জীবন যুদ্ধে এক সংগ্রামী নারী জাহানারা বেগম

প্রকাশিত: ৯:০০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১, ২০১৮

জীবন যুদ্ধে এক সংগ্রামী নারী জাহানারা বেগম

মহেশপুর(ঝিনাইদহ)ঃ শিশু বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় জাহানারা বেগমের। সে সময় তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পার হতে পারেননি। অল্প বয়সেই সে ২ সন্তানের মা হয়ে যায়। সংসারে নিদারুন কষ্ট আর অভাব যেন লেগেই আছে।

স্বামী কামলা খেটে সামান্য অর্থ রোজগার করে সেই অর্থ দিয়ে সংসার চলে না। বাড়ীর আঙ্গিনায় সামান্য জমিতে নার্সারী দিয়ে অর্থ উপার্জন করে বড় ছেলেকে বিএসসি পাশ করিয়েছেন এবং ছোট ছেলে বিশ্ব বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। নিজে পেয়েছেন জয়িতা ও নার্সারীতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণায় থেকে এওয়ার্ড। লেখপড়া না জানলেও ৫শ গান লিখেছেন।

এছাড়া আত্ম জীবনী শিড়ি , উপন্যাস, ধুম পিড়া, ২টি গানের বই কাজল ধোয়া জল, রমজয়ী রমনী।
এই আত্ম প্রত্যয়ী নারী জাহানারা বেগম জন্ম গ্রহন করেন সুনামগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ভাদেরটেক গ্রামে। তার পিতার নাম আব্দুল হক এবং মাতার নাম হাজেরা খাতুন। ৫ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। বাবা শা আব্দুল করিমের গানের ভক্ত ছিলেন সেই সূত্র ধরে পিতার মাধ্যমে সেও গান শুনতে ও গাইতে পছন্দ করত।

ইতোমধ্যে ১৩/১৪ বছর বয়সে একই জেলার চালবন গ্রামে হাসান আলীর সাথে জাহানারা বেগমের বিয়ে হয়ে যায়। বড় ছেলে বেলাল বিএসসি পাশ করে মাষ্টার্স করছে সিলেট বিশ্ব বিদ্যালয়ে। ছোট ছেলে হেলাল হোসেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার পড়ছে। ২০১০ সালে তিনি সফল নারী জয়িতা এবং ২০১৪ সালে নার্সারীতে এওয়ার্ড পায়। বর্তমানে একটি নারী সংগঠন করে এলাকায় সামজিক আন্দোলন ও সেবা মূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে।

এক সাক্ষাতকারে জাহানারা বেগম বলেন, তার স্বপ্ন দরিদ্র নারীদের জন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি, নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা, নরী নির্যাতন, যৌতুক, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ করা। এছাড়া স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা, কুঠির শিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা তৈরী করা। এএলআরডি নামক জাতীয় পর্যায়ের একটি বে-সরকারী সংস্থা(এনজিও) তাকে বিভিন্ন ধরণের কাজের সহযোগিতা করে থাকেন বলে জানান। অনেক কষ্ট করে ছেলে ২টি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় বইগুলি প্রকাশ করতে পেরেছে। এলাকার কয়েকজন গনমাধ্যম কর্মী প্রকাশনা কাজে তাকে সাহায্য করেছে। বর্তমানে তার ১.১০ শতক জমিতে নার্সারী রয়েছে। প্রথমে ১০শতক জমিতে ৪ হাজার টাকা পূজি নিয়ে তিনি কার্যক্রম শুরু করেন।

নিজের বাল্য বিবাহের উপলব্ধি থেকে এখন বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, যৌতুক, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কাজ করে যাচ্ছে। জাহানারা বেগমের প্রতিভা আপন মহিমায় বিকশিত হচ্ছে। স্ব-শিক্ষিত মানুষ হিসাবে এলাকায় একজন গীতি কবি হিসেবে পরিচিত লাভ করেছেন।

জাতীয় ভাবে পুরষ্কৃত পেলেও বাল্য কালে ছিল তিনি এক অবহেলিত নারী। তাই তিনি লিখেছেন ’’আমি গ্রাম বালিকা বধূরে, আমার মনে বড় ব্যাথা। আঁচলে বান্দিয়া রাখি, দুঃখের অনেক কথা। এই বয়সে পিতা মাতা কেন দিল সাদি। ফুল দেখিয়া হাঁসি আমি চাঁদ দেখিয়া কাঁদি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ