খুলনা বিভাগের অর্ধেক সড়ক বেহাল

প্রকাশিত: ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ৩০, ২০১৭

খুলনা বিভাগে অন্তত ৮শ’ ২০ কিলোমিটার মহাসড়ক বেহাল। অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে এসব সড়কের বেশির ভাগ স্থানে বিটুমিন উঠে গিয়ে বড় বড় খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঈদের ঘরমুখো যাত্রীদের যাতায়াত অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, বাৎসরিক বরাদ্দ থেকে ভাঙ্গাচোরা সড়কগুলো মেরামত করে আপাতত যান চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। ফলে মানুষের ভোগান্তি অনেকটা কমবে।

 

সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর খুলনা জোনের অধীনে ১২৭টি রুটে জাতীয়, জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে মোট ২ হাজার ৭৩৪ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাটে রয়েছে ৩৯৭ কিলোমিটার, খুলনায় ৩৮৫, সাতক্ষীরায় ২৫৩, চুয়াডাঙ্গায় ১৪১, যশোর ৩৫৬, ঝিনাইদহ ৩৯৮, কুষ্টিয়ায় ২৬১, মাগুরা ২৫১, মেহেরপুর ১৩৯ এবং নড়াইলে ১৫৩ কিলোমিটার। সকল পর্যায়ের এসব সড়কের অন্তত শতকরা ৪৫ ভাগ ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে বেহাল অবস্থা ধারন করেছে। তবে বেশি বেহাল সড়ক সাতক্ষীরা, যশোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, বাগেরহাট ও খুলনা জেলায়। যশোর-খুলনা, রূপসা-বাগেরহাট, খুলনা-মংলা, খুলনা-পাইকগাছা, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের অধিকাংশ স্থানে বন্যা ও টানা বৃষ্টিতে বিটুমিন ও খোয়া সরে যাওয়ায় সড়ক গুলোর চরম দূর-দশার সৃষ্টি হয়েছে।

 

জানা গেছে, ঈদের ঘরমুখো যাত্রীদের যাতায়াত নিশ্চিত করতে ২৯ আগষ্টের মধ্যে সকল সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের ঘোষণা দেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রীর ওই নির্দেশ প্রতিপালনে বর্তমানে খুলনা বিভাগের এসব বেহাল সড়কের খানাখন্দ ও গর্তে ইট ও বিটুমিন দিয়ে কোনোমতে জোড়াতালির মাধ্যমে সড়ক সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু জোড়াতালি দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। কারন ভারী বর্ষণে তা আবার উঠে সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে যানবাহন চলছে অনেকটা হেলেদুলে। দুর্ভোগ আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত চলাচল করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। পাশাপাশি বাড়ছে যাতায়াতের সময়ও। ফলে সড়কের এ ধরনের অবস্থা ঈদে বাড়ি ফেরা সাধারণ মানুষের অনেকটা দুশ্চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রূপসা-মংলা সড়কের দিগরাজ নাভানা কোম্পানি, ফয়লা বিমানবন্দর ও চেয়ারম্যানের মোড়সহ অনেক স্থানে বড় বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা, খুলনা-যশোর, রূপসা-বাগেরহাট-পিরোজপুর, রূপসা-মংলা সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বিটুমিন উঠে ছিটকে পড়ে চষা ক্ষেতে পরিণত হয়েছে। ওই সব জায়গায় বিটুমিন ও ইট দিয়ে আপাতত মেরামতের চেষ্টা করা হলেও বর্ষার দুই দিন না যেতে উঠে পূর্বেও মতো অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। অত্যন্ত ঝুুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।

 

মোঃ সাইফুল ইসলাম বকতিয়ার, শফিকুল ইসলাম, সৈকতসহ একাধিক যাত্রী জানান, সড়কগুলোর অবস্থা এখন অত্যন্ত ভয়াবহ। যানবাহনগুলো হেলেদুলে চলাচল করছে। প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। আর এতে অকালে অসংখ্য মানুষের অকাল প্রাণ যাচ্ছে। বিশেষ করে খুলনা-চুকনগর সড়ক আগা-গোড়া যানবাহন চলাচলের একদম অনুপযোগী। মানুষ নিত্যন্ত প্রয়োজনেই ওই সড়ক ব্যবহার করছে।

 

বাসের চালক তুলশী, ওয়াদুদ ও এরশাদ জানান, বেহাল সড়কের কারনে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগে হচ্ছে। ফলে অনেক যাত্রী জরুরী কাজ করতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়ছে।

 

সড়ক ও জনপথ বিভাগের খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ রুহুল আমিন বলেন, ভারি বর্ষণ, বন্যা ও ওভার লোড নিয়ে পন্যবাহী যানবাহন চলাচলের কারনে বিটুমিন উঠে গিয়ে সড়ক-মহাসড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে সকল সড়ক-মহাসড়ক বাৎসরিক বারাদ্দের টাকা দিয়ে আপাতত মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

তিনি জানান, ৩০/৪০ বছরের আগে নির্মাণ, সড়ক-মহাসড়কগুলোর গঠন প্রণালী ভালো না হওয়ায় এবং সড়ক গুলোর বাজার সংলগ্ন স্থানে কোন ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তাগুলো বৃষ্টি ও ভারী পণ্য বহনকারী গাড়ির চাপে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখন এসব মহাসড়ক চলাচলের উপযোগী রাখতে বিশেষ প্রকল্প নিতে হবে। পাশাপাশি দাতা সংস্থা দেশ গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে মহাসড়কগুলোর মান উন্নয়ন করে ভোগান্তি কমানো সম্ভব।

footer logo

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ