একজন কবি শিক্ষাবিদ প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক

প্রকাশিত: ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০১৮

একজন কবি শিক্ষাবিদ প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক

১৯২৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি (১০ ফাল্গুন) জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ঝিনাইদহ জেলার দুর্গাপুর গ্রামে পৈতৃক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তখন ঝিনাইদহ বৃহত্তর যশোর জেলায় ছিল। তিনি মায়ের প্রথম সন্তান না হলেও একদিক দিয়ে প্রথম, কারণ তাঁরও আগে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তাঁর মা। সে মেয়েটি আঁতুড়েই মারা যায়। প্রথম ও চতুর্থ অবস্থানে তাঁরা দুই ভাই, বাকি ছয় জন বোন।

 

এতসব দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চলতে থাকে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর লেখালেখি। কবিতা তাঁকে ছাত্রজীবন থেকেই টানত। স্কুলের আবৃত্তিতে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল নিয়মিত। দু-এক দিনের মধ্যে তিনি দীর্ঘ কবিতা মুখস্থ করে ফেলতেন। পরবর্তী সময়ে তিনি শেক্সপিয়রের ১৫৪টি সনেট অনুবাদ করেন। পাশাপাশি নিজের কবিতা লেখাও অব্যাহত রাখেন। তাঁর নিজের বিবেচনায়, তাঁর লেখা কবিতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখের দাবি রাখে একটি দীর্ঘ কবিতা, ‘ফালগুন-চৈত্রের কবিতা’। এই কবিতায় তিনি নিজেকে যে সম্পূর্ণতায়, যে নিবিড়তায় দেখতে পান, তেমন আর কোনো কবিতায় নয়। কেউ যদি তাঁকে প্রশ্ন করেন, কোন একটি কবিতা আপনার নিজের কাছে প্রিয়, তিনি সহজেই বলবেন, ‘ফালগুন-চৈত্রের কবিতা’। এটি আছে তাঁর ‘আসন্ন বাস্তিল’ গ্রন্থে

মৌরী তানিয়া

‘চতুর্থ শ্রেণির পর একটা বৃত্তি পরীক্ষা ছিল, এবং আমরা যারা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছিলাম, নির্দিষ্ট সময়ে সবাই বৃত্তি পরীক্ষা দিতে যাব নিকটবর্তী ঝিনেদা শহরে, সেভাবেই প্রস্তুত হচ্ছিলাম। নতুন ওস্তাদজির থাকার ব্যবস্থা হলো আমাদের বহির্বাটিতে, অর্থাত্ খানকায়। দাদাজান আমার পড়াশোনার ব্যাপারে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছেন, তার প্রমাণ পাওয়া গেল এই অভিনব ব্যবস্থায়, কারণ শমশের খান অবিলম্বে আমাকে নিয়ে পড়লেন। গণিতে তাঁর দক্ষতা ছিল, সেটা প্রমাণের জন্য তিনি আমাকেই বেছে নিলেন। পরীক্ষায় আমি তাঁর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। তাঁর আশা ছিল, গণিতে আমি একশ’র মধ্যে একশ’ই পাব। দেখা গেল, দুটি প্রশ্নে ভুল করেছি। এই ব্যর্থতায় আমি নিজে তেমন বিচলিত হইনি, কিন্তু আমার ওস্তাদজি কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। সেই দৃশ্য আমাকে বিচলিত করেছিল। ঝিনেদায় আমার চাচার বাসায় আমরা সবাই উঠেছিলাম, আমার চাচা, আমাকে নয়, আমার ওস্তাদজিকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন, আমি সে দৃশ্য ভুলিনি। ‘ওপরের এই কথাগুলো বলেছেন এদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। ছেলেবেলাতেই তাঁর ওস্তাদজি তাঁর প্রখর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়েছিলেন। আর তাই তিনি প্রত্যাশা করেছিলেন তিনি অঙ্কে একশতে একশই পাবেন। একশতে একশ না পাওয়ায় ওস্তাদজি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তবে ছেলেবেলায় ওস্তাদজির প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও পরবর্তী সময়ে তিনি একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ হিসেবে দেশবাসীর অনেক প্রত্যাশা পূরণ করেছিলেন। তিনি শুধু এদেশের অন্যতম শিক্ষাবিদই নন, তিনি একজন কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, সম্পাদক।

তাঁদের একান্নবর্তী পরিবারে পরিবারপ্রধান ছিলেন তাঁর দাদাজান। দাদী না থাকায় পরিবারে একটা শূন্যতা রয়েই গিয়েছিল। বাড়ির বড় বউ হিসেবে অনেকটা দায়িত্ব বর্তেছিল তাঁর মায়ের ওপর। অন্দরমহল পরিচালনার এই দায়িত্ব তাঁর মা ভাগ করে নিতেন তাঁর ফুফুর সঙ্গে। তাঁর বাবা থাকতেন কলকাতার একটি ভাড়া বাসায়। তিনি কলকাতার নর্মাল স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।

তিনি যে পাঠশালায় পড়াশোনা করেছেন সেটির প্রতিষ্ঠাতা তাঁর দাদাজান। তাঁদের বাড়ির বহিরাঙ্গনেই পাঠশালার ঘরটি ছিল। তাঁর বাবার যখন স্কুলে যাওয়ার বয়স হলো তখনই তাঁর দাদাজান একটি পাঠশালার প্রয়োজন অনুভব করেন এবং এই পাঠশালাটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর বাবা-চাচারা এখানেই পড়াশোনা করেন।

কলকাতার নর্মাল স্কুলে তাঁর বাবা ১৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন। এরপর কলকাতার বাইরে তাঁর পোস্টিং শুরু হয়। ফলে গ্রামের পাঠশালার পাঠ শেষ করে বাবার সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো শুরু হলো। চাকরিসূত্রে তাঁর বাবা যেখানে যান, বই খাতা নিয়ে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, তাঁর মা ও ভাইবোনরাও সেখানে যান। পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি তিনি পড়লেন বাঁকুড়া জেলা স্কুলে। এই স্কুলে পড়ার সময় স্কুলের ম্যাগাজিনের দুটি সংখ্যা বের হয়েছিল। প্রথমটিতে তাঁর কবিতা ‘প্রভাত’, দ্বিতীয়টিতে তাঁর প্রবন্ধ ‘যুদ্ধ’ ছাপানো হয়। দুটিতেই রচনার মূল কৃতিত্ব তাঁর বাবার, কারণ, কবিতার ওপর তিনি তাঁর ঘষা-মাজার কাজ যেভাবে করেছিলেন, তাতে শেষ পর্যন্ত সেটি আর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর রচনা বলে দাবি করা গেল না। আর প্রবন্ধটিও বলতে গেলে যৌথ রচনা, মূল কাঠামো তাঁর, আর পরিণত রূপ তাঁর বাবার। ম্যাগাজিনের সম্পাদনার দায়িত্বে যে শিক্ষকেরা ছিলেন, তাঁদের মনেও সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। এক বিকেলে খেলার মাঠ থেকে ডেকে নিয়ে তাঁরা তাঁকে সোজা জিজ্ঞেস করলেন, প্রবন্ধটি তাঁরই লেখা কি-না। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই হাঁ-সূচক জবাব দিয়ে পালিয়ে বাঁচলেন। কারণ এর সঙ্গে তাঁর বাবার সম্মান জড়িত ছিল।

বাঁকুড়ায় স্কুলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানও ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ব্যাপার। সেই অনুষ্ঠানেই তিনি প্রথম কবিতা আবৃত্তির সুযোগ পান, নজরুলের ‘শাতিল আরব’। যেমন কবিতায়, প্রবন্ধ রচনায়, তেমনি আবৃত্তিতেও তাঁর শিক্ষক ছিলেন তাঁর বাবা।

১৯৪০-৪১ সালে তাঁর বাবা আবার বদলি হলেন জলপাইগুঁড়ি। ১৯৪১ সালে জলপাইগুঁড়ি জেলা স্কুলে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হন জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেন যশোর জেলা স্কুলে। ১৯৪৫ সালে দিলেন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা। স্টার মার্কসসহ ১ম বিভাগ পেয়ে ভর্তি হলেন

কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে, আইএ ক্লাসে। তখন থাকতেন বউবাজার মোড়ে অবস্থিত টেইলর হোস্টেলে। ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে ভয়াবহ দাঙ্গা হলো কলকাতায়। অরক্ষিত হয়ে পড়লেন তাঁরা। তখনকার ভয়াবহতা ও অসহায়ত্বের কথা এখনো ভুলতে পারেন না তিনি। হোস্টেল ছেড়ে

কয়েকমাস নিরাশ্রয় জীবনযাপন শেষে মীর্জাপুর স্ট্রিটের মুসলমান ছাত্রদের কলেজ হোস্টেলে থাকলেন ৩ মাস।

আইএ পরীক্ষা দিলেন ১৯৪৭ সালে। লাভ করলেন প্রথম বিভাগ। দেশভাগের পর চলে এলেন ঢাকায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ অনার্স ক্লাসে ভর্তি হলেন। আর থাকতেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে।

১৯৫০ সালে বিএ অনার্স পরীক্ষায় ইংরেজি সাহিত্যের একমাত্র প্রথম শ্রেণিটি তিনিই লাভ করেছিলেন। ১৯৫১ সালের এমএ পরীক্ষায়ও একমাত্র প্রথম শ্রেণিটি তাঁর দখলে এল। এমএ পাস করার পর ১৯৫২ সালে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে প্রোগ্রাম সহকারী হিসেবে কাজ করলেন ৩-৪ মাস। ১৯৫১ সালেই বিয়ে করেন তিনি। ময়মনসিংহ শহরের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, প্রাক্তন এমএলএ আবদুল মজিদের কন্যা কায়সারকে। এই দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে।

১৯৫২ সালে সরকারি বৃত্তি নিয়ে অক্সফোর্ডে গেলেন। পড়লেন অনার্স কোর্স। ১৯৫৪ সালে সমুদ্রপথে ফিরে এলেন দেশে। ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা শুরু করলেন। ঢাকা কলেজে তাঁর নিযুক্তি ছিল সরাসরি প্রফেসর পদে অক্সফোর্ডের ডিগ্রির সুবাদে। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদানের পর পদোন্নতি পেয়ে বিভাগের রিডার ও বিভাগীয় প্রধান হলেন। ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিমন্ত্রণে দুই মাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত মুস্তাফা নূরউল ইসলামের সঙ্গে মিলে প্রকাশ করেন ত্রৈমাসিক ‘পূর্বমেঘ’। ১৯৬৭ সালে বাবা ফজলুর রহমান সিদ্দিকী মারা যান গ্রামের বাড়িতে। এ বছরই মিল্টনের বিখ্যাত গদ্যরচনা অ্যারিও প্যাজিটিকার অনুবাদ করেন তিনি। ১৯৭৪-৭৫ সালে

তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের খণ্ডকালীন পরিচালক।

১৯৭৩ সালে ভারতের আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে মিল্টনের মৃত্যুর ত্রিশতবার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে অংশ নেন। ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের রিগায় গিয়েছিলেন লেখক/কবি সম্মেলনে অংশ নিতে। সে সময় মস্কো, লেনিনগ্রাদ, তিবিলিসি, কিয়েভসহ অনেক শহরেই সফর করেছেন। ১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৪ সালে ৪ বছরের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। সেখানেই ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে পুনর্বার যোগ দেন। ১৯৮৪ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর, ১৯৯৫ সালের জানুয়ারির সময়টা ছিলেন বিশ্বভারতীর ভিজিটিং প্রফেসর। ২০০০ সালে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন, ২০০৩ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের একজন কর্মী।

এতসব দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি চলতে থাকে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর লেখালেখি। কবিতা তাঁকে ছাত্রজীবন থেকেই টানত। স্কুলের আবৃত্তিতে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল নিয়মিত। দু-এক দিনের মধ্যে তিনি দীর্ঘ কবিতা মুখস্থ করে ফেলতেন। পরবর্তী সময়ে তিনি শেক্সপিয়রের ১৫৪টি সনেট অনুবাদ করেন। পাশাপাশি নিজের কবিতা লেখাও অব্যাহত রাখেন। তাঁর নিজের বিবেচনায়, তাঁর লেখা কবিতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখের দাবি রাখে একটি দীর্ঘ কবিতা, ‘ফালগুন-চৈত্রের কবিতা’। এই কবিতায় তিনি নিজেকে যে সম্পূর্ণতায়, যে নিবিড়তায় দেখতে পান, তেমন আর কোনো কবিতায় নয়। কেউ যদি তাঁকে প্রশ্ন করেন, কোন একটি কবিতা আপনার নিজের কাছে প্রিয়, তিনি সহজেই বলবেন, ‘ফালগুন-চৈত্রের কবিতা’। এটি আছে তাঁর ‘আসন্ন বাস্তিল’ গ্রন্থে।

১৯৫০ সালের দিকে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী যখন অনার্স তৃতীয় বর্ষে, তখন আশরাফ সিদ্দিকী ও আবদুর রশীদ খানের সম্পাদনায় বের হয় ‘নতুন কবিতা’ নামে কবিতা সংকলন। ১২ বা ১৩ জন কবির কারো ৫টা, কারো ৬টা কবিতা স্থান পায় সে সংকলনে। প্রত্যেকে ৫০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে বইয়ের মুদ্রণব্যয় বহন করলেন। সে সংকলন অনেকের নজরে পড়ল। বিশেষ করে অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা তাঁদের সম্পর্কে উত্সাহী হয়ে উঠলেন। ওই সময় আবদুল গণি হাজারী ও মাহবুব জামাল জাহেদীর সম্পাদনায় ‘মুক্তি’ বলে একটি সাহিত্য পত্রিকা বেরিয়েছিল। এর পিছনে ছিলেন জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা। সেখানে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর কিছু কবিতা প্রকাশিত হয়।

যদিও অন্যের কবিতার অনুবাদ, তবু ‘শেক্সপীয়রের সনেট’ তিনি তাঁর সমগ্র কবি-কর্মেরই অংশ বলে মনে করেন। আর এই অনুবাদকর্মের মধ্য দিয়ে তিনি শেক্সপিয়রকে যেভাবে চিনেছেন, তাঁর মনের ও তাঁর কবিকর্মের যে ঘনিষ্ঠ পরিচয় পেয়েছেন, সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। কবিতা লেখা

ও ‘শেক্সপীয়রের সনেট’ অনুবাদের পাশাপাশি চলতে থাকে তাঁর প্রবন্ধ লেখার কাজ। বেশকিছু প্রবন্ধের বইও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর।

তাঁর প্রকাশিত বইগুলো হলো—১৯৭১ সালে অ্যারিও প্যাজেটিকা অনুবাদ, ভূমিকা, টিকা; ১৯৭৩ সালে স্যামসন অ্যাগনিমটিজ মিল্টন, কাব্যানুবাদ; ১৯৭৫ সালে হূদয়ে জনপদে, কবিতা; ১৯৭৬ সালে শব্দের সীমানা, প্রবন্ধ; ১৯৭৬ সালে মুহূর্তের কবিতা : ফররুখ আহমেদ-সম্পাদনা; ১৯৭৭ সালে শেক্সপীয়রের সনেট, ভূমিকা ও কাব্যানুবাদসহ; ১৯৭৮ সালে হে বন্য স্বপ্নেরা, ফররুখ আহমেদ-সম্পাদনা; ১৯৮৩ সালে Literature of Bangladesh and other essays; ১৯৮৪ সালে আমার দেশ আমার ভাষা, প্রবন্ধ সংকলন; ১৯৮৪ সালে চাঁদ ডুবে গেলে, কবিতা; ১৯৮৫ অনুবাদ, ভাষা শহীদ গ্রন্থমালা সিরিজ; ১৯৮৫ সালে দ্য টেম্পেস্ট শেক্সপীয়র, ভূমিকাসহ অনুবাদ; ১৯৮৬ সালে বাংলা প্রবন্ধ পরিচয়,সংকলক ও সম্পাদক; ১৯৮৮ সালে আসন্ন বাস্তিল, কবিতা; ১৯৮৯ সালে শান্তিনিকেতনে তিন মাস, জার্নাল; ১৯৯১ সালে বাঙালীর আত্মপরিচয়, প্রবন্ধ; ১৯৯৩ সালে বাংলা একাডেমি ইংলিশ-বেঙ্গলি ডিকশনারি, সম্পাদক; ১৯৯৪ সালে প্রবাসে প্রতিদিন, ভ্রমণ দিনলিপি; ১৯৯৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ছিলাম; ১৯৯৭ সালে Visions and revisions; ২০০০ সালে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা : সংকট ও সম্ভাবনা; ২০০১ সালে কবিতা সংগ্রহ; ২০০১ সালে Quest For a Civil Society, নির্বাচিত প্রবন্ধ; ২০০৩ সালে আমার চলার পথে, আত্মজীবনী; ২০০৪ সালে গ্রামের নাম খিদিরপুর, প্রবন্ধ।

বাংলা একাডেমির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে ’৭৩-পরবর্তী তাঁর কর্মজীবনের দ্বিতীয় পর্বে। একাত্তরেই তাঁর প্রথম বই, ‘মিল্টনের অ্যারিও প্যাজিটিকা’ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ড ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমির সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। ’৭৩-এ তাঁর দ্বিতীয়

মিল্টন-অনুবাদ, স্যামসন অ্যাগনিসটিজ প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। ছিয়াত্তর-সাতাত্তর-এ তাঁর অনূদিত শেক্সপীয়রের সনেট প্রকাশিত হতে থাকে একাডেমির পত্রিকা ‘উত্তরাধিকার’-এ। এরপর আশির দশকে একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর অনুবাদ, ভাষাশহীদ গ্রন্থমালা সিরিজে এবং তাঁর সম্পাদিত ‘বাংলা প্রবন্ধ পরিচয়’। তবে এই প্রকাশনার ধারায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বাংলা একাডেমি ইংলিশ-বেঙ্গলি ডিকশনারি। এই অভিধানটির সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য ছিলেন তিনি। এটি প্রকাশের সাথে সাথে আশাতীতভাবে সমাদৃত হলো এবং অল্পদিনের মধ্যে অভিধানটি বাংলা একাডেমির সফলতম প্রকাশনা হিসেবে স্বীকৃতি পেল।

১৯৭৭ সালে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী লাভ করেন আলাওল সাহিত্য পুরস্কার। ১৯৭৯ সালে কবিতার জন্য পান বাংলা একাডেমি পুরস্কার। ১৯৯০ সালে কাজী মাহবুবুল্লাহ বেগম জেবুন্নিসা ট্রাস্ট পুরস্কার পান। ১৯৯৮ সালে গ্রহণ করেন অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার। ২০১০ সালে তিনি অর্জন করেন স্বাধীনতা পুরস্কার।

১১ নভেম্বর ২০১৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন বহুগুণে গুণান্বিত এই ব্যক্তিত্ব।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ