ঢাকা ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০১৮
ঝিনাইদহ সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার আর শৈলকুপা উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামের নাম গাড়াগঞ্জ। এ গ্রামে গেলেই চোখে পড়ে বেশির ভাগ মানুষ ব্যস্ত চাকা বানানোর কাজে। কেউ কাঠ চেছে-ছুলে সমান করছেন। কেউ তৈরী করা কাঠ একটির সাথে আরেকটির লাগিয়ে চাকা তৈরী করছেন। কেউ কথা বলছেন- চাকা কিনতে আসা ব্যবসায়ীদের সাথে। এ ভাবে চলে সকাল-থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ গ্রামের বেশির ভাগ লোকই চাকা বানানোর সাথে জড়িত। তাদেরই একজন গোলাম
রব্বানি। গ্রামবাসী জানান, গোলাম রব্বানির পিতা মোজাহার আলীও চাকা বানাতেন। তার দাদার পেশাও ছিল চাকা বানানো। যে কারণে তিনিও বাপ-দাদা ছাড়েননি। শুধু তিনি নন- এ গ্রামে যারা চাকা তৈরীর সাথে জড়িত তাদের বেশির ভাগই বাপ-দাদার কাছ থেকে এ কাজ শিখেছেন। এখন অবশ্য অনেকেই অন্যকাজের পাশাপশি চাকা বানাতে শুরু করেছেন। এ জন্য এ পেশার মানুষ বাড়ছে।
এ গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, গাড়াগঞ্জের মানুষ বৃটিশ আমল থেকেই চাকা বানানোর সাথে জড়িত। গরু, মহিষ ও ঘোড়ার গাড়ি চালানোর জন্য চাকার বিকল্প না থাকায় মান্ধাতা আমলের অনেক কৃষি যন্ত্রপাতি হারিয়ে গেলেও চাকার তাই এখনো কদর রয়েছে। এখানকার মানুষের ব্যস্ততা দেখলেও তা বোঝা যায়। হাবিবুর রহমান নামে চাকা তৈরীর এক মিস্ত্রি জানান, মাঠ থেকে ধান আনা, জমিতে সার দেয়া, পাট কেটে পুকুর বা জলাশয়ে নেয়া বা এ জাতীয় কাজে এখনো গরুর গাড়িই বেশি ব্যবহৃত হয়। কোথাও কোথাও স্যালোমেশিন দিয়ে তৈরী ভ্যানে করে এ কাজ কমবেশি করা হলেও গরুর গাড়ি এখনো অদ্বিতীয়। বিশেষ করে যেসব এলাকার রাস্তা এখনো কাচা এবং বর্ষকালে কাদা হয় সেখানে গরুর গাড়ির কোন বিকল্প নেই। যে কারণে এর চাহিদা কমছে না। তিনি জানান, গাড়াগঞ্জের অন্তত ৫০ পরিবারের পেশা চাকা তৈরী করা। এরা সবাই চাকা বানিয়েই স্বাবলম্বি হয়েছে। একজন মিস্ত্রি দিনে একটি চাকা তৈরী করতে পারেন। অর্থ্যাৎ একজন মিস্ত্রি মাসে ৩০টি চাকা বানাতে পারেন। সে হিসাবে গাড়াগঞ্জে প্রতিদিন কমপেক্ষ ৫০টি আর বছরে অন্তত ২০ হাজার চাকা তৈরী হয়। তবে এর সাথে শতাধিক মিস্ত্রি জড়িত থাকায় বছরে চাকা তৈরী হয় অন্তত ৪০ হাজার। একেকটি চাকা তারা বিক্রি করেন ১৫০০ টাকা করে। সে হিসাবে বছরে গাড়াগঞ্জে ৬ কোটি টাকার চাকা তৈরী হয়। প্রতিটি চাকায় তাদের লাভ থাকে ৩শ’ টাকা করে। সে হিসাবে বছরে এখানকার মিস্ত্রিরা লাভ করেন ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। এ কাজ করেই তারা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। মাসে ৯ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে তাদের। এতেই তারা সন্তুষ্ট।
শৈলকুপার শিক্ষিত তরুণ আব্দুর রহমান জানান, অনেকে চাকা বিক্রির ব্যবসাও করেন। তারা মিস্ত্রি দিয়ে চাকা তৈরী করিয়ে নেন। তারপর সেই চাকা তারা বিক্রি করেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। তিনি জানান, গাড়াগঞ্জে তৈরী চাকা ঝিনাইদহ ছাড়াও পাশের জেলা যশোর, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরসহ উত্তরবঙ্গ ছাড়াও
বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পাইকারি ক্রেতারাই এসে ট্রাকে ভরে চাকা নিয়ে যান। এ জন্য তাদের চাকা বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়না।
অঅজিজুল ইসলাম নামে এক চাকা ব্যবসায়ী জানান, মান্ধাতা আমলের সামগ্রির ব্যবসা করেও যে টিকে থাকা যায় তা দেখিয়ে দিচ্ছেন গাড়াগঞ্জের কাঠ শিল্পিরা। তাদের হাতের নিপুন ছোয়ায় তৈরী গয়ে যাচ্ছে সুন্দর সুন্দর চাকা। এ চাকা কৃষিকেও সচল রাখছে। কারণ কৃষিতে আধুনিকতার ছোয়া লাগলেও গ্রামাঞ্চলে এখনো গরুর গাড়ির কোন বিকল্প নেই। তাই চাকার কদরও কমছে না। তবে আস্তে আস্তে তারা সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন কাঠ নিয়ে। কারণ বাবলা কাঠ ছাড়া ভাল চাকা হয় না। এখন বাবলা গাছের তিব্র সংকট চলছে। তাই কাঠের সন্ধানে তাদের অনেকদূর পর্যন্ত যেতে হয়। তারা যে মানের কাঠ দিয়ে চাকা তৈরী করেন, তার বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হতে হয়। বাবলা গাছ তেমন মোটা না হওয়ায় তারা কাঠ সংকটে ভোগেন। তারপরও বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছেন। গাড়াগঞ্জের মানুষের দেখাদেখি এখন আশপাশের গ্রামের মানুষও চাকা তৈরীর কাজে আত্মনিয়োগ করছেন।
স্থানীয় চাকা ব্যবসায়ীরা জানান, তারা যদি ব্যাংক ঋণ পেতেন তাহলে আরো ভাল করতে পারতেন। সরকার কৃষি খাতে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। সেই কৃষিকে সচল রাখতে ভূমিকা রাখছেন গাড়াগঞ্জের চাকা ব্যবসায়িরা। তাই তারা যাতে অন্তত ঋণ পেতে পারেন সে ব্যাপারে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com