ঢাকা ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
ঈশ^রদী-ঝিনাইদহ ভায়া কুষ্টিয়া মহাসড়ক যান চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ৩২ জেলার একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম এই মহাসড়ক। প্রতিদিন এই মহাসড়ক দিয়ে ১১ হাজার ভারি যানবাহন চলাচল করে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী। পুরো সড়ক খানাখন্দে ভরা। ছোট-বড় গর্ত, কোথাও কোথাও যেন খালে পরিণত হয়েছে। সড়ক সংস্কারে সড়ক বিভাগ নামমাত্র ব্যবস্থা নিলেও তা টেকে না এক মাসও।
সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, গত আট বছরে এই মহাসড়ক সংস্কারে ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া বছরে ৫০ লাখ টাকা করে ব্যয় করা হয়। গত এক মাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। যে কাজ হয়েছে তার পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে সব কিছুই ধুয়েমুছে গেছে।
অটোরিকশায় বটতৈল চারমাইল এলাকায় যেতেই দেখা যায়, দুর্ভোগ কাকে বলে। মজমপুর গেট থেকে চারমাইল পর্যন্ত সড়ক খানাখন্দে ভরা। টানা বৃষ্টিতে খানাখন্দ যেন আরো জেগে উঠেছে। চৌড়হাস বিএটিবি কার্যালয় থেকে বটতৈল মোড় পর্যন্ত সড়কের অবস্থা একবারে যাচ্ছেতাই। হাজার হাজার ভারী যানবাহনের যে সড়ক দিয়ে যাতায়াত সেই মহাসড়কের এমনই হাল। সড়ক বিভাগ মাঝেমধ্যে দায়সারা সংস্কার করলেও তা কোনো কাজে আসে না বরং মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে যে কাজ করা হয় তা সামান্য পানিতেই ধুয়েমুছে যায়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আট বছরে ৪২ কিলোমিটারের এই সড়ক সংস্কারে ২০ কোটি টাকার কাজ হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। বড় ধরনের কোনো সংস্কার হয়নি। প্রতিবছর টুকটাক কাজ হলেও বর্ষার সময় বৃষ্টিতে সড়ক ফেটে ভেঙে যায়। এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তা না হলে সড়কটি একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। সওজের ওই কর্মকর্তা বলেন, সড়কটি যানচলাচলের উপযোগী করে তুলতে প্রয়োজন নকশার পরিবর্তন। তাতে ব্যয় হবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। প্রতিবছর এমন কাজ করে কোনো লাভ নেই। একদিকে কাজ হবে অন্যদিকে বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে যাবে। এতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়বে দুর্ভোগ। কাজের কাজ কিছুই হবে না।
কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী এসবি সুপার ডিলাক্সের চালক ইমরান হোসেন জানান, সড়কের বেহাল দশার কারণে আগে যেখানে ঢাকা যেতে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে সময় লাগত ছয় ঘণ্টা সেখানে এখন লেগে যাচ্ছে ১২ ঘণ্টা। দ্বিগুণ সময় লেগে যাচ্ছে। এতে কোটি টাকার বাসের অবস্থাও কাহিল হয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যেই বিকল হয়ে যাচ্ছে। ফলে মালিকের মোটা অঙ্কের অর্থ গচ্ছা যাচ্ছে। শুধু বাসই নয়, প্রতিদিনই এই মহাসড়কে ভেঙেচুরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকছে ট্রাকসহ বিভিন্ন ভারী পরিবহন। এতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সড়ক সংস্কার না হলে এমন দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। ট্রাকচালক বাদশাহ আলমগীর বলেন, ট্রিপ নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে দ্বিগুণেরও বেশি সময় লাগছে। ভাঙা সড়ক অতিক্রম করতে মাঝেমধ্যেই স্পিং ভেঙে পড়ছে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে তা মেরামত করতে হচ্ছে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরের চালকল মালিক ও ফ্রেশ অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ওমর ফারুক জানান, প্রতিদিন প্রায় ২০ ট্রাক চাল তার মিল থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বাজার ও গঞ্জে যায়। সড়কের করুণ অবস্থার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না চাল। মাঝেমধ্যেই চালভর্তি গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। সময়মতো চাল সরবরাহ করতে না পারায় চালের বাজারেও প্রভাব পড়ে।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের কুষ্টিয়ার আহ্বায়ক কে এম জাহিদ জানান, সড়ক সংস্কারে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেই। পরিকল্পিত উদ্যোগ না নিয়ে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে কোনো লাভ হয় না। সম্প্রতি সড়কের বেহাল দশার কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনা।
কুষ্টিয়া সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, এই সড়কে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বিকল্প নেই। সড়কের দুই ফুট নিচের অংশ পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে তৈরি করে আবার ওভার লে করলে ঠিক হয়ে যাবে। অন্যথায় এভাবেই চলতে হবে। তবে সড়ক সংস্কারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com