ঢাকা ২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:০৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০১৭
শহুরে সময়েই যেখানে নানা রকম অপূর্ণতা সে জায়গায় দাঁড়িয়ে মফস্বল জেলা শহরের কলেজ হওয়ায় সরকারি কেসি কলেজ ক্যাম্পাসে চোখে পড়ার মতো অনেক কিছুই ছিলো না। ছিলোনা সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডও। অথচ বারো হাজারের মতো বিশাল সংখ্যার শিক্ষার্থীর শিক্ষাঙ্গণ সরকারি কেসি কলেজ। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড শূন্য ক্যাম্পাস যেনো চর্চা আর আনন্দহীন নির্জীব হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে ছিলো তার দেহ নিয়ে। অপর দিকে প্রতিক্রিয়াশীলদের বাড় বাড়ন্ত হয়ে ওঠা মাথা গুলো সকল ইতিবাচক কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে শুরু করেছিলো সে সময়।
২০০৬-০৭ শিক্ষা বর্ষের বাংলা বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী একই সাথে বিতার্কিক তরুণ লেখক সাবিক মোহাম্মদ আল হাসান তার সহপাঠীদের সাথে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পসে দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে উৎসাহী বন্ধুদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন কথন সাংস্কৃতিক সংসদ-কসাস। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সোহাগ কুমার বিশ্বাস, বাবুল হাসান, মিতালী বিশ্বাস, নন্দিতা বিশ্বাস, সামসুল করিম লিপু, আল ইমরান, মোঃ লিটন, আকিজ জাবেদ ও সোনিয়া পারভীন মুন্নি জুড়ে গিয়েছিলেন সে যাত্রা পথে। সংগঠনের নাম ও পরিকল্পার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন তৎকালীন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, লেখক ড. কামরুল হাসান।
২০০৮ সালের ২৩শে জুলাই আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। এক দশক সময় ধরে কলেজ ক্যাম্পাস সহ জেলা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় সক্রিয় কর্মকান্ড চলছে এখন। দীর্ঘ এ চলার পথে অজস্র সমস্যার ঝড় বয়ে গেছে উপর দিয়ে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি সাকিব মোহাম্মদ আল হাসান ক্যাম্পাসে মাদক, ইভটিজারদের বিরুদ্ধে কথা বলায় সাংস্কৃতিক বিরোধী সন্ত্রাস তাকে হুমকি দিতে থাকে। সেই সাথে শুরু হয় অপপ্রচার। ২০১৪ সালে কিছু উশৃঙ্খল যুবক তাকে লাঞ্ছিত করে। বিশেষ করে ২০১৫ সালে কলেজ ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি তোলা হয় সংগঠন থেকে। ভাস্কর্য নির্মাণের লক্ষ্যে আলোচনা, স্থান নির্বাচন ও অর্থ সংগ্রহ চলমান অবস্থায় প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন সভাপতিকে মৌলবাদীরা হত্যার হুমকি দেয়। নারী সদস্যদের কাজ করার সামাজিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে তারপরও অসংখ্য নারী কর্মী সাংস্কৃতিক এ আন্দোলনে ভূমিকা রেখে চলেছে।
কথন সাংস্কৃতিক সংসদ-কসাস সাংস্কৃতিক সংগঠন হলেও সামাজিক ও মানবিক কর্মকান্ডে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে সমস্ত কার্যক্রম সংগঠনে চলমান রয়েছে:
০১. বিতর্ক, সংগীত, আবৃত্তি, নাটক, নৃত্য ও সাহিত্য চর্চা।
০২. স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে বিতর্ক কার্যক্রম।
০৩. দুস্থ্য ও অসহায়দের বিনামূল্যে রক্ত দান।
০৪. মেধাবী সংবর্ধনা (এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের)।
০৫. শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং ছিন্নমূল পথশিশুদের মধ্যে পোশাক বিতরণ।
০৬. বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদ্যাপন ও স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলন।
ইতোমধ্যে কথন সাংস্কৃতিক সংসদ-কসাস স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বেশকিছু সম্মাননা ও স্বীকৃতি অর্জন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
দৈনিক যুগান্তর ও অক্সফাম আয়োজিত জলবায়ু বিষয়ক দেয়াল পত্রিকা
প্রতিযোগিতায় অঞ্চল সেরা।
টিআইবি আয়োজিত দুর্নীতি বিরোধী দেয়াল পত্রিকা প্রতিযোগিতায় জেলা চ্যাম্পিয়ন।
জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় খুলনা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন।
ব্র্যাক ও এটিএন বাংলা আয়োজিত দেয়াল পত্রিকা প্রতিযোগিতায় সারা বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার।
স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ডিসপ্লেতে তিন বার জেলা চ্যাম্পিয়ন।
শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৭ সালে আয়োজিত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় কসাস কর্মী ১২ জনের
বিভিন্ন বিষয়ে বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন।
সর্বশেষ সারা বাংলাদেশে সৃজনশীল তরুণদের প্লাটফর্ম ইয়াং বাংলা থেকে জয় বাংলা
ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড অর্জন।
সমাজ এখন বন্ধ্যা সময় পার করছে। জন্ম হচ্ছে না কোনো নতুন সৃষ্টির, কোনো সৃজনশীল চিন্তার, এমনকি নতুন কোনো স্বপ্নের। ঠিক সেই সময় কিছু চোখ স্বপ্ন এঁকে যায় ।
সাহিত্য আবৃত্তি, নাট্য আর বিতর্কের কারুকাজে কসাসের যাত্রা চলছে।। সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে এক দশক ধরে। বন্ধুর এ পথে টপকাতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। কসাস স্বপ্ন দেখে হাজারো তরুণকে নিয়ে। যাঁরা আগামীতে দেশের কান্ডারী হবে মননে ও মানবতায় বিজয়ী করবে দেশকে। ঝিনাইদহকে পরিণত করবে সাংস্কৃতিক নগরীতে, সর্বোপরী দেশকে করবে জঙ্গিবাদ, হানাহানি ও অপরাজনীতি থেকে মুক্ত। কসাস স্বপ্ন দেখুক, হাজারো কসাসে ভরে উঠুক সারা বাংলাদেশ, গড়ে তুলুক মেধা ও মননের বাতিঘর।
Design and developed by zahidit.com