ঝিনাইদহে ১৩৩ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য

প্রকাশিত: ৩:০৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৯, ২০১৭

ঝিনাইদহে ১৩৩ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য

আতিকুর রহমান,ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ জেলাব্যাপী চিকিৎসা সংকটের মধ্যে চার জন নারী চিকিৎসক ছুটি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। দফায় দফায় তাদের চিঠি দিয়েও তারা কর্মস্থলে যোগদান করছেন না। খোঁজ না পাওয়া চিকিৎসকেরা হলেন ডা. শানজিনা ইয়াসমিন শম্পা, শাহানারা সুলতানা, মুনিরা শারমিন ও সাদিয়া আফরিন মুন্না। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ডা. শানজিদা ইয়াসমিন শম্পা ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চরকালীদাসপুর (সুতাইল চর) গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল মান্নান। সিভিল সার্জনের দফতর থেকে দফায় দফায় তার স্থায়ী ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হচ্ছে, কিন্তু কর্মস্থলে যোগদানে কোন সাড়া নেই। একই ভাবে সহকারী সার্জন ডা. শাহানারা সুলতানা ২০০৯ সালের ২ মে থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। কোটচাদপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারী সার্জন ডা. মুনিরা শারমীন ২০১২ সালের ১৭ জুন থেকে এবং হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারী সার্জন ডা. সাদিয়া আফরিন মুন্না ২০১৪ সালের ২৫ মে থেকে কর্মস্থলে আসছেন না। ছুটির পর নিখোঁজ চার জন নারী ডাক্তার বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এরা কোন দেশে আছেন এবং কি করছেন তা জানেন না সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা সুলতানা। এদিকে জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার নার্স কর্মচারী নেই। তবুও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় (এইচএসএস) সারা দেশের মধ্যে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ টানা কয়েক মাস টপ-ফাইভে অবস্থান করছে। টপ-ফাইভে অবস্থান ধরে রাখতে জেলার ১৮ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছেন চিকিৎসকরা। এমন দাবি করেছেন ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাক্তার রাশেদা সুলতানা। সিভিল সার্জনের দফতর সূত্রে জানা গেছে, এ জেলায় প্রথম শ্রেণি থেকে ৪র্থ শ্রেণির কর্মকর্তা কর্মচারীর পদ রয়েছে ১ হাজার ১২৪টি। এর মধ্যে শূন্য পদের সংখ্যা ৩৫৭টি। ২১০ জন ডাক্তারের পদ রয়েছে। তদস্থলে কর্মরত আছেন মাত্র ৭৭ জন। ১৩৩ জন ডাক্তারের পদ শূন্য। সিভিল সার্জনের দফতরে দীর্ঘদিন জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক নেই। নেই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে ডাক্তার। নার্সিং সুপারভাইজর দুইজন এবং সিনিয়র স্টাফ নার্সের ১১টি পদ শূন্য। সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট চু ও সিনিয়র কনসালটেন্ট শিশু পদে বছরের পর বছর কোনো ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। একই হাসপাতালে জুনিয়ার কসসালটেন্ট রেডিওলজি ও প্যাথলজির কোন ডাক্তার নেই। জুনিয়ার কনসালটেন্ট সার্জারি ও গাইনি পদে ডা. কাওসার হামিদ ও ডা. আমীন মোস্তফা আলী নামে দুই মেডিকেল অফিসার চাকরি করছেন। সদর হাসপাতালে জুনিয়ার কনসালটেন্ট অ্যানেসথেসিয়া পদটি বছরের পর বছর শূন্য। কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জুনিয়ার কনসালটেন্ট চর্ম ও যৌন ডা. হুমায়ুন শাহেদ ডেপুটেশনে (সংযুক্তি) মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং একই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. কাজী জুবায়ের হাসান কুর্মিটোলা জেনারেল হাসাতালে ডেপুটেশনে (সংযুক্তি) চাকরি করছেন। শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ করা হলেও আজো এই হাসপাতালের জনবল অনুমোদন দেয়নি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়। প্রাপ্ত তথ্য মতে ঝিনাইদহ জেলায় ৫টি আধুনিক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এর মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ৬ জন, হরিণাকুণ্ডু ৭ জন, শৈলকুপা ৫ জন, কোটচাঁদপুরে ৫ জন এবং মহেশপুর উপজেলায় মাত্র ৩ জন চিকিৎসক রয়েছেন। ঝিনাইদহ জেলায় উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র (সাব-সেন্টার) রয়েছে মোট ১৩টি। সবগুলোতে একজন করে মেডিকেল অফিসারের পদ রয়েছে। ১১টিতে কোন ডাক্তার নেই। শুধুমাত্র সদর উপজেলার হরিশংকরপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. শাহীন ঢালী ও কাগজ কলমে কালীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডা. শানজিনা ইয়াসমিন শম্পা কর্মরত আছেন। ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডাক্তার রাশেদা সুলতানা চিকিৎসা সংকটের মধ্যেও সেবার মান নিয়ে সন্তষ্ট প্রকাশ করে বলেন, কিছু জটিলতদার কারণে সব সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। তবে দ্রুতই চিকিৎসা সংকট কেটে যাবে। তিনি বলেন, ছুটি নিয়ে নিখোঁজ চার নারি চিকিৎসককে কাজে যোগ দিতে বারবার চিঠি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তারা সাড়া দিচ্ছেন না।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ