ঢাকা ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০১৭
সড়ক বিভাগের ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এ জেলার ৪০৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে চলতি বছরে ৬০ ভাগ সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। এসব সংস্কার করতে তিন বছর লাগবে। তবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা হবে। এ কাজের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর মধ্যে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন জনসাধারণ। যুগান্তরের কাছে ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরেন এ সড়কে যাতায়াতকারী ডা. ইয়াসিন। তিনি বলেন, ঝিনাইদহ হয়ে চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার পথে বৈডাঙ্গা থেকে ডাকবাংলার ত্রিমোহনী পর্যন্ত রাস্তা মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতি সপ্তাহে এ রাস্তায় যানবাহন উল্টে পড়ে থাকতে দেখি। তখন ২৫ কিলোমিটার ঘুরে চুয়াডাঙ্গা যেতে হয়। অথচ এ রাস্তার পরের অংশটুকু ভালো। সদর উপজেলার সাগান্না ই?উনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে মেম্বার হাসানুজ্জামান বলেন, সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি আরও জানান, রাস্তার ধুলাবালিতে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন হয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকাগামী পরিবহনের চালক মো. সেলিম বলেন, এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে তারা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। এতে করে যানবাহনের মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। স্থানীয় সংবাদকর্মী আসিফ ইকবাল কাজল বলেন, সড়কগুলোর বেহাল অবস্থার কারণে ছেলেমেয়েরা হেঁটেও স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না।
অভিযোগ, সড়কগুলো জরুরিভিত্তিতে মেরামতের নামে ৩০ জুন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। নামমাত্র কয়েকটি ইটের খোয়া এবং বিটুমিন দিয়ে গর্ত পূরণ করে বিপুল অংকের টাকা লুট করা হয়েছে। সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী নির্বাহী সেলিম আজাদ খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে। তবে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে তাকে হবিগঞ্জ জেলায় বদলি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঝিনাইদহ-যশোর সড়কের যুব উন্নয়ন ভবনের সামনে থেকে তেঁতুলতলা, বিষয়খালীর কিছু অংশ এবং একই সড়কের খয়ের তলা পর্যন্ত ৪৮০০ মিটার সড়ক জুনে সংস্কার করা হয়। এ কাজের জন্য প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। নিন্মমানের কাজ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যথাসময়ে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়কের কাজ শেষ হয়নি। এর মূল কারণ নিন্ম দরে দাখিল করা দরপত্রের মূল্য কৌশলে বাড়িয়ে নেয়া। জানা গেছে, তিন ধাপে এ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সড়ক বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, সড়কটি উন্নয়নের কাজ ২০১১-১২ অর্থবছরে শুরু হয়। ২০১৪ সালের জুনে কাজ শেষ করার কথা ছিল। প্রথম ধাপে সড়কটির ঝিনাইদহ অংশের ১৪ কিলোমিটার সংস্কার ও প্রশস্তকরণের জন্য ব্যয় ৪৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা ধরা হয়। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০১৬ সালের ৩০ জুন করা হয়। এ সময়ের মধ্যেও সড়কের কাজ শেষ করা হয়নি। সব শেষে ডিপিপি সংশোধন করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর করা হয়। এ পর্যায়ে নতুন করে আগের ১৪ কিলোমিটারের সঙ্গে আরও ছয় কিলোমিটার যোগ করা হয়েছে। এখন ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৭১ কোটি ৬৭ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। শৈলকুপার মেসার্স জামান অ্যান্ড ব্রাদার্স ও খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজকে নতুন ৬ কিলোমিটারসহ অসমাপ্ত ৩২৫ মিটার কাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে জেলা শহরের জিরো পয়েন্ট (পায়রা চত্বর ) থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং একই সড়কের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সামনে থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে সড়কের বৈডাঙ্গা অংশে কাজ করা হচ্ছে। গত অর্থবছরে সংস্কার করা সড়কেও গর্ত দেখা দিয়েছে ।
সংশ্লিষ্ট সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন জানান, একই সড়কের বৈডাঙ্গা বাজারের পশ্চিম দিক থকে ব্র্যাক অফিসের সামনে পর্যন্ত ৩২৫ মিটার সড়কের কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মেসার্স শিমুল এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মো. বাবুল আজাদের চুক্তি বাতিল করে ১৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। অভিযোগ, একই সড়কে মো. শাহীনুর আলম কাজ শুরু করেই বরাদ্দের ১১ কোটি টাকার মধ্যে এক কোটি ৬৮ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেছেন। এখন প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করার সুযোগ পেয়েছেন শাহীনুর আলম। তবে আজও কাজ শুরু করেননি তিনি।
অভিযোগ, জেলা শহরের জিরো পয়েন্ট (পায়রা চত্বর ) থেকে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে। সোমবার স্থানীয় মুজিব চত্বরে গোল অংশে খুঁড়তে দেখা যায়। সড়কটি সিডিউল মোতাবেক প্রশস্ত করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে সড়কের দুই পাশে ফুটপাত থাকছে না। এটি গুরুত্বপর্ণ সড়ক হলেও এখন থেকেই স্থানীয় চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে পায়রা চত্বর পর্যন্ত পথচারীদের জন্য থাকছে না ফুটপাত। কোথাও সরু কোথাও চওড়া করে করা হচ্ছে সড়কটি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। সড়কটি উন্নয়নে ৩২টি বৈদ্যুতিক পোল অপসারণ করা জরুরি। অভিযোগ, সমন্বয় না করে অজোপাডিকো চলতি বছরে অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুতের খুঁটিগুলো পুঁতেছে। এখন সড়ক সংস্কার ও প্রশস্ত করতে হলে ওইসব খুঁটি তুলে ফেলতে হবে। এর জন্য অজোপাডিকো ঝিনাইদহের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ৬১ লাখ টাকার একটি বাজেট দিয়েছে। এতে করে সড়কটির সংস্কার ব্যয় আরও বাড়বে বলে জানায় সড়ক বিভাগীয় সূত্র। সড়ক বিভাগ ঝিনাইদহের বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম মোয়াজ্জেম হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর-মুজিবনগর সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পের ঝিনাইদহ অংশের অসমাপ্ত কাজ নতুন করে শুরু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া সড়কের ১১ কিলোমিটার সংস্কার মেরামতের জন্য চলতি মাসের ১৬ তারিখে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ জেলায় ৮০ কিলোমিটারের চারটি মহাসড়ক, ৫০ কিলোমিটারের আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ২৭৬ কিলোমিটার ১১টি জেলা সড়ক রয়েছে। এসব সড়কের ৬০ ভাগই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব সড়ক দিয়ে কোনো রকমে যানবাহন চলাচলের জন্য মেরামত করা হবে। তিনি বলেন, কোনো রকম মেরামত করতেই ছয় মাস সময় লাগবে। তিনি আরও বলেন, এর জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। টাকা পাওয়া গেলে জরুরিভিত্তিতে মেরামত কাজ শুরু করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত সব সড়ক সংস্কার ও মেরামতের জন্য কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দিয়ে ওভারলোড নিয়ে যানবাহন চলাচলের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে মন্তব্য করে নির্বাহী প্রেেকৗশলী বলেন, শিগগিরই শুরু হচ্ছে মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর-মহেশপুর-যাদবপুর সড়কের উন্নয়ন কাজ। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি টাকা ।
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com