ঢাকা ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
এইচ,এম ইমরান, ঝিনাইদহ :
ঝিনাইদহের শৈলকুপার হাটফাজিলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসহ ৫ শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার দুপুরে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস রুমে। এ ঘটনায় আহত শিক্ষকরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে লজ্জায় বাড়ীতেই অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপানন্দ কুমার মন্ডল, সহকারী শিক্ষক শ্যামল বিশ্বাস, আজিজুল ইসলাম, উত্তম কুমার অধিকারী ও আবুল বাশার। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের আয়া রাশিদাকেও এই সভাপতি লাঞ্ছিত করেন বলে জানা গেছে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, তোফাজ্জেল হোসেন বছর দেড়েক হলো হাটফাজিলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই দায়িত্বে অবহেলা, বিদ্যালয়ের অর্থলোপাট, শিক্ষকদের সাথে খারাপ আচরণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
লাঞ্ছিত শিক্ষক ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানায়, সোমবার দুপুরে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন প্রতিদিনের মতো আজও রাগান্বিত অবস্থায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। এরপর মিটিংএর কথা বলে প্রধান শিক্ষকের অফিস রুমে সকল শিক্ষকদের ডেকে পাঠায়। সভাপতির ডাকে সকল শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের রুমে হাজির হন। সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন অন্যান্য দিনের মতো আজও শিক্ষকদের কাছে হাত খরচের টাকা দাবী করেন। কিন্তু আজ টাকার পরিমান বেশী হওয়ায় শিক্ষকরা দিতে অপারগা প্রকাশ করেন। মুহুর্তেই সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন রেগে গিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকদের চর থাপ্পর, লাথি ঘুষি ও ঘাড়ে ধাক্কা মেরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। হঠাৎ কোমর থেকে ছুরি বের করে শিক্ষকদের হত্যার হুমকি দিয়ে ঘটনার বিষয়ে মুখ না খুলতে হুমকি দেয়। এ ঘটনায় স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা ভয়ে দ্বিক-বিদ্বিক ছুটাছুটি শুরু করে। এসময় সভাপতি জোর পূর্বক প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে একটি ব্লাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পরে জনতা ব্যাংক হাটফাজিলপুর শাখা থেকে বিদ্যালয়ের একাউন্ট ব্যালেন্স জেনে টাকার অংক বসিয়ে তা উত্তোলন করেছে বলে জানা গেছে। তবে টাকার পরিমান ৩০ হাজার না ১৮ হাজার সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক উপানন্দ কুমার মন্ডলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ভয়ে মুখ খোলেননি। কাতর কণ্ঠে বলেন অন্য শিক্ষকদের কাছে ও আশপাশের লোকের কাছে শোনেন, সব জানতে পারবেন। যদি আমি ঘটনার বিষয়ে মুখ খুলি তাহলে বোঝেনই তো হিন্দু মানুষ বলে কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক বলেন, তোফাজ্জেল হোসেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার পর থেকেই শিক্ষকদের জিম্মি করে সকল অর্থ লোপাট করে চলেছে। তিনি বেশীরভাগ সময়ই নেশাগ্রস্থ্য হয়ে কোমরে ছুরি নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন। তাই ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করে না।
তবে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জেল হোসেন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, শিক্ষকরাই সকল টাকা পয়সা খেয়ে ফেলে। ঠিক মতো ক্লাশ করায় না। তাই শিক্ষকদের একটু বকাঝকা ও শাসন করেছি।
শিক্ষকদের লাঞ্ছিতের ঘটনার সুষ্ঠ বিচার না হলে ক্লাশ বর্জন, অনশন ধর্মঘট ও মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচীর হুশিয়ারি দেয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উসমান গনি জানান, এইমাত্রই ঘটনাটি শুনলাম। শিক্ষক লাঞ্ছিত করার মতো ঘটনা খুবই লজ্জাজনক। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Design and developed by zahidit.com