নেই মাথা গোজার ঠাই, চ্যাম্পিয়ন দোহারো কন্যারা

প্রকাশিত: ১০:৩১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০১৮

নেই মাথা গোজার ঠাই, চ্যাম্পিয়ন দোহারো কন্যারা

আহমেদ নাসিম আনসারী

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্ণামেন্টে ঢাকা কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলো দেশের প্রত্যন্তপল্লীর দোহারো কন্যারা । এই দোহারো কন্যাদের এক খেলোয়াড়ের নাম উন্নতি, রংপুরের সাথে সেমিফাইনালে এই উন্নতি একাই করে ৩ গোল । মেসি মেসি রব উঠেছিল স্টেডিয়াম জুড়ে, তার হ্যাট্রিকের সুবাদে সহজেই ৪-০ গোলে রংপুর বিভাগ কে পরাজিত করে টুর্ণামেন্টের ফাইনালে উঠে যায় দোহারো কন্যারা। আর উন্নতিদের উন্নতি দেখল সারা দেশবাসি। ফাইনাল খেলাতেও তারা ঢাকা কে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে জিতে নিয়েছে শিরোপা ।

শৈলক’পা উপজেলার দোহারো গ্রামের আহসান উল্লাহ জানান, নেই মাঠ, নেই ভাল অবকাঠামো, নেই ক্রিড়া সামগ্রি, নেই প্রশিক্ষণ, তারপরও দেশ বিজয়ী, এমন সাফল্যে মুগ্ধ ক্রিড়ামোদিরা, মুগ্ধ এলাকাবাসী তবে হতদরিদ্র এসব খেলোয়াড় আর দরিদ্র পরিবারগুলোকে সহযোগীতার দাবি তুলেছেন তিনি।

৩৬ নং দোহারো মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ সভাপতি আবু মুসা জোয়ারদার জানান, কে জানত ঝিনাইদহের শৈলকুপার অজপাড়া গাঁ দোহারো স্কুলের নারী শিশুরা ফুটবলে হবে দেশ সেরা, ছিনিয়ে আনতে পারবে শিরোপা ? কেউ জানুক বা না জানুক অদম্য এই নারী শিশুরা তার জন্যে বসে থাকেনি । ইচ্ছা শক্তির উপর ভর করেই শুরু করেছিল এই টুর্নামেন্টের , সেটাও ৮মাস আগের কথা। লড়াই শুরু করেছিল ৬৫ হাজার স্কুলের মধ্যে ।

শুরুতেই চমক দেখাতে থাকে, ্্্্্্্্্্্্্ইউনিয়ন, থানা, জেলা অত:পর অপরাজিত ভাবে খুলনা বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হয়। গল্পটা আর থেমে থাকেনি। খুলনা বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য প্রস্তুত হয়।

গোলকিপার বৃষ্টির মা পঙ্গু ঝর্না খাতুন জানান, বরিশার বিভাগ কে ৮-০ গোলে পরাজিত করে উঠে যায় সেমিতে, সেখানে রংপুর বিভাগ কে ৪-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে । এ যেন একের পর এক স্বপ্ন ছোয়ার গল্প । ফাইনালে মুখোমুখি হয় রাজধানী ঢাকা বিভাগের । খেলার প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে খুলনার প্রতিনিধিত্বকারী দোহারো কন্যারা । কিন্তু তারা দমে যাওয়ার পাত্র নয় । দ্বিতিয়ার্ধে ১-১ গোলে সমতা আনতে সক্ষম হয় । এভাবেই শেষ ফাইনাল খেলার নির্ধারিত সময় । তারপর টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলের ব্যাবধানে ঢাকা কে হারিয়ে শিরোপা ছিনিয়ে আনে দোহারো মেয়েরা। বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাসে মেতে ওঠে পুরো স্টেডিয়াম ।এমন স্বপ্ন জয়ের গল্পে আনন্দে আত্মহারা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষগুলো।

গোল্ডেন বুট পাওয়া উন্নতির মা হামিদা বেগম জানান, সারাদেশ বিজয়ী এই দোহারো কন্যাদের পরিবারের অবস্থাও নাজুক । নেই মাথা গোজার ঠাই, নেই আর্থিক স্বচ্ছলতা বা অন্যান্য সুবিধা । টুর্নামেন্টে মেসি হিসাবে খ্যাত উন্নতির মা খুবই খুশি ও প্রতিবেশি জানিয়েছেন ভ্যান চালিয়ে সংসার চলে তাদের।

এলাকাবাসী জানান, আরেক খেলোয়াড় বৃষ্টি, সে দলের গোলরক্ষক, ফাইনালের টাইব্রেকারে অসাধারণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয় প্রতিপক্ষের ছোড়া বল । এত কিছু তার যোগ্যতা তার পরিবারের করুণ অবস্থার কথা কেউ জানেনা । তার প্রতিবন্ধী মায়ের ভাতার টাকা দিয়ে চলে সংসার। তবে শৈলকুপার এই দোহারো গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খোলোয়াড়দের নেই কোন সুযোগ সুবিধা । মাঠ, অবকাঠামো, ক্রিড়া সামগ্রি কিছুই নেই । স্থানীয়দের দাবি এসব দিকে নজর দিতে হবে সরকারকেই।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উসমান গনি জানান, প্রশাসনের কাছ থেকে আশ্বাস মিলেছে এইসব খোলোয়াদের সকল দাবিপূরনের কথাই জানালেন তিনি।

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ