এক যুগেও চালু হয়নি ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতাল

প্রকাশিত: ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০১৭

এক যুগেও চালু হয়নি ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতাল

নির্মাণের এক যুগ পরও চালু হয়নি ঝিনাইদহ ২৫ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতাল। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহূত থাকায় হাসপাতাল চত্বর জঙ্গলে ভরে গেছে। ঘাস জমে যাওয়ায় সেখানে গরু-ছাগল চরছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে চুরি হয়ে যাচ্ছে দরজা, জানালাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। দুজন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার দিয়ে আউটডোর চালু রাখা হলেও তারা নিয়মিত আসেন না। হাসপাতালের এই অবস্থা দেখে মানুষও সেখানে যায় না।

এদিকে একমাত্র শিশু হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় চাপ বাড়ছে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে। হাসপাতালটি চালুর দাবিতে মানববন্ধন, সভা-সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে প্রেস ক্লাব, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়ের পাশে সদর হাসপাতাল থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে তিন একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয় ২৫ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক শিশু হাসপাতালটি। জেলার ছয়টি উপজেলার কথা চিন্তা করেই এটি নির্মাণ করা হয়। জমি অধিগ্রহণ বাবদ ৮৮ লাখ ও ভবন নির্মাণে ৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। ২০০৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন। পরের বছরের ৩০ আগস্ট ভবনটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতালে চিকিত্সকসহ ১৮টি পদ সৃষ্টির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ এখনো জনবল নিয়োগ দিতে পারেনি।

উদ্বোধনের সময় দুজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়ে আউটডোর চালু করা হয়। কিন্তু কোনো ওষুধ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। এখনো সেই অবস্থাতেই রয়েছে। সদর হাসপাতালের একজন চিকিত্সককে ডেপুটেশনে হাসপাতাল দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হলেও ব্যস্ততার কারণে তিনি সেখানে ঠিকমতো যেতে পারেন না। দীর্ঘদিন অব্যবহূত থেকে যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কিছু যন্ত্রাংশ এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং সেন্টার এবং এক্স-রে মেশিনটি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো চত্বর ও আশপাশ জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় কনস্ট্রাকশন মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের বারান্দা ধসে পড়েছে। ময়লা-আবর্জনা ভরা শিশু হাসপাতালের লোহার গ্রিল, দরজা, জানালা, কাচের গ্লাস ভেঙে গেছে। চুরি হয়ে গেছে মূল্যবান বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। কয়েকটি ওয়ার্ডে রয়েছে ভাঙা বেড।

হাসপাতালটি দেখাশোনার দায়িত্ব পান ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ফাল্গুনী রানী সাহা। ডেপুটেশনে দায়িত্বপ্রাপ্ত এই চিকিত্সক জানান, সময় দিতে না পারায় দুজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার শহিদুর রহমান ও রোখসানা ওয়াসিমকে দিয়ে বহির্বিভাগ পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন ৫-৬টি শিশু রোগী চিকিত্সা নিতে আসে বলে জানান কমিউনিটি মেডিকেল অফিসাররা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, আমি আসার আগে বেশ কয়েকবার হাসপাতালটি চালু করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছিল। এখানে চিকিত্সক, স্টাফ নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করাও যাচ্ছে না।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ