ঝিনাইদহের ঐতিহ্য গ্রামবাংলার বিয়ে বাড়ির “কাদা খ্যাইড়”।

প্রকাশিত: ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০১৮

ঝিনাইদহের ঐতিহ্য গ্রামবাংলার বিয়ে বাড়ির “কাদা খ্যাইড়”।

কাদা খ্যাইড় ঝিনাইদহের একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। তবে এখানকার এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি গ্রামাঞ্চল থেকে বিলীন হতে চলেছে।

এখানকার গ্রাম অঞ্চলের অনেক বিয়ে বাড়িতে এ ধরনের আনন্দময় কাদা ছোড়াছুড়ি খেলা দেখা যায়। গোটা বিয়েবাড়ি আনন্দময় হয়ে ওঠে। কনের বাড়িসহ পার্শবর্তী বাড়িগুলোর নারী-পুরুষ সবাই অংশ নেন এই আনন্দে। প্রায় দুই ঘণ্টা চলে কাদা-মাটি মেখে এই আনন্দ খেলা, মাইকে গানের সুরে সুরে চলা এই আনন্দ চলে এক সপ্তাহ। ফাঁকে ফাঁকে থাকে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব। সবাই মিলে খির খাওয়া চলে শরীরে কাদা লেগে থাকা অবস্থায়। কনে বিয়ের পিড়িতে বসার আগ পর্যন্ত প্রতিবেশীদের এই আনন্দ আজো মনে করিয়ে দেয় গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যপূর্ণ বিয়ে বাড়ির সব আনন্দের কথা।


এই বিয়ে উপলক্ষে এক সপ্তাহ এ আনন্দময় খেলা চলে মেয়ের গোসল করানো পর্ব পর্যন্ত । গোটা বিয়ে বাড়িতে অন্যরকম আনন্দ চলে। কাদা-মাটি আর রঙ মেখে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে। কারো কোনো কষ্ট নেই। তবে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা আছে। আর প্রতিপক্ষের চিন্তা কেউ যেন পার পেয়ে না যায়।

 

সে কাদায় থাকে কাঁচা হলুদের ঘ্রাণ। সে কাদা ছোড়াছুড়িতে থাকে একটা মেয়ের নতুন জীবনের জন্য শুভ প্রার্থনা।সে কাদায় থাকে জীবনের কিছু রঙীন মুহূর্তের আনন্দোচ্ছ্বাস।

 

এ সব বিয়েতে গোটা মহল্লার মানুষ আনন্দে মেতে ওঠে। প্রতিদিন মেয়ের গোসল করানো হয়। আর এই গোসলকে কেন্দ্র করে চলে কাদা-মাটি আর রঙ খেলা। এরপর খাওয়ানো হয় আনন্দে অংশ নেয়া সবাইকে। রাতে বিয়ে বাড়িতে চলে গানের অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বাড়ির সবাই। গান না জানা ব্যক্তিও বাদ পড়ে না কণ্ঠ দিতে। এটা গ্রামবাংলার একটা ঐতিহ্য। এটাকে তারা প্রকৃত আনন্দ মনে করেন। যা আজ সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু কিছু গ্রামের মানুষ আজো এইসব আনন্দ ধরে রেখেছেন। গা-ধোয়ানো, খির খাওয়ানো আর রাতে গান-বাজনা গ্রামবাংলার বিয়েবাড়ির একটা ঐতিহ্য। শহর থেকে এগুলো হারিয়ে গেলেও আজো গ্রামের কিছু মানুষ এ ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন………………।

 

ছোটবেলাই গ্রামের বিয়ে বাড়িতে আনন্দময় কাদা ছুড়াছুড়ি দেখেছি।
অনেক বছর পরে ফেসবুকে কিছু লিখতে এসে আজ অন্যরকম কাদা ছোড়াছুড়ি দেখছি।কথার কাদা ছোড়াছুড়ি। কেউ মহা উল্লাসে কাদা ছুড়ছে। কেউ কাদা গায়ে পরায় আঁতকে উঠে সরে যাচ্ছে।কেউ পালটা কাদা ছুড়ছে। কারো কাদার গোলাপের ঘ্রাণে মনটা ভরে যায়। কারো কাদার দুর্গন্ধে মনে হয় চলে যাই এই ফেইসবুক ছেড়ে শত মাইল দুরে। কিন্তু কিছু ভাই বন্ধু ও কাছের মানুষের টানে আবার ফিরে আসি এই ফেসবুকে।