ঢাকা ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:২৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০১৭
ঝিনাইদহ পৌরসভার অন্তর্গত মুরারীদহ একটি প্রাচীন গ্রাম। ঝিনাইদহ সদর শহর থেকে এই গ্রামের দুরুত্ব ২/৩ কি: মি: হবে। মুরারীদহে দন্ডায়মান আছে সলিমুল্যা চৌধুরীর প্রাচীন দ্বিতল বাড়িটি। এটি ঝিনাইদহের পুরাকীর্তির মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন নামে এ বাড়িটি মানুষের কাছে পরিচিত যেমন – মিয়ারদালান, মিয়াবাড়ি, চৌধুরীবাড়ি, সেলিমচৌধুরীর বাড়ি, ও আসরাফুনেছা ভবন ।
খরস্রোতা নবগঙ্গা নদীর গর্ভ থেকে ইটের গাঁথুনি গেঁথে নদীর উত্তর ধারে বাড়িটি নির্মিত। ধারণা করা হয় বাংলা ১২৩৬ সাল, ইং ১৮৩০ সালে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়। সে হিসাবে ২০১৭ সাল ধরলে, প্রায় ১৮৭ বছর পূর্বে বাড়িটি নির্মিত। এই বাড়িটি নির্মাণ করা কত কষ্টসাধ্য ছিল তা সহজেই অনুমেয়। বাড়িটি দেখলে মনে হয় নদী গর্ভে দাড়িয়ে আছে এবং প্রতিনিয়ত সংগাম করছে নবগঙ্গার জলস্রোতের সাথে। বাড়িটি বর্তমানে জরাজীর্ণঅবস্থায় পড়ে আছে । চুন সুরকী প্রয়োগে ইটের শক্ত গাঁথুনী দিয়ে বাড়িটিকে সজীব রেখেছে। বাড়িটির দেওয়াল ২৫ ইঞ্চি পুরু , যে কারনে নবগঙ্গার জলস্রোতের ক্ষিপ্রতায় এখনও নদী গর্ভে বিলীন হয়নি।
কয়েকটি দেওয়াল ও ছাদে ফাটল ধরেছে মাত্র। এটি একটি পূর্বমূখী ইমারত। উত্তর দক্ষিনে ইহার দৈর্ঘ্য ৮২ ফুট। পুর্ব পশ্চিমে প্রশস্ত ৬৬ ফুট। ভবনটির অভ্যন্তরে দক্ষিণ দিকের সিঁড়ি দিয়ে পূর্ব ও দক্ষিণাংশের ছাদে উঠা যায়। বাইরে থেকে ছাদে উঠার জন্য উত্তর দিকের সিঁড়ি ব্যবহৃত হয়। এ ভবনে ছোট বড় ১৬ টি কক্ষ আছে। দ্বিতীয় তলা ছাদের উপর একটি চিলে কুঠা আছে। শ্বেতপাথর দিয়ে আচ্ছাদিত এ চিলেকোঠা নামাজ ঘর হিসেবে ব্যবহার করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল বলে শোনা যায়।
দরজা ও জানালার উপর অংশে ধনুক আকৃতির কারুকার্যময় কার্নিশ। এই সকল কার্নিশের উপর অংশে ধনুকের মত বড় বড় স্তম্ভ ও মালা সত্যিই দক্ষ কারিগরের নিখুঁত কারূকার্য ।
জনশ্রুতি আছে বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সলিমুল্যা চৌধুরী । সাধারণ মানুষের কাছে তিনি মিয়া সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন, সে জন্য এ বাড়িটি ‘মিয়ার দালান ‘ নামে সমধিক পরিচিত। তার পিতার নাম ছিল বুধই বিশ্বাস । বুধই বিশ্বাস ছিলেন নলডাঙ্গা রাজবংশেরর একজন অন্যতম বিচক্ষণ দেওয়ান। সে কারণে সলিমুল্যা চৌধুরীর জীবন ইতিহাস নলডাঙ্গা রাজ বংশের সাথে জড়িত। শোনা যায় শালিখা উপজেলার অন্তর্গত পদ্মবিলা গ্রাম ছিল সলিমুল্যা চৌধুরীর পৈতৃক নিবাস। পিতা বধুই বিশ্বাস সুশিক্ষত না হলেও তিনি ছিলেন কর্মঠ ও বুদ্ধিমান। নিজ কর্মগুণে দেওয়ান হিসাবে রাজবংশেরর উপর তাঁর যথেষ্ট প্রভাব ও প্রতিপত্তি ছিল। পরবর্তীতে বুধই বিশ্বাস রাজবংশের দেওয়ান থাকাকালীন অগাধ ধন সম্পত্তির মালিক হন এবং নলডাঙ্গা রাজবংশের দেওয়ান হিসাবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেন। আর্থিক ক্ষেত্রে প্রাচুর্যপূর্ণ হয়ে উঠেন।
বুধই বিশ্বাসের এক মাত্র পুত্র সলিমুল্যা চৌধুরী বহু ধন সম্পত্তি পেয়ে বিলাস প্রিয় হয়ে ওঠেন। এই বিলাসের পরবর্তী ফল হচ্ছে মুরারীদহের
” আসরফনেছা ভবন’ ।
পিতা বুধই বিশ্বাসের মৃত্যুর পর সলিমুল্যা নলডাঙ্গা রাজবংশের অন্যতম মুসলমান কর্মচারী হিসাবে যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দেন এবং ” চৌধুরী ” উপাধি গ্রহন করেন। জমিদারের অধীনে রাজস্ব বিভাগের কর্মচারী উপাধি ছিল ‘চৌধুরী ‘ এবং জমিদারের অধস্থন ভূ-স্বামী হিসাবে সলিমুল্যা চৌধুরী যথেষ্ট বিষয় সম্পত্তির মালিক হন। সলিমুল্যা চৌধরী “মুরারী” নামে নিম্ন জাতীয় এক হিন্দু রমণীর প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তাকে নিকা করেন। হিন্দু নাম পরিবর্তন করে মুসলিম নাম রাখা হয় ‘ বিবি আসরফুনেছা ‘। হিন্দু রমনী নিকাহ করার কারনণ তার প্রথমা স্ত্রী রুষ্ট হন এবং আত্মীয় স্বজনের মধ্যে বিরোধিতা সৃষ্টি করে। ফলে সলিমুল্যা চৌধুরী গভীর রাতে বজরা নৌকাযোগে নবগঙ্গা নদী দিয়ে নব পরিণীতা স্ত্রী সহ অজানার উদ্দেশ্যে চিরতরের জন্য পদ্মবিলা ত্যাগ করেন। বহু ধন- সম্পদ ও লোক লস্কর নিয়ে তিনি অনির্দিষ্ট স্থানের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। মাঝি মাল্লাসহ নবগঙ্গা নদী বেয়ে মুরারীদহয় এসে উপস্থিত হন এবং এখানে থাকার ইচ্ছা পোষন করেন।
সম্ভবত এই জায়গার বনবীথি ঘেরা পরিবেশ তাকে মুগ্ধ করেছিল । শোনা যায় সলিমুল্যা চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রীর হিন্দু নাম “মুরারী ” হতে ‘মুরারীদহ ‘ এবং মুসলমান নাম ‘আসরফনেছা’ অনুযায়ী ‘ আসরফনেছা ভবন’ নামকরন হয়েছে। মনে হয় বিবি আসরফনেছার নাম স্মরনীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে এই সুন্দর আট্টালিকা নির্মাণ করে সলিমুল্যা চৌধুরী মুরারীদহে বিবির সাথে বসবাস করেন। তখন নলডাঙ্গা রাজবংশের অনুগ্রহে এখানে অনেক জোত জমির অধিকারী হন।বাড়িটির গায়ে পুর্বদিকের সদর ফটকের উপরে নির্মিত সময়ের কিছু কথা কাব্যিক ভাষায় খোদাই করা আছে………………..
শ্রীশ্রীরাম। মুরারীদহ গ্রাম ধাম, বিবি আসরফনেছা নাম,
কি কহিব পুরীর বাখান।
ইন্দ্রের আমরাপুরী, নবগঙ্গার উত্তরধারী, ৭৫০০০ টাকায়
করিল নির্মন ।
এদেশে কাহার সাধ্য, নদীর বাঁধিয়া অর্দ্ধ,জলমধ্যে
কমল সমান ।
কলিকাতার রাজচন্দ্ররাজ, ১২২৯ শুরু করি কাজ, ১২৩৬ সালে
সমাপ্ত দালান ।
সংগৃহিত
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com