ঢাকা ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
ঊর্মি আর তামিমের চোখে এখন শুধুই অন্ধকার। মাকে ৩৮ টুকরো করে হত্যা করা হয়েছে। আর পিতা তার মাকে হত্যার দায়ে ফেরার। কে তাদের লালন পালন করবে। শেষবারের মতো মৃত মায়ের মুখটি দেখতে তারা এখন ব্যকুল। মাকে একনজর দেখার আশা নিয়ে রওনা দিয়েছে। মা তাসলিমা আক্তারকে ৩৮ টুকরো করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এই বীভৎস টুকরো টুকরো মাংস পিণ্ডির মধ্যে কীভাবে মায়ের মুখটি দেখবে তারা। উর্মি আর তামিমের সঙ্গে গেছেন পরিবারের অন্য দুই সদস্য। শিশু দু’টির প্রশ্ন ‘আমরা কি আমাদের মাকে দেখতে পারবো, শুনেছি তাকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ঊর্মি কান্নার ফাঁকে ফাঁকে বলে, এই মা-ই তাদের বড় করতে পরিশ্রম করে যাচ্ছিলেন। তাদের দু’জনকে নানাবাড়িতে রেখে ঢাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তার পাঠানো টাকায় পড়ালেখা চলতো, চলতো তাদের খাওয়া-পরা। এখন তাদের দু’জনের কি হবে? নিহত তাসলিমা আক্তারের পিতা তক্কেল আলী মণ্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় হতবাক শিশু দুইটি। পরনে জামা-কাপড়। ভ্যানের অপেক্ষায় বসে আছে তারা ঢাকায় যাবে। সঙ্গে আছেন নানী রাবেয়া খাতুন ও মামা হাফিজুর রহমান। ঢাকার জামগড়া এলাকায় খুন হয়েছেন তাদের মা তাসলিমা আক্তার। শুনেছেন তাকে দেখে চেনার উপায় নেই, কেটে ৩৮ টুকরো করা হয়েছে। তারপরও একনজর দেখার আশা নিয়ে তারা যাচ্ছেন। ভালো থাকলে লাশও নিয়ে আসবেন বলে জানান তক্কেল আলী মণ্ডল।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নৈহাটি গ্রামের তক্কেল আলীর একমাত্র কন্যা তাসলিমা আক্তার (৩২)। ১০ বছর আগে তিনি ঢাকায় চলে যান। সাভার, আশুলিয়া, জামগড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন আর পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। ঈদের দু’দিন আগে তাসলিমাকে খুন করা হয়েছে। জামগড়া এলাকার একটি বাসায় প্লাস্টিকের ড্রামে তার অর্ধগলিত লাশ পাওয়া গেছে। ৩৮ টুকরো করে ড্রামে ভরে রাখা ছিল ওই লাশটি। নিহত তাসলিমা আক্তারের মা রাবেয়া খাতুন জানান, প্রায় ১৪ বছর আগে খাজুরা গ্রামের বাবুল হোসেনের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। বিয়ের পর ঊর্মির জন্ম। কিন্তু বাবুল নেশাগ্রস্ত হওয়ায় তারা সংসার করতে পারেনি। অল্প দিনেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তাসলিমা ঢাকায় কাজ করতে চলে যায়। সেখানে পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। সেখানে সাহেব আলী নামের এক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর জন্ম হয় ছেলে তামিম। কিন্তু বাড়িতে থাকা মেয়েকে নিয়ে তাদের বিরোধ সৃষ্টি হয়।
একপর্যায়ে তাসলিমাকে তাড়িয়ে দেন পুলিশ সদস্য। রাবেয়া খাতুন আরো জানান, এই ঘটনার পর তাসলিমা তাকে বলেছিল সে আর কখনও সংসার করবে না। কাজ করে বাচ্চা দুইটি মানুষ করবে। ছেলেমেয়ে দু’টিকে তার হাতে তুলে দিয়ে আবারো চলে যায় ঢাকায়। সেখানে কাজ করতে থাকে। তিনি জানান, আনুমানিক এক বছর আগে তাদের পার্শ্ববর্তী বাগডাঙ্গা গ্রামের মজিবর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মজিবর রহমানও ওই কারখানায় কাজ করতো। মজিবর তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। এতে তাসলিমা রাজি না থাকলেও একই এলাকার মানুষ হওয়ায় মাঝে মধ্যে কথা হতো।
পরে এক সময় তাসলিমা মজিবরের কথায় রাজি হন। ৭ মাস হয়েছে তারা দু’জন বিয়ে করেছে। তাসলিমার মা রাবেয়া খাতুন জানান, বিয়ের পর তারা প্রায়ই গোলমাল করতো। এক সময় তারা গ্রামে চলে আসে। স্বামী মজিবর রহমান তাকে বাড়িতে না রেখে নানা স্থানে লুকিয়ে রাখতো। এই অবস্থায় তিনি যোগাযোগ করে মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তাসলিমা কিছুদিন বাড়িতে থেকে আবারো ঢাকায় চলে যায়।
সেখানে আশুলিয়া এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেয়। আর মজিবর তার পিছু নিতে ওই এলাকার একটি দর্জির দোকানে কাজ নেন। দু’জন দুই জায়গায় বসবাস করতেন। তাসলিমা আক্তারের ফুফু শিউলী খাতুন জানান, মজিবর মাঝে মধ্যেই মোবাইল ফোনে তাসলিমাকে উত্ত্যক্ত করতো। নতুন করে সংসার করার প্রস্তাব দেন। ৩০ আগস্ট তাসলিমাকে নিয়ে নতুন বাসায় চলে যান। যাওয়ার সময় বলে যায় তার মোবাইল বন্ধ থাকবে। বেশি যোগাযোগ করার প্রয়োজন নেই। এরপর তিনি ঈদের ছুটিতে বাড়িতে চলে আসেন। আসার সময় চেষ্টা করেও তাসলিমার সন্ধান পাননি। তারা নতুন যে বাসা নিয়েছিল সেটাও চিনতে পারেননি। এখন তারা জানতে পারছেন তাসলিমাকে খুন করা হয়েছে। খুন করার পরিকল্পনা নিয়েই নতুন বাসায় নেয়া হয়েছে বলে শিউলী খাতুন জানান।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল জানিয়েছেন, ঘটনার পর তারা বিভিন্ন তথ্যের ভিক্তিতে ঝিনাইদহের বাগডাঙ্গা গ্রাম থেকে মুকুল নামের একজনকে আটক করেছে। তার মাধ্যমে তারা তাসলিমাকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। তার স্বামী মজিবর রহমান পলাতক। ধারণা করা যাচ্ছে, পারিবারিক কলহের কারণে তাসলিমাকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করে ড্রামে ভরে রাখা হয়েছিল।
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com