আবাসন সংকটে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

প্রকাশিত: ২:৩৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০১৭

আবাসন সংকটে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল

১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার ও ঝিনাইদহ থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে কুষ্ঠিয়ার শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ৩৫৭ শিক্ষক ও নিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ১৪ হাজার। এর বাইরেও এমফিল-পিএইচডির কয়েক হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। ছাড়া কর্মকর্তা ৪০০, সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারী ৪১২ জন। নির্মাণাধীন ১টি হল সহ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের ৪টি ও ছাত্রীদের ৩টি হলে মোট আসন সংখ্যা মাত্র ২৭৭৫টি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর চলছে আবাসন সংকট আর বাইরে ক্যাম্পাসের আশেপাশে নেই শিক্ষাপোযোগি পরিবেশ। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ শহরে থাকতে হয়।

এদিকে ক্যাম্পাস থেকে মূল শহরে যাওয়া রাস্তাও খানা-খন্দলে ভরা। তাদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহনই প্রধান নির্ভরতা। তবে এ বিপুলসংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে পরিবহন সেবা দেওয়ার মতো নিজস্ব গাড়ি নেই বিশ্ববিদ্যালয়টির। ফলে ভাড়া গাড়ি দিয়ে এ চাহিদা মেটাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থানীয় মালিক সমিতির কাছে চুক্তিবদ্ধ। কিন্তু চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হচ্ছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি। ফলে বেহাল রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়িতে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে বৃত্তিপাড়া নামক স্থানে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয় দুই বছরের জন্য চুক্তি বদ্ধ হয় ঝিনাইদহের ‘সময় এন্টারপ্রাইজ’র সঙ্গে। পরিবহনটির মালিক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। তার দেওয়া গাড়ির অধিকাংশই ফিটনেসবিহীন বলে অভিযোগ রয়েছে। আগামী বছর ৩১ মে এ চুক্তি শেষ হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন অফিসে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বহন করার জন্য বাস আছে মোট ৪৭টি। এর মধ্যে নিজস্ব মাত্র ১৬টি। এ ১৬টির মধ্যে আবার সচল রয়েছে মাত্র ১১টি। ভাড়ায় চালিত ৩১টি বাসের মধ্য ১৫টি কুষ্টিয়া সড়কে, ১১টি ঝিনাইদহ ও ৫টি শৈলকুপা সড়কে চলাচল করে। স্থানীয় মালিক সমিতি তার ক্ষমতাবলে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সড়কে এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালাচ্ছে। লক্কড়ঝক্কড় মার্কা এসব গাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি থাকলেও তাদের ক্ষমতা বলে বিআরটিসির কোন গাড়ি ঝিনাইদহ সড়কে ঢুকতে দেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক মোরশেদ হাবিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন ব্যবস্থা স্থানীয় মালিক সমিতির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ভাড়ায় চালিত গাড়ির ড্রাইভাররা শিক্ষার্থীদের ওভারটেক করে প্রতিনিয়ত বাইরের পেসেঞ্জার তুলে থাকেন যা সম্পূর্ন নিয়ম বর্হিভূত। এছাড়া মালিক সমিতি শিক্ষার্থীদের বহনের জন্য যে গাড়ি দিচ্ছে তার অধিকাংশ ফিটনেসবিহীন।

সঠিক পরিকল্পনার কারণে প্রশাসনই আবাসন সংকট জিইয়ের রাখছে দাবি করে ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি রেজওয়ান আহমদ বলেন, সেশন জটের ফলে শিক্ষার্থী জট বেড়ে গেলে প্রশাসন হল তৈরি উদ্যোগ নেয়। তা তিন-চার তলার বেশি না। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কারণে শহরে থাকতে চাইলেও পরিবহনের কারণে তা পারছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পরিবহন অধিদফতর ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য রিন্ডোরিংয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটি হয়ে গেলে আশা করি এ সমস্যাটি আর থাকবে না।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষাথী মুজাহিদুল আলম বলেন, ক্যাম্পাস থেকে দুই শহরে (কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ) যাতায়াতের রাস্তার অধিকাংশ জায়গা খানা খন্দলে ভরা। অনেক সময় রাস্তার মাঝখানে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এসময় আমাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিবহন সংকট আছে তা বর্তমান প্রশাসনের আমলে অনেক খানি নিরসন হয়েছে। সামনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন ব্যবস্থা যাতে আরও বেশি স্বনির্ভর হয় সে জন্য নিজস্ব গাড়ি ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর ক্যাম্পাসে যদি কোন আনফিট গাড়ি থাকে তাহলে আমরা দেখা মাত্রই তা বাতিল করবো। বেহাল রাস্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে রাস্তা সংস্কারের জন্য আমরা দুই জেলার প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুত এ ব্যাপারে তারা উদ্যোগ গ্রহন করবেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ