ঝিনাইদহ সরকারী ভেটেরিনারি কলেজে কিছুক্ষণ…

প্রকাশিত: ১১:১০ অপরাহ্ণ, মে ৪, ২০১৮

ঝিনাইদহ সরকারী ভেটেরিনারি কলেজে কিছুক্ষণ…

গত ১৫ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম, ঝিনাইদহ সরকারী ভেটেরিনারি কলেজের ছোট ভাই ও এগ্রিভিউ২৪.কম এর ক্যাম্পাস প্রতিনিধি খালেকের বায়না তার সাথে একটু দেখা করে যেতে হবে, বেচারা ক্যাম্পাসের ফটকের সামনে অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে আছে দেখা করবে বলে । হাতে সময় খুব একটা ছিলনা তবুও অনুরোধে ঢেঁকি গেলা বলতে যা বুঝায়, তাই ক্যাম্পাসের সামনে নামলাম । খালেকের অনুরোধ ছিল যে একটু দেখা করবে আর দেখা হবার পর তা আবদারে পরিনত হলো – তার ক্যাম্পাস টা একটু ঘুরে দেখতে হবে । মূল ফটকের বাইরে থেকে ৬ তলা একাডেমিক ভবন টা দেখা যাচ্ছিল, দেখে কেন যেন যুব উন্নয়নের ভবন মনে হচ্ছিল, তাই আগ্রহ বেড়ে গেল ক্যাম্পাস টা ঘুরে দেখার ।

ডান দিক দিয়ে অতিথিদের জন্য যে ভবন আছে সেটা দিয়ে শুরু করলাম, টিপটপ বিল্ডিং। এই ভবনে নাকি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান থেকে শুরু করে মন্ত্রী এবং অন্যান্য অতিথিদের জন্য থাকার ব্যবস্থা আছে । ভেটেরিনারি ক্লিনিক্স টাও জমজমাট, এখানে বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা করা হয়। ক্লিনিক্সের পিছনে গবাদি প্রাণি ও ল্যাব এনিমেলের জন্য উন্নতমানের শেড রয়েছে। সামনে এগুতেই অত্যাধুনিক মেডিকেল সেন্টার ও অডিটোরিয়ামের নির্মানের কাজগুলি চোখে পড়ল । ১০ একরের একটা ক্যাম্পাস অথচ কতটা গোছানো – ছোট্ট কিন্তু খুব সুন্দর একটা মসজিদ আছে, ছেলেদের হলটাও গোছানো । অত্যাধুনিক একটি জিমনেশিয়াম আছে যেখানে প্রায় সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে । খেলার মাঠের সংস্কার হচ্ছে, পাশেই একটি লেকের কাজ চলছে, লেকের চারপাশে অনেকগুলি স্থায়ী বেঞ্চের ব্যবস্থা আছে । সামনে এগুতে এগুতে চোখে পড়ল শিক্ষকদের কোয়ার্টার আর লেডিস হল – দুটোই খুব গোছানো । মেয়েদের হলের পেছনে অধ্যক্ষের বাসভবন । এইটুক পর্যন্ত মোটামুটি সব ক্যাম্পাসের সাথেই মিলে যায় কিন্তু ভালো লাগল একাডেমিক ভবনে যেয়ে । ও রাস্তার কথা বুলতে ভুলেই গিয়েছিলাম, ২ পাশে পরিকল্পিত ভাবে গাছ লাগানোতে রাস্তাটি চমৎকার লাগছিল ।

২ দিন পর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর এই ক্যাম্পাসে আসার কথা তাই শিক্ষকদের খুব ব্যস্ত দেখাল । একাডেমিক ভবনের নিচতলাতে অত্যাধুনিক একটি লাইব্রেরি রয়েছে – পুরোপুরি গুছিয়ে উঠতে না পারলেও লাইব্রেরির প্ল্যানিং দেখে খুব ভালো লাগল । সম্পূর্ন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবস্থা আর সার্বক্ষনিক তত্ত্বাবধানের জন্য সিসি ক্যামেরা আছে, পাশাপাশি বসার এরেঞ্জম্যান্ট ছিল অসাধারন । লাইব্রেরিতে দেশি – বিদেশি প্রায় চার হাজারের ও বেশি বই রয়েছে। উপরের তলাগুলি ঘুরে দেখতে হবে, সামনে যেতেই দেখি ২ পাশে ২ টা সিঁড়ি – জানতে পারলাম একটি সিঁড়ি শিক্ষার্থীদের জন্য আর আরেকটি শিক্ষকদের জন্য । সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছি, প্রতি তলায় উঠতেই কিছু লেখা চোখে পড়ল – কোরআনের আয়াত থেকে শুরু করে  নবীর বাণী, কবি সাহিত্যিক, রাষ্ট্রপ্রধান এবং মনীষীদের বাণী সবই চোখে পড়ল । প্রতি তলায় ক্লাসরুম, ল্যাব ও শিক্ষকদের চেম্বার দেখছি , এভাবে ৬ টি তলার সবগুলোতেই যাওয়া হলো। সব ধরনের চেষ্ঠাই করা হয়েছে ল্যাবগুলি উন্নতমানের করার জন্য যা ল্যাবে না গেলে বুঝতামই না । এখানকার প্রতিটি ক্লাসরুমই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, স্পিকার ও প্রজেক্টর আছে ক্লাসরুম গুলোতে । ক্লাস করতে করতে যদি পানির পিপাসা পায় তাহলেও প্রবলেম নেই, ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করার দরকার নেই, প্রতি ফ্লোরেই শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে পানির ফিল্টার জার এবং গ্লাস । ক্যাম্পাসের সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি প্রাকৃতিক কিছু সুবিধাও পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা, বিশাল বড় এক মৌচাক আছে একাডেমিক ভবনের বাইরের দিকে । পোলাপানের যখন মন চায় তখন নাকি একটু করে চাক ভেঙ্গে মধু নিয়ে যায় এখান থেকে ।

দুপুর বেলা প্রতিটা ফ্লোর ঘুরে কিছুটা ক্লান্ত, আবার সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে তাই খালেককে বলছিলাম যে কি দরকার ছিল কষ্ট করে এতটুকু উপরে তোলার; চট করে তার উত্তর – সমস্যা নাই ভাই, চলেন আপনাকে লিফটে করে নিয়ে যাই, শিক্ষকদের জন্য যে সিঁড়িটা রয়েছে সেটার পাশেই রয়েছে একটি লিফট !!!

ছোট্ট একটা ক্যাম্পাস; কলেজ হবার দরুন অনেক কিছু থেকেই হয়ত শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত কিন্তু ক্যাম্পাসটিকে সর্বাত্মক সুন্দর রাখার এবং শিক্ষার্থীবান্ধব করার সব চেষ্ঠাই করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন । বাকি কাজটুকু শিক্ষার্থীদের, ভেটেরিনারি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে এদেশের প্রাণিসম্পদ সেক্টরে অবদান রাখবে এমনটা প্রত্যাশা এবং চাক ভেঙ্গে মধু না খাবার আফসোস নিয়েই শেষ করলাম ঝিসভেক ভ্রমন…