বড় দুই দলেই অন্তর্দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত: ৪:০২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২২, ২০১৭

বড় দুই দলেই অন্তর্দ্বন্দ্ব

ঝিনাইদহ জেলার রাজনীতি এখন নির্বাচনমুখী। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে প্রভাব বিস্তার নিয়ে নেতাদের মধ্যে চলছে ঠাণ্ডা লড়াই। এ কারণে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছে। নেতাদের এই অন্তর্দ্বন্দ্ব আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছে নেতাকর্মীরা।

অন্যদিকে ঝিনাইদহে বিএনপির অবস্থান বেশ শক্ত হলেও এখনকার চিত্র একটু ভিন্ন। সংসদের বাইরে থাকা দলটির মধ্যে দীর্ঘদিন চাপা থাকা অন্তর্দ্বন্দ্ব নির্বাচন সামনে রেখে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। জেলা কমিটি গঠন নিয়ে দলটি প্রকাশ্যে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে।

জাতীয় পার্টির কমিটি থাকলেও সাংগঠনিকভাবে দলটি কোনো অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। তবু নেতৃত্ব নিয়ে দলে কোন্দল রয়েছে।

আওয়ামী লীগ : দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাইকে সভাপতি ও সাইদুল করিম মিন্টুকে সাধারণ সম্পাদক করে  কমিটি ঘোষণা করা হয়। যদিও সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন অধ্যাপক আবেদ আলী। আর সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য প্রার্থী ছিলেন আজিজুর রহমান ও আবদুর রশিদ। কমিটি ঘোষণার পর এক পক্ষের সমর্থকরা সম্মেলনস্থলের চেয়ার ভাঙচুর করে। সম্মেলনের পর ঢাকায় বসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়।

দলের নেতাকর্মীরা জানায়, নেতৃত্ব নিয়েই মূলত জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দানা বাঁধে। দলের একাধিক নেতা বলেছেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম অপু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাসের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, দলের মধ্যে এ গ্রুপিং থাকার কারণে সাধারণ নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছে। এমনকি এ দ্বন্দ্বের প্রভাব গত জেলা পরিষদ নির্বাচনেও পড়েছে। দ্বন্দ্ব নিরসন না হলে আগামী সংসদ নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আবদুল হাই দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামান না। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি জেলা সদরের দলীয় কোন্দলের ঊর্ধ্বে থেকে সবার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নিজের আসন শৈলকুপার রাজনীতি নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। ফলে জেলা সদরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন দলের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। দলীয় নেতৃত্বের ভারসাম্য না থাকায় দলের এক অংশের নেতাকর্মীরা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ।

জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে ছয় উপজেলায়ও দলে বিভক্তি রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের অভিযোগ, এ কোন্দল নিরসনের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের কোনো উদ্যোগ নেই।

ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ বলেন, তাঁর আসনের মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। ২০০৪ সালে মহেশপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। এই দুজন হলেন যথাক্রমে সাজ্জাতুজ জুম্মা চৌধুরী ও ময়জুদ্দীন হামিদ। এক যুগের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়া চলছে দল। ফলে এ উপজেলায় আওয়ামী লীগ জোরালোভাবে সংগঠিত হতে পারেনি। তিনি দাবি করে বলেন, ‘আমি একাধিকবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে করা সম্ভব হয়নি।’

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার। তিনি বলেন, ‘গত উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যাঁরা দলীয় মনোনয়ন পাননি এবং পরাজিত হয়েছেন তাঁরা দলের প্রতি নাখোশ। তাঁরা একটি ছোট গ্রুপ করে দলকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন। এটা দলের জন্য বড় কোনো সমস্যা নয়। এটাকে আমি দলের গ্রুপিং মনে করি না।’

এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। নেতৃত্ব নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে।’ তিনি দাবি করেন, দলের এক শ্রেণির নেতা জামায়াত-বিএনপির লোকজন দলে ভিড়িয়ে দলকে বিভক্ত করার চেষ্ট করছেন। তাঁদের চক্রান্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে হামলা চালিয়ে দলের ত্যাগী নেতা আনন্দ মোহন ঘোষকে হত্যা করা হয়।

তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু দলে গ্রুপিং বা দ্বন্দ্ব থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব নিয়ে নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। এটাকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বা গ্রুপিং বলা যায় না।’ জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয় রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলো আমরা প্রায় শেষ করেছি। ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থকরা এখন সুসংগঠিত।’

জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম অপুও দাবি করেন, দলে কোনো গ্রুপিং নেই। তিনি বলেন, ‘নেতৃত্ব নিয়ে নেতাদের মধ্যে একটু দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। এটাকে গ্রুপিং বলা যায় না।’

এদিকে জেলার চারটি সংসদীয় আসনেই এবার আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুল হাই, বিশ্বাস বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম দুলাল, প্রিয়াংকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেন্দ্রীয় আওয়ামী সংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান সজল, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পারভীন জামান কল্পনা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক নায়েব আলী জোয়ার্দ্দার। তাঁরা এলাকায় তাঁদের ছবিসংবলিত পোস্টার টানিয়ে ভোটারদের ঈদ শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুণ্ডু) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম অপু, সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু ও গত নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য আওয়ামী লীগে যোগদানকারী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সুমি মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাঁরা আলোচনায় আছেন তাঁরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য মো. নবী নেওয়াজ, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চল, মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ময়জুদ্দীন হামিদ, সাবেক সংসদ সদস্য ময়নুদ্দীন নিয়াজী, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রীতি গ্রুপের চেয়ারম্যার সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পারভিন তালুকদার মায়া, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহেশপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ এবং কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুন নেছা মিকি।

সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ বলেন, ‘অবশ্যই দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। নেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব।’

সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চল বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়ন চাইব। নেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব।’

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম আনার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান ও কালীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু মনোনয়ন প্রত্যাশায় গণসংযোগ করছেন।

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। নেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচন অবশ্যই করব।’

আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। নেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে অংশ নেব।’

বিএনপি : প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীন দলের চাপ এবং দলে নেতৃত্বের লড়াইয়ের কারণে বিএনপি আর আগের মতো শক্ত অবস্থানে নেই। জেলা বিএনপির কমিটি গঠন ও দলের নেতৃত্ব নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। গত বছর ৯ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমানকে সভাপতি, এস এম মশিউর রহমানকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও আব্দুল মালেককে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি করার ক্ষেত্রে পদ নিয়ে দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। প্রায় এক বছর পর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্র পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি অনুমোদন করে। কমিটিতে দলের ত্যাগী নেতাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি এমন অভিযোগ ওঠায় দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে দেখা দেয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ অভিযোগ করেন, ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) সংসদীয় এলাকার কোনো নেতাকে জেলা কমিটিতে রাখা হয়নি। তিনি ১৭ জন নেতার নামের একটি তালিকা করে দলের মহাসচিবের কাছে দিয়েছেন, যাঁদের জেলা কমিটিতে রাখার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি অনুযায়ী জেলা কমিটিতে ওই ১৭ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সেটা মানতে রাজি নয় মসিউর রহমানের নেতৃত্বাধীন জেলা কমিটি। সে কারণে দ্বন্দ্ব আরো তীব্র আকার ধারণ করে। গত ৩ মে স্থানীয় ডা. কে আহাম্মেদ পৌর কমিউনিটি সেন্টারে বিএনপির প্রতিনিধিসভা আহ্বান করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন। ওই প্রতিনিধিসভায় ওই ১৭ জনকে ডাকা হয়নি। সভাস্থলে তাঁদের ঢুকতেও বাধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে আসাদুজ্জামান আসাদের সমর্থক নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিনিধিসভায় হামলা চালায় এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে। পণ্ড হয়ে যায় প্রতিনিধিসভা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাভলুও এখন জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি জেলা কমিটির পদবঞ্চিত কিছু নেতাকে সংগঠিত করে মসিউর রহমানের প্রতিপক্ষ হিসেবে একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উপজেলা পর্যায়ে মসিউর-বিরোধী নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে কমিটি করার চেষ্টা করছেন তিনি। ইতিমধ্যে ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় আহ্বায়ক কমিটি করেছেন বলে লাভলু জানান।

তবে মসিউর রহমানপন্থীরা বলছে, শত অত্যাচার-নির্যাতনের মধ্যেও ঝিনাইদহে মসিউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি যথেষ্ট সংগঠিত। দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী মসিউর রহমানের সঙ্গে রয়েছে।

অন্যদিকে মসিউর-বিরোধীদের অভিযোগ, এই সাবেক সংসদ সদস্য এককভাবে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে কুক্ষিগত করে রেখেছেন। ফলে ঝিনাইদহে কোনো দক্ষ নেতা তৈরি হচ্ছে না। নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নানাভাবে অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হলেও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে তারা দলের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না।

উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতার অভিযোগ, প্রতিটি উপজেলায় দল দ্বিধাবিভক্ত। দলের নেতৃত্ব নিয়েই মূলত এই গ্রুপিং সৃষ্টি হয়েছে। জেলা নেতৃত্বের পদক্ষেপের অভাবে গ্রুপিং নিরসন হচ্ছে না।

জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমান দলের মধ্যে গ্রুপিং থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঝিনাইদহে বিএনপি ক্ষমতাসীন দলের অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে টিকে আছে। এখানে বিএনপির ভিত সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্ত। দু-একজন ষড়যন্ত্রকারী ক্ষমতাসীনদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে বিএনপিকে দ্বিধাবিভক্ত করতে চায়। তাদের আশা কখনো সফল হবে না।’

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর রবিউল ইসলাম লাভলু বলেন, ‘সরকারি দলের অত্যাচার-নির্যাতনে বিএনপির নেতাকর্মীরা আজ দিশাহারা। ভেঙে পড়েছে দলের চেইন অব কমান্ড। দলকে কুক্ষিগত ও দুর্বল নেতৃত্বের প্রতি দলের নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। ফলে দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে কোন্দল-বিভক্তি। দলকে সংগঠিত করার চেষ্ট করছি।’

এদিকে ঝিনাইদহের চারটি সংসদীয় আসনেই বিএনপির সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থী ভোটারদের কাছে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে শুরু করেছেন।

ঝিনাইদহ-১ (শৈলকুপা) আসনে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা শাখার সহসভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওহাব, দলের খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু ও কেন্দ্রীয় মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ আলোচনায় রয়েছেন।

ঝিনাইদহ-২ (সদর-হরিণাকুণ্ডু) আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মসিউর রহমান, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মীর রবিউল ইসলাম লাভলু ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ মজিদ।

মজিদ জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমানের ভাই। তিনি বলেন, সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মসিউর রহমান যদি প্রার্থী হতে না পারেন তবে তিনি এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন।

ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনে একাধিকবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত শহিদুল ইসলামের ছেলে মহেশপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রনি, দলের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিবিষয়ক সহসম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সহসম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুলের নাম আলোচনায় রয়েছে।

মেহেদী হাসান রনি বলেন, ‘আমার বাবা শহিদুল ইসলাম দলের জন্য নিবেদিত ছিলেন। মহেশপুর বিএনপিকে সংগঠিত করেছিলেন তিনি। দল নির্বাচনে অংশ নিলে আমি মনোনয়ন চাইব। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেব।’

তবে বিএনপি-জামায়াত জোটগতভাবে নির্বাচন হলে এ আসনে জামায়াতের শুরা সদস্য মতিয়ার রহমান এ আসনের প্রার্থী হতে পারেন।

ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুজ্জামান বেল্টু, দলের অন্য অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ।

জাতীয় পার্টি : ঝিনাইদহ-১ আসনে জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় নেত্রী মনিকা আলম এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এ আসনে তিনিই দলের সম্ভাব্য প্রার্থী। ঝিনাইদহ-২ আসনে প্রার্থী হতে পারেন দলের জেলা কমিটির সভাপতি ড. এম হারুন অর রশিদ। ঝিনাইদহ-৩ আসনে গণসংযোগ করছেন আব্দুর রহমান।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ