য!

প্রকাশিত: ৫:৩৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭

মহেশপুর উপজেলার পুড়াপাড়া বাজারে খাস জমি বিক্রি বানিজ্য!

ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পুড়াপাড়া বাজারের প্রায় ২২ বিঘা সরকারী খাস জমি বেদখলে চলে গেছে। বাৎসরিক বন্দোবস্ত নিয়ে প্রভাবশালীরা সরকারী এই জমি চড়া দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বর্তমানে পুড়াপাড়া বাজারে কোন জমিই আর অবশিষ্ট নেই। সব জমিতে পাকা দোকান ঘর তুলে ব্যবসা বানিজ্য চলছে। অথচ আধাপাকা ঘর তুলে ব্যবসা করার শর্ত রয়েছে। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, বাজারে খাস জমি আছে ৭ একর ২২ শতক।

 

বছরের পর বছর এক শ্রেনীর প্রভাবশালী মহল মহেশপুর এসিল্যান্ড অফিস থেকে কম টাকায় বাজারের খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে চড়া দামে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে সরকার একদিকে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি জমিগুলো এক হাত থেকে অন্য হাতে গিয়ে বেহাত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। বাজারের অনেক জমির ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছেন প্রভাবশালীরা। বিষয়টি নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই। মান্দারবাড়ীয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসের কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান জানান, আমি এক বছর এখানে যোগদান করেছি। যে সব জমি বেদখল হয়েছে তা অনেক আগের কথা। তিনি জানান, পুড়াপাড়া বাজারে ৬ একর ৪৪ শতক জমি নিস্কটক আছে। বাকী জমি নিয়ে মামলা চলছে।

 

অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মান্দারবাড়ীয়া ইউনিয়ন ভুমি অফিসে পর্যায়ক্রমে সিরাজুল ইসলাম, রমেশ চন্দ্র, শুকুর আলী, শহিদুল ইসলাম ও ইসলাম উদ্দীনসহ অনেকেই তহশীলদার হিসেবে চাকরী করেছেন। তারাই মুলত প্রভাবশালীদের সাথে যোগসাজস করে বাজারের খাস জমি একাধিক হাতে বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন। এনকি বাজারের রাস্তার জমি দখল করেও পাকা বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু মহেশপুর উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি দেকেও না দেখার ভান করছেন বলে অভিযোগ। পুড়াপাড়া গ্রামের শ্রীদাম বিশ্বাসের ছেলে শ্রী সুকদেব বিশ্বাস এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের টাকা দিয়ে বাজারে প্রবেশ পথ জোর পূর্বক দখল করে পাকা বিল্ডিং করছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা ও এলাকাবাসী বাধা দিলে তিনি সুকদেব বিশ্বাস উক্ত জমি নিজের স্ত্রী পারবতী বিশ্বাস ও ছোট ভাই উত্তম বিশ্বাসের নামে বন্দোবস্ত গ্রহন করেন। অথচ উত্তম বিশ্বাস কোন দিনই দোকানদারী করেননি। অভিযোগ উঠেছে জমি বন্দোবস্ত গ্রহন করার পর সুকদেব বিশ্বাস ঐ জমি পুড়াপাড়া বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সাধন কুমারের নিকট ১১ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। সাধন কুমারও ১১ লাখ টাকায় জমি কেনার কথা স্বীকার করেছেন। পরে ওই একই জমি শ্যামনগর গ্রামের রাকিব উদ্দীনের কাছে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেন সুকদেব। বর্তমান ওই স্থানে রকিব উদ্দিন পাকা বিল্ডিং নির্মাণ করছেন।

 

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ কামরুল ইসলাম গত ১১ সেপ্টেম্বর সরেজমিন পরিদর্শন করে রাকিবের করা বিল্ডিংয়ের কিছু অংশ ভেঙ্গে দেন এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিল্ডিং অপসারণের নির্দেশ দিয়ে আসেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি। মহেশপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাছলিমা খাতুন গত ১৪ সেপ্টেম্বর তহশীলদার আতিয়ার রহমানকে মৌখিক ভাবে বিল্ডিং ভেঙ্গে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সরকারী কর্মকর্তাদের আদেশ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি মান্দারবাড়ীয়া ইউনিয়নের সহকারী ভুমি কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান। ফলে বিল্ডিং ভেঙ্গে না ফেলায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে ভুমি কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকজনদের সাথে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পুড়াপাড়া বাজারের খাস জমি এ ভাবে হাত বদল করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুল ইসলাম জানান, সরকারী খাস জমি উদ্ধারে যা করার তাই করা হবে। শর্র্ত ভেঙ্গে কেও পাকা ভবন করলে তাও ভেঙ্গে ফেলা হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ