ঢাকা ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০
ঝিনাইদহ সংবাদ ডেস্ক:
সরকারি খাল, পানি থাকে বারো মাস। এলাকার মানুষ নানা প্রয়োজনে এই খালের পানি ব্যবহার করেন। কৃষকরা পাট মৌসুমে পাট পচন দেন, আবার অনেকে খাল থেকে মাছ ধরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গৃহস্থালিরা গরু-বাছুরের গা-গোসল এই খালেই করিয়ে থাকেন।
‘হরিনাকুন্ডু খাল’ নামের সেই উনু¥ক্ত খালটি বর্তমানে সরকারি দলের প্রভাবশালী এক নেতাসহ ৭ জনের নামে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ দীর্ঘ প্রায় ১৫ কিলোমিটার লম্বা খালটি মাত্র সাড়ে ৫ লাখ টাকায় ৩ বছরের জন্য ইজারা দিয়েছেন। আর উন্মক্ত এই খালটি ইজারা দেওয়ায় খাল পাড়ের বাসিন্দাদের খালে নামা বন্ধ হয়ে গেছে। তারা জরুরী প্রয়োজনেও পানিতে নামতে বা পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। যারা ইজারা নিয়েছেন তারা পানিতে নামতে নিশেধ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অথচ ইজারা শর্তে সাধারণ মানুষকে খাল ব্যবহার ও খালে বাঁধ দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার শহরের পশ্চিমপাশ দিয়ে একটি খাল বেরিয়ে গেছে। খালটিতে এই শুষ্ক মৌসুমেও পানি রয়েছে। তবে খালের বেশ কিছু স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এভাবে বাঁধ দিয়ে সেখানে মাছ চাষ করছেন। কয়েকটি স্থানে মাছ চাষের সুবির্ধাথে মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছে। পানি প্রবাহের জন্য সামান্য জায়গা ফাঁকা রাখা হলেও সেখানে বাঁশের বাঁধ রয়েছে। স্থানিয়রা বলছেন সাতব্রীজ থেকে খালটি হিংগারপাড়া পর্যন্ত আনুমানিক ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব রয়েছে। সোজা রাস্তা দিয়ে গেলে এর দূরত্ব ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার।
খাল পাড়ের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করে জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা মোঃ সাজেদুল ইসলাম ওরফে টানু মল্লিকসহ কয়েকজন মিলে এই খালে মাছ চাষ করেন। যারা মাছ চাষ করেন তারা জানিয়ে দিয়েছেন এই পানিতে নামা যাবে না। নামলে মাছের ক্ষতি হবে। ৫৫ বছর বয়সের এক ব্যক্তি জানান, ছোট বেলা থেকেই খালটি দেখছেন। খালে ইতিপূর্বে মানুষ গোসল করতেন। বর্তমানে পানি বদ্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে গোসল করা যায় না। কিন্তু ইজারা দেওয়ার পূর্বে খাল পাড়ের গ্রামগুলির বাসিন্দারা খালের পানি নানা কাজে ব্যবহার করে আসছিলেন। বিশেষ করে খাল পাড়ের একাধিক বাসিন্দা এখানে মাছ ধরে জীবন চালাতেন। আর পাট মৌসুমে পানিতে পাট জাগ দিতেন। গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের গরু-বাছুরের গোসল এই খালেই হতো। কিন্তু বর্তমানে কেউ খালে নামতে পারছেন না। স্থানিয়রা আরো জানান, ইতিপূর্বে একদফা মাছ চাষ করার সময় এলাকার মানুষের আপত্তির কারনে বাঁধগুলো কেটে দেওয়া হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বাঁধ কাটা হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালের শেষ দিকে আবারো বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে। এবার তাদের বলা হচ্ছে ইজারা নিয়ে মাছ চলছে।
সংশ্লিষ্ট অফিসে খোজ নিয়ে দেখা গেছে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭ জনের নামে দীর্ঘ প্রায় ১৫ কিলোমিটার ইজারা দিয়েছেন। হরিনাকুন্ডু খালটি সাতব্রীজ থেকে সরকারি লালনশহ কলেজ পর্যন্ত ঝিনাইদহ চাকলাপাড়ার জনৈক মোঃ মামুনুর রশদি, লালনশাহ কলেজ থেকে দক্ষিনে বাজার ব্রীজ পর্যন্ত ও বাজার ব্রীজ থেকে শশ্মানঘাট পর্যন্ত পারবর্তীপুরের মাহবুব রশীদ ওরফে আজাদ, শশ্মানঘটা কাটাখাল থেকে পারবর্তীপুর পর্যন্ত নারায়নকান্দি গ্রামের মোঃ রকিবুল ইসলাম, পারবর্তীপুর বাজার থেকে শুড়া মাদ্রাসা পর্যন্ত পারবর্তীপুর গ্রামের মোঃ সাজেদুল ইসলাম এবং শুড়া মাদ্রাসা থেকে বরিশখালী উচুঁ ব্রীজ ও বরিশখালী উঁচু ব্রীজ থেকে হিংগারপাড়া পর্যন্ত নিত্যান্দপুর গ্রামের মোঃ সাজেদুল ইসলামের নামে ইজারা দেওয়া হয়েছে। মোট প্রায় ১৫ কিলোমিটার এই খালটি ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকায় তিন বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে।
জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা জানান, তারা ইজারা দিয়েছেন মাছ চাষের স্বার্থে। দেশে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য খালে মাছ চাষ করতে এই ইজারা। তবে তাদের শর্ত রয়েছে বাঁশ দিয়ে বাঁধ দেওয়া যাবে না। মশারীর কাপড় দিয়ে মাছ আটকে চাষ করা যাবে। এছাড়া খালের পানি জনসাধারনের ব্যবহারে বাঁধ দেওয়া যাবে না। এই শর্ত ভঙ্গ করলে ইজারা বাতিল হবে।
এ বিষয়ে জেলা পরিষদের সচিব রেজাই রাফিন সরকার জানান, খাল জনসাধারণ ব্যবহার করবে। এটা বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই। ইজারা দেওয়া হলেও জনগনের ব্যবহার করতে দিতে হবে এই মর্মে শর্ত রয়েছে। কেউ এটার শর্ত ভঙ্গ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। বিষয়টি তিনি দ্রুতই দেখবেন বলে জানান।
ইজারা নেওয়া ব্যক্তিদের একজন হরিনাকুন্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ সাজেদুল ইসলাম ওরফে টানু মল্লিক জানান, তারা পানিতে নামতে কাউকে বাঁধা প্রদান করেনি। যারা ইতিপূর্বে মাছ ধরতেন তাদের একটু সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া এই খালের পানিতে কেউ নামতে চাই না, পানি বদ্ধ থাকায় নামার উপযোগি নেই। তিনি আরো বলেন, তারা সরকারের সব নিয়ম মেনে জেলা পরিষদ থেকে ইজারা নিয়ে এই মাছ চাষ করছেন।
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com