৮৫০ টাকায় মায়াবতী ঝরনায়

প্রকাশিত: ৪:৫৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০১৭

৮৫০ টাকায় মায়াবতী ঝরনায়

বন্ধের দিনগুলোতে কোথায় যাবেন,  নিশ্চয়ই ভাবছেন।আর সঙ্গে মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে নিজের বাজেটের মাঝে ঘুরে আসতে পারব তো…?  মাত্র ৮৫০ টাকায় ঘুরে আসুন সিলেটের প্রকৃতির কন্যা জাফলং আর মায়াবতী ঝরনা থেকে।

অবস্থান

সিলেট শহর থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে পাথরের স্বর্গ জাফলং অবস্থিত।

যা দেখবেন

জাফলংয়ের কাছে পৌঁছাতেই দেখবেন পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে চলছে ঝরনা দূর থেকে তাকালে মনে হবে আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়।পাহাড়ের গায়ে নরম তোলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘরাশি। এখন বৃষ্টির সময় তাই পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আকাশ ছোঁয়া খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়গুলো এ সময়ে সবুজে ভরে উঠেছে। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে ভারতের সীমান্তঘেঁষা উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের এই জনপদকে। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে সাজানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছে আকর্ষণীয়। সীমানার ওপারে ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, নদীর স্বচ্ছ হিমেল পানি, উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও সুনশান নীরবতার কারণে পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের জন্য জাফলং এক অনন্য স্থান। তা ছাড়া জাফলং বল্লাঘাট নৌকা দিয়ে নদী পার হলেই খাসিয়াপুঞ্জি। খাসিয়াদের গ্রামকে বলা হয় পুঞ্জি। এই পুঞ্জিগুলোতে গেলে দেখা যাবে ৩-৪ ফুট উঁচুতে বিশেষভাবে তৈরি খাসিয়াদের ঘর।প্রতিটি বাড়িতে সৃজিত পানবরজ। মাতৃতান্ত্রিক খাসিয়া সম্প্রদায়ের পুরুষরা গাছ বেয়ে বরজ থেকে পান পাতা সংগ্রহ করে। আর বাড়ির উঠোনে বসে নারী সদস্যরা পান পাতা ভাঁজ করে খাঁচা ভর্তি করে বিক্রির জন্য। পান পাতা সংগ্রহ ও খাঁচা ভর্তি করার অভিনব দৃশ্য সবারই নজর কাড়ে।

আর যা দেখবেন

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের উংশিং পুঞ্জির পাশ দিয়ে অঝোর ধারায় ঝরছে ঝরনা ধারা। যেখানে মাথার ওপড় চেপে ধরা আকাশটা অনেক উঁচুতে।ছাই বরণ মেঘমালা খানিকটা পরপর রং বদলাচ্ছে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তারা ছুটে চলেছে অজানা গন্তব্যের দিকে। বইছে বাতাস সঙ্গে চলছে রৌদ্র-ছায়ার খেলা। সুনীল আকাশে সাদা সাদা মেঘে সূর্যের আলো ঠিকরে তৈরি করছে অপূর্ব আলোকচ্ছটা। উজ্জ্বল আলোয় ভরিয়ে থাকা দিনে মৃদু বাতাস। এই জায়গায় এলে বোধ করি শত পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত ও বিষাদে ভরা মন-প্রাণ নিমেষেই জুড়িয়ে যাবে।

সতর্কতা

বলে রাখা ভালো সাহস দেখিয়ে অনেকেই ঝরনার শেষ সীমানা পর্যন্ত যেতে চায়, যা খুব বিপজ্জনক।কারণ চারপাশে বড় বড় পাথরের বোল্ডের ওপর থেকে পড়লে বড় ধরনের অনাকঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। আরেকটা কথা আমাদের পরিবেশ প্রকৃতি  রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের সবারই, তাই দয়া করে পানির বোতল, প্লাস্টিকের প্যাকেট যত্রতত্র ফেলবেন না।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে বাসে/ট্রেনে সিলেট,  ভাড়া ২৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। সিলেট থেকে লোকাল বাসে জাফলং মামার বাজার, ভাড়া ৬০ টাকা অথবা গাড়ি রিজার্ভ করে ভাড়া নিবে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা। জাফলং বল্লাঘাট থেকে ১০ টাকা দিয়ে পিয়াইন নদী পার হয়ে খাসিয়া পুঞ্জি। সেখান থেকে রিকশা বা শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ি করে সংগ্রাম পুঞ্জির অপর প্রান্তে নামলেই মেঘালয় পাহাড় দেখতে পাবেন।

সেখান থেকে হেঁটে আধা কিলোমিটার গেলেই শুনতে পাবেন ঝরনার গর্জন, দেখতে পাবেন মায়াবী ঝরনার হাতছানি। অথবা জাফলং বল্লাঘাট থেকে টুরিস্ট নৌকা করে যেতে পারেন।

থাকবেন কোথায়

সিলেটে অনেক ভালো কিছু হোটেল ও রিসোর্ট আছে। তবে এখানে মধ্যম বাজেটের ভালো কিছু হোটেলের ডিটেইলস দেওয়া হলো :

১. হোটেল গোল্ডেন সিটি, জিন্দাবাজার,  সিলেট : নিরিবিলি পরিবেশে পরিচ্ছন্ন পারিবারিক হোটেল। রুম ভাড়া : এসি ১০০০/-(সিঙ্গেল), এক হাজার ২০০ টাকা (ডাবল/টুইন)

২. হোটেল ঈশিতা, চৌহাট্টা, সিলেট, ভাড়া : ৪০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। যোগাযোগ এবং বুকিং

৩. হোটেল ব্রিটানিয়া, শাহজালাল রোড, আম্বরখানা, সিলেট

রুম ভাড়া : এসি ১৫১৫/-(সিঙ্গেল), ১৮৫০ টাকা(ডাবল/টুইন)। নন এসি : ৭১৫ এবং ১৩২৬ টাকা

৪. হোটেল অনুরাগ, ধোপাদীঘি, সিলেট : মোটামুটি মানের হোটেল। তবে ভাড়া কিছুটা কম।

রুম ভাড়া : এসি এক হাজার ৫০০/ (ডাবল/টুইন )। নন এসি : ৮০০/১০০০ টাকা