ঢাকা ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৩১ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০১৮
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। এটি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহরের কোলাহল মুক্ত নিরিবিলি পরিবেশ শান্তিডাঙ্গার দুলালপুরে অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি।
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রোদে মানুষ আর পশু পাখির যখন কাহিল অবস্থা, ঠিক তখনই বিচিত্র সাজে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতিতে ফুটছে কৃষ্ণচূড়া ফুল। যেন কৃষ্ণচূড়ার রঙ্গিন রঙে মেতেছে পুরো ক্যাম্পাস। আর কৃষ্ণচূড়া ফোটা মানেই প্রকৃতি বদলে যাওয়া। প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়ার উপস্থিতি এত প্রবল যে সব রং কে ম্লান করে কৃষ্ণচূড়া জেগে ওঠে অম্লান রং ও রূপে।
কৃষ্ণচূড়ার রং এ ক্যাম্পাসের সাথে রাঙিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তরুণ-তরুণী ও প্রেমিক-প্রেমিকাদের মন। সর্বদাই কৃষ্ণচূড়া যেন তাদেরকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে এই বলে যে ‘তোমার মাথার খোপায় ও প্রেমিকাকে উপহার দিতে আমাকে নাও’। কৃষ্ণচূড়ার ডাকে সাড়া দিয়ে যেন তরুণরা ছুটছে কৃষ্ণচূড়া তলায় তার প্রেমিকাকে একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া উপহার দেওয়ার জন্য।
কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের পাশেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, আর ফটকের সামনেই রয়েছে এক বিশাল কৃষ্ণচূড়ার গাছ, যেটি মনে হয় পুরো ক্যাম্পাসকে ঢেকে রেখেছে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অসংখ্য কৃষ্ণচূড়া গাছ। কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটতে শুরু করায় কৃষ্ণচূড়া গাছ খুঁজে বের করতে হয়না। মাথা তুলে তাকালেই চোখে পড়ে কৃষ্ণচূড়ার রঙ্গিন ফুল। অনেক দূর থেকে মনে হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রঙ্গিন প্রজাপতির মেলা বসেছে।
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ২২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে নামলেই কৃষ্ণচূড়ার রঙ্গিলা ভাব দেখে দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তিটা যেন নিমিষেই হাওয়া হয়ে যায়। শুধু প্রধান ফটকে নয় কৃষ্ণচূড়ার বদৌলতে পুরো ক্যাম্পাসে এখন লাল রঙের রঙ্গিন আলপনা অঙ্কন করে দিচ্ছে। বিশেষ করে টিএসসিসির পূর্ব গেট ও পশ্চিম পাশে, মমতাজ ভবন, বিজ্ঞান ভবনের সামনে, বিশ্ববিদ্যালয় থানা গেট, জিমনেসিয়ামের সামনে, বঙ্গবন্ধু হলের সামনে, বেগম ফজিলাতুন্নেছা, লালন শাহ হলের পূর্ব পাশ দিয়ে গেলে কৃষ্ণচূড়ার লালে সত্যিই যেন মন রঙ্গিন হয়ে যায়।
ক্যাম্পাসের প্রকৃতির সাথে আকাশের নীলও যেন কৃষ্ণচূড়ার লালে রংধনু তৈরি করে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দূরদূরান্ত থেকেও দর্শনার্থীরা আসে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। প্রেমিক প্রেমিকা যুগলও কৃষ্ণচূড়ার রঙে নিজেদের মন রাঙ্গিয়ে নিতে আসে কৃষ্ণচূড়ার ছায়ায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহসান নীম, আবু হুরাইরা, আল কাওসার আনন্দ প্রকাশ করে জানান, ‘কৃষ্ণচূড়া ফুটার সাথে সাথে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষ্ণচূড়ার রং দিয়ে ক্যাম্পাস সাজতে শুরু করেছে।’ এছাড়া ক্যাম্পাসের বিকালের পরিবেশ না দেখলে বোঝা যাবে না এটা ক্যাম্পাস না উদ্যান।
কৃষ্ণচূড়া নিয়ে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মনিকা খাতুনের লেখা একটি কবিতাংশ…
তুমি দিবে বলে এনে ছিলে কৃষ্ণচূড়া ফুল
না নিয়ে চলে যাওয়াই ছিল মোর ভুল
তোমায় নিয়ে কত স্বপ্ন আজ কোথাও হারায়
পুরোনো দিনের স্মৃতি আজও মোরে কাঁদায়।
কিন্তু এই লাল রঙের ফুলটির নাম কৃষ্ণচূড়া না হয়ে অন্য কোন নাম হল না কেন এই প্রশ্ন অনেকের মাথায় আসে। আবার অনেকেই মনে করেন রাধাকৃষ্ণের নামে কৃষ্ণচূড়া ফুলের নামকরণ হয়েছে। শ্রীমতী রাধা শ্রীকৃষ্ণকে ভালবেসে এই ফুল উপহার দিয়েছিলেন। রাধাকৃষ্ণের প্রেমের আখ্যান হিসেবে এই ফুলকে কৃষ্ণচূড়া নামকরণ করা হয়েছে। ধারণা করা হয় কৃষ্ণের মাথার চুলের-চূড়া বাঁধার ধরণ থেকেই এই নাম হতে পারে।
এদিকে প্রধান ফটকের দৃষ্টিনন্দন বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছটিকে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন বারবার অঙ্গহানি করার কারণে গাছটির শাখা-প্রশাখা ও ফুল দিনদিন কমে যাচ্ছে। এতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, বিদ্যুৎ বিভাগ কৃষ্ণচূড়া গাছটির অঙ্গহানি না করে সেখানে যেন কভার লাগানো বিদ্যুতের তারের ব্যবস্থা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কৃষ্ণচূড়ার পাশাপাশি যে সব গাছ ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং ছায়াদান করে সে সব গাছ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে লাগানোর পরিকল্পনা আছে। ইতিমধ্যে আমরা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। বর্ষার মৌসুম এলে গাছ লাগানো শুরু করবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত একটি ক্যাম্পাস। শুধু বসন্তে নয় সব ঋতুতে এখানে উৎসবের আমেজ থাকে। আর কৃষ্ণচূড়া ফুল যেন সবুজের সমাহরে আকাশের রঙ্গিন সূর্য।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক ক্ষুদ্র লীলাভূমি। প্রকৃতির এই প্রাণ স্পন্দন আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতিতেও সঞ্চারিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
Design and developed by zahidit.com