ঢাকা ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০১৭
জীবনের ঝুঁকি আর ঝাঁকুনি সহ্য করেই ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১২ হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
ক্যাম্পাসে আসার জন্য কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ শহর থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত পাড়ি দিতে হয় ৪৬ কিলোমিটার খানাখন্দেপূর্ণ রাস্তা। খানাখন্দপূর্ণ এই রাস্তা পাড়ি দিতে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি প্রতিদিন সময় নষ্ট হচ্ছে এক ঘন্টারও বেশি। এদিকে এ ভাঙা রাস্তার কারণে প্রায় প্রতিনিয়তই নষ্ট হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন। এতে আর্থিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কুষ্টিয়া শহরের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার এবং ঝিনাইদহ শহরের দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ পৌঁছাতে সময় লাগে যথাক্রমে ৪৫ মিনিট ও ৩৫ মিনিট। ভাঙা রাস্তার কারণে এখন কুষ্টিয়া পৌছাতে সোয়া ঘন্টারও বেশি এবং ঝিনাইদহ পৌঁছাতে প্রায় ৫০ মিনিট সময় লাগে। একজন শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসে আসা যাওয়ার জন্য প্রতিদিন প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা সময় পথেই নষ্ট হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৪ হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায দশ হাজার শিক্ষার্থী কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহের বিভিন্ন মেসে অবস্থান করে। এর মধ্যে কুষ্টিয়া থেকে প্রতিদিন ৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। বাকি ৪ হাজার শিক্ষার্থী আসে শৈলকুপা এবং ঝিনাইদহ থেকে। এছাড়াও ক্যাম্পাসের প্রায় দুই হাজার শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করে। আর এদের ক্যাম্পাসে আনা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি রুটে মোট ৪৩ টি বাস ব্যবহার করা হয়। যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি নিজস্ব বাস। বাকি ৩২টি কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ বাস মালিক সমিতির কাছ থেকে ভাড়া করা।
কুষ্টিয়া থেকে আগত শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর গেট থেকে চৌড়হাস পর্যন্ত মোট ৩ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই করুণ। চৌড়হাস থেকে বটতৈল পর্যন্ত রাস্তা একটু মেরামত করা হলেও আবারো পুরোনো চেহারায় ফিরে এসেছে। তবে বিত্তিপাড়া থেকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা। এর মধ্যে বিত্তিপাড়া থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই ছোট বড় গর্তে ভরপুর। অন্যদিকে ঝিনাইদহ রুটেরও একই অবস্থা। ক্যাম্পাস থেকে মদনডঙ্গা হয়ে চড়িয়া বিল পর্যন্ত মোট ৮ কিলোমিটার রাস্তা খানাখন্দে ভরপুর। চড়িয়া বিল বাজার থেকে গাড়াগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তা একটু ভালো হলেও গাড়াগঞ্জ থেকে চাঁদপুর মোড় পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই বেহাল। দুই শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে শিক্ষার্থীদের মনে সব সময় আতঙ্ক বিরাজ করে। রাস্তার মাঝে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের ফলে যেকেনো বাস উল্টে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। মাঝেই মাঝেই রাস্তা খারাপের কারণে পথিমধ্যে বাস নষ্ট হয়ে সময়মতো ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিতে পাওে না শিক্ষার্থীরা।
কুষ্টিয়া থেকে নিয়মিত ক্যাম্পাসে যাতায়াতকারী ইংরেজি বিভাগের ¯œাতোকত্তোর বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘ভাঙাচোরা রাস্তায় জীবনের ঝুঁকি শারীরিক কষ্ট আর সময়ের অপচয়। এ রাস্তায় প্রতিনিয়ত যাতায়াতের কারণে প্রায়ই শরীর খারাপ থাকে। কিন্তু কারো যেন কিছুই করার নেই।’ ঝিনাইদহ থেকে আসা লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ সাকিব বলেন, ‘ঝিনাইদহ থেকে ক্যাম্পাসের ২২ কিলোমিটারের রাস্তার বেশিরভাগ খানাখন্দে ভরা। ক্যাম্পাসের গাড়িতে আসার সময় আমাদের দুর্ঘটনার ভয় থাকে। মাঝে মাঝে গাড়ি হঠাৎ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস পরীক্ষায় উপস্থিত হতে পারি না।’
এদিকে রাস্তার বেহাল দশার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ির ফিটনেস নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন অফিস। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো গাড়ির সাথে সাথে নতুন গাড়ি গুলোও বিকল হয়ে যাচ্ছে। খানাখন্দযুক্ত রাস্তার কারণে প্রতিদিন ট্রিপ শেষে গাড়ি রিপিয়ার করতে হয় বলে জানান তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস চালক হাসমত জানান, ‘কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ রুটের ৪৬ কিলোমিটার রাস্তার অধিকাংশ জায়গায় খানাখন্দের কারণে গাড়ি চালাতে আমাদের খুবই সমস্যা হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ রুটের ৪৬ কিলোমিটার রাস্তার পরিস্থিতি অত্যান্ত নাজুক। খারাপ রাস্তার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি প্রতিনিয়ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।”
কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দার বলেন, রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। তবে কুষ্টিয়া খুলনা মহাসড়কে যানবাহনের চাপ একটু বেশি থাকায় অল্প দিনেই রাস্তা আবার খারাপ হয়ে যায়। তার মাঝে আবার ভারী বৃষ্টি হওয়ায় সংস্কারের ২০ দিনের মাথায় আবার আগের অবস্থায় চলে আসে। তাই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে রাস্তার মেরামত করলে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ বছর ঠিকঠাক মত চলবে। ইতমধ্যে আমরা সবার সাথে কথা বলেছি আশা করি আমরা খুব তাড়াতাড়ি এর ফল পাবো।
ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, রাস্তা মেরামতের জন্য একটি টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান। আগামী ডিসেম্বরে এর ওয়ার্ক অর্ডার হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, সমাবর্তন ও রাষ্ট্রপতির আগমনের কথা জানিয়ে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ প্রশাসনকে রাস্তা মেরামতের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত রাস্তা মেরামতে তারা পদক্ষেপ নিবে।
Design and developed by zahidit.com