সোলার পাম্পে অবিরাম পানির প্রবাহ

প্রকাশিত: ৯:৪৩ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০১৮

সোলার পাম্পে অবিরাম পানির প্রবাহ

ঝিনাইদহ: ভিটস্বর ও হরদেবপুর গ্রামের গড়ার বিলে প্রায় ১৭০ একর জমিতে সৌর বিদ্যুৎ চালিত ১০ টি গভীর নলকুপের পানিতে চাষ হচ্ছে ধানসহ বিভিন্ন ফসল। ইরি মৌসুমেও পানির সংকট নেই।

একদিকে অবিরাম পানির প্রবাহ, অন্যদিকে কম খরচ, সব মিলিয়ে খুশি চাষি। পূর্বে ৪৬ শতক জমিতে সেচের পানি বাবদ কমপক্ষে আট হাজার টাকা খরচ হলেও উপযুক্ত সময়ে পানি পাওয়ার নিশ্চয়তা ছিল না। অথচ বর্তমানে ৫ হাজার টাকায় পাওয়া যায় প্রয়োজনের চেয়ে অধিক পানি।

ইরিগেশনের সময় মাঠ জুড়ে এখন সবুজ ধানের কচি পাতার দোল আর কৃষকের হাসি মিলে আনন্দের ঢেউ তোলে এই গড়ার বিলে। পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারায় বর্তমানে প্রতি মৌসুমে পূর্বের তুলনায় ফলন বেশি পায় গড়ার বিলের কৃষকেরা।

শুধু গড়ার বিলে নয় জেলার ৫টি উপজেলায় মোট ৪২ টি সোলার পাম্পের পানিতে প্রায় ৭০০ একর জমিতে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহের সদরে ২৫টি, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৮টি, কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৪ টি, হরিনাকুন্ডু উপজেলায় ৪টি, শৈলকুপা উপজেলায় ১টি সোলার পাম্প রয়েছে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াধীন আছে আরো ২৫ টি।

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী লি. (ইডকল) এর আর্থিক সহযোগিতায় ঝিনাইদহ এইডের সোলার ইরিগেশন পাম্প সিস্টেম এর উদ্যোগে নবায়ন যোগ্য শক্তির উৎস (সৌর শক্তি) কে কাজে লাগিয়ে সোলার সেচ পাম্প স্থাপন করছে তথ্য এইড কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বাবুর।

তিনি বলেন এক-একটি সোলার পাম্প স্থাপনে ৪৫-৪৮লাখ টাকা খরচ হয়। একটি সেচ পাম্পের অধীনে ৮০ থেকে ১০০ বিঘা জমি চাষ করা সম্ভব।

তিনি জানান, ইরিগেশননে চাষিদের কাছ থেকে বিঘা প্রতি পাঁচ হাজার টাকা, আমন চাষে ১৪’শ টাকা ও রবি মৌসুমে ৬’শ টাকা করে নেয়া হয়। এ খরচ স্যালো মেশিনের অধীনে সেচ খরচের তুলনায় অনেক কম।

তিনি আরো বলেন, চাষিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে কিস্তিতে ৮ বছরে ইডকলকে তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফরৎ দিতে হবে। ৮ বছরে ইডকলকে সব টাকা ফেরত দিতে পারলে পরবর্তী সময়ে সেচ বাবদ খরচ আরো কমানোর সম্ভাবনা আছে বলে তিনি জানান।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার হরদেবপুর ও ভিকস্বর গ্রামের প্রায় শতভাগ মানুষ কৃষি নির্ভর। গড়ার বিলের ফসল তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। এ বিলের মাটি এঁটেল প্রকৃতির হওয়ায় খরা মৌসুমে মাঠ ফেটে চৌঁচির হয়ে যেত। অগভীর নলকুপের পানি মাঠের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা মেটাতে পারত না।

ফলে জমিতে প্রয়োজনীয় পানি নিশ্চিত করতে সেচ খরচ অনেক বেশী পড়ত। এতে কৃষকেরা আশানুরুপ লাভ পেত না। হরদেবপুর গ্রামের কৃষক নেতা উদয়শংকর বিশ্বাস ও রফিকুল ইসলাম জানান ইডকলের অর্থায়নে  ঝিনাইদহের এইড নামের বেসরকারী সংস্থার সহযোগিতায় গড়ার বিলে পর্যায় ক্রমে ১০টি সোলার পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এতে কৃষকের সেচ বাবদ খরচ কমেছে এবং সময় মতো পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পেয়েছে।

কৃষক নেতা উদয়শংকর জানান, পূর্বে ইরি-বোরো মৌসুমে প্রতি বিঘা (৪৬ শতক) জমিতে সেচ দিতে কমপক্ষে আট হাজার টাকা খরচ হতো। কিন্তু সৌর বিদ্যুত চালিত গভীর নলকুপ স্থাপিত হওয়ায় বর্তমানে প্রতিবিঘা জমিতে সেচ বাবদ খরচ হচ্ছে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। এতে বেশ খুশি এলাকার কৃষকেরা।

তিনি আরো বলেন, আমন ধান ও রবি ফসল চাষেও পূর্বের তুলনায় বর্তমানে খরচ অনেক কম হচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার গোমরাইল গ্রামের মাঠের সোলার সেচ পাম্প এর অধীনে চাষী সবজী চাষ করছেন আয়ূব আলী। তিনি বলেন, এই মাঠে আগে কচু চাষ করা যেত না। কারণ কচু চাষে বেশ পানি লাগে। এতে উৎপাদন খরচ বেশি পড়তো, লাভ হতো কম। এখন সোলার সেচ পাম্পে পানির সমস্যা নেই। খরচও কম। পানির সমস্যা না থাকায় ভালো ফলন ও ভালো মুনাফা পাচ্ছি।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জিএম আব্দুর রউফ জানান, সোলার পাম্প কৃষিক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নবায়ন যোগ্য শক্তির উৎস কাজে লাগিয়ে একদিকে অনবায়ন যোগ্য জ্বালানী সাশ্রয়ী করার পাশাপাশি কৃষকের কম খরচে সেচ সুবিধা দিচ্ছে। পানির সরবরাহে ঘাটতি না থাকায় চাষী যেকোন ফসলের চাষ করতে পারছে।

ফলে চাষী আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছে। ঝিনাইদহে সৌর চালিত সেচ পাম্প চাষাবাদে নতুন মাত্রা যোগ করছে। এছাড়া ভবিষ্যতে তেলের ঘাটতি দেখা দিলে সোলার পাম্প বিকল্প হিসেবে কৃষিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।