প্রশিক্ষণ আর ঋণ বদলে দিয়েছে যুবক রিপনের জীবন

প্রকাশিত: ১০:১১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০১৭

প্রশিক্ষণ আর ঋণ বদলে দিয়েছে যুবক রিপনের জীবন

নিজ বাড়ির পুকুরে দশ শতক জলাশয়ে মাত্র ২ কেজি মাছের পোনা ছেড়ে চাষ শুরু করেছিলেন যুবক নাজমুল কবীর ওরফে রিপন। এখন তিনি শত শত বিঘা জলাশয়ে মাছ চাষ করেন। মাত্র ২০ বছরে এই মাছ চাষ করে সংসার খরচের পাশাপাশি চাষযোগ্য বেশ কিছু জমি ক্রয় করেছেন। বাড়িয়েছেন মাছের চাষ। ট্রাক কিনেছেন তিনটি।

 

আর এই সব কিছুই সম্ভব হয়েছে যুব উন্নয়ন থেকে নেওয়া প্রশিক্ষণ আর তাদের দেওয়া ঋণ নিয়ে। বর্তমানে তার মৎস্য খামারে নিয়মিত শ্রমিক আছে ৬ জন, আর অনিয়মিত ১৮ জন। অচিরেই তিনি মাছের খাদ্য তৈরীর কারখানা প্রতিষ্ঠার করবেন বলে জানিয়েছেন।

 

রিপন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের মনিরুল হকের পুত্র। তিনি স্থানিয় মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে পড়ালেখা করেছেন। রিপন জানান, তিনি এসএসসি পাশ করার পর ১৯৯২ সালে নিজেদের বাড়ির পুকুরে ২ কেজি লাইলোটিকা মাছের পোনা ছাড়েন। এই মাছগুলো বড় হলে বিক্রি করেন। এতে বেশ ভালো লাভ হয়েছিল। এরপর পড়ালেখা করতেন আর নিজেদের পুকুরে মাছের চাষ করতেন। ১০ শতক জলাকারে যে মাছ পেতেন তা দিয়ে নিজেদের খাওয়ার পাশাপাশি কিছু বিক্রিও করতেন। এভাবে তার মাছ চাষের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সারাক্ষণ চিন্তা করতেন কখনও বেকার থাকবেন না। পড়ালেখা যতটুকু করতে পারবেন করবেন, চাকুরীর জন্য অপেক্ষায় থাকবেন না। এরপর বিএ পর্যন্ত লেখা পড়া করেন তিনি। ১৯৯৯ সালে যুব উন্নয়ন তাকে আবারো ২৫ হাজার টাকা ঋন দেন। এই টাকাও পরিশোধ করেন অল্প সময়ে। এরপর তার মাছ চাষ এলাকা বাড়তে থাকে। বেড়ে যায় পুকুর জলাশয়ের পরিমান।

 

রিপন জানান, তিনি ১ শত বিঘার উপরে জলাশয়ে মাছের চাষ করেন। কালীগঞ্জ উপজেলার বড় বড় দীঘিগুলো তিনি বন্দোবস্ত নিয়ে মাছের চাষ করেন। বর্তমানে তার ২৬ বিঘা জলাকারে মাছ ছাড়া রয়েছে। এখানে এক লাখ লাইলোটিকা মাছের পোনা ছাড়া আছে। তিনি জানান, এই মাছ চার মাসে বিক্রিযোগ্য হবে। এই চার মাসে তার খরচ হবে ১৮ লাখ টাকা। মাছ বিক্রি করতে পারবেন ২২ লাখ টাকা। মাত্র ২৬ বিঘা জলাশয়ে চারমাসে ৪ লাখ টাকা আয় হবে। এভাবে এই জলাশয়ে বছরে ১২ লাখ টাকা আয় করবেন তিনি।

 

রিপন আরো জানান, ২০ বছর তিনি এই মাছের চাষ করেন। সে সময় প্রথম ৫ বছরে তিনি যা আয় করেন তা দিয়ে নিজের পড়ালেখা আর হাত খরচ হয়েছিল। ওই ৫ বছরে তিনি ৩ লাখ টাকা আয় করেন। পরবর্তী ১৫ বছরে আয় করে সংসারে খরচকরেছেন ৪৫ লাখ। এই সময়ে তিনি মাঠে চাষযোগ্য জমি কিনেছেন ৩ বিঘা। ৫০ লাখ টাকা দিয়ে ১০ চাক্কার তিনটি ট্রাক ক্রয় করেছেন। বর্তমানে তিনি সচ্ছল জীবন-যাপন করেন। তিনি বলেন, নিজের আগ্রহ আর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহযোগিতায় তিনি এগুলো করতে পেরেছেন। রিপন আরো জানান, ২০০০ সালে তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার মধ্যে শ্রেষ্ট মৎস্য চাষি হিসেবে যুব পুরষ্কার পান। তিনি দাবি করেন এই খাতে সরকার ঋন দিয়ে থাকেন, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সেটা প্রকৃত মৎস্যচাষিরা পান না। এই বিষয়টি দেখা জরুরি।

 

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, তিনি দীর্ঘদিন উপজেলা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। রিপন প্রথম যখন প্রশিক্ষণ নেন তখনও তিনি বর্তমান কর্মস্থলে ছিলেন। তিনি জানান, রিপনকে তারা ওই সময়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, ঋণ সহায়তা করেছেন। যা কাজে লাগিয়ে তিনি আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। মিজানুর রহমান বলেন, শুধু রিপন একা নন যুব উন্নয়ন থেকে ঋণ নিয়ে অনেকেই সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। এবারও ৯৬ জন মৎস্য চাষির মধ্যে ১৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ঋন দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ