ঢাকা ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৪শে শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৯, ২০১৯
সাইফুজ্জামান তাজু
হরিণাকুণ্ডু-
নাসরীন নাহার, দরিদ্র পরিবারের সন্তান। কৃষক বাবার অর্থনৈতিক কষ্ট ছোট বেলা থেকেই তাকে পীড়া দেয়। বাবার অভাব অনটন তাকে স্বপ্ন দেখাই একদিন তিনি স্বচ্ছল হবেন। পরিবারের সবার কষ্ট দূর করবেন। আত্ম নির্ভরশীল ও স্বাবলম্বী হবেন। এরই মাঝে সাংসারিক অভাব অনটনের কারণে বেকার ছেলে সাথে বিয়ে দেন বাবা। একে একে দুটি সন্তানের জন্মদেন তিনি। স্বামীর বেকারত্ব তাকে দৃঢ় প্রত্যয়ী করে তোলে স্বাবলম্বী হওয়ার। নেমে পড়েন জীবন যুদ্ধে। মাত্র ৫ হাজার টাকা ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে শুরু করেন হস্ত শিল্পের কাজ। তার এ কাজে মুগ্ধ হয়ে ঢাকার আড়ং কার্যালয় তাকে কাজের অর্ডার দেয়। শুরু হয় নাসরিনের জীবন বদলে যাওয়ার গল্প। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এখন তিনি স্বাবলম্বী। সন্তানদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখেই কাটছে তার দিন। প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বীকৃতি স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সমিতি। এ সমিতির সভাপতি তিনি। তার অধীনে প্রায় ২শ নারী হস্ত শিল্পের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। নাসরিন নাহার ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাবেক বিন্নী গ্রামের মনজের আলী জোয়ার্দ্দারের কণ্যা ও একই গ্রামের মহিদুল ইসলামের স্ত্রী। নাসরিন বলেন, দারিদ্রতা তাকে দমাতে পারেনি, প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর দৃঢ় মনোবল তাকে স্বাবলম্বী করেছে।
উপজেলার পায়রাডাঙ্গা গ্রামের বজলু মন্ডলের কন্যা ও আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী স্বপ্না। পারিবারিক অনটনের কারণে বাল্য বিবাহের স্বীকার এ নারী। ৮ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করা অবস্থায় পরিবার থেকে বিয়ে দেওয়া হয়। প্রচন্ড ইচ্ছা থাকলেও স্কুলের গন্ডি পেরোতে পারেনি স্বপ্না। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল সমাজ সেবক হয়ে সমাজের অসহায় নারী ও শিশুদের জন্য কিছু করার। স্বপ্নার স্বপ্ন সফল হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি অটিষ্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। একাধারে আরও ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হয়ে কাজ করছেন তিনি। নিজে বাল্য বিবাহের স্বীকার হওয়ায় বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, যৌতুক নিরোধ ও নারী এবং শিশু নির্যাতন বিরোধী ভূমিকা রাখছেন তিনি। বললেন, যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন সমাজের অসহায় নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করবেন।
আম্বিয়া খাতুন। বি.সি.এস শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মরত ৪ গর্বিত সন্তানের জননী তিনি। নিজে লেখাপড়া জানেন না। তাই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সন্তানদের উচ্চ শিক্ষিত করবেন। আজ আম্বিয়া খাতুনের সে প্রতিজ্ঞা পূরণ হয়েছে। সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষিত হয়ে দেশের সেবা করছে। তিনি উপজেলার বৈঠাপাড়া গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী।
অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক কূ-সংস্কারের কারণে লেখাপড়ায় প্রবল বাধা উপেক্ষা করে সমাজের শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন বাবা মায়ের বারো সন্তানের কনিষ্ঠ এরিখ মেহের নীগার। পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি উপজেলার বৈঠাপাড়া গ্রামের শাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী।
নাসরীন, স্বপ্না, আম্বিয়া ও এরিখ এ বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় উপজেলার শ্রেষ্ঠ ‘জয়িতা’ নির্বাচিত হয়েছেন। সোমবার আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে “জয়িতা অন্বেশনে বাংলাদেশ” শীর্ষক আলোচনায় পুরস্কার গ্রহনের পূর্বে তারা তাদের সফলতার গল্প শোনান।
এসময় তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাফিস সুলতানা ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শিলা বেগম।
সম্পাদক – মাহমুদ হাসান টিপু
নির্বাহী সম্পাদক – পিন্টু লাল দত্ত
বার্তা সম্পাদক – সোহাগ আলী
www.jhenaidahsongbad.com
jhenaidahsongbad@gmail.com
প্রকাশক- জাহিদুল ইসলাম বাবু মিয়া
ব্যবস্থাপনা পরিচালক – মোঃ মজিবুর রহমান সরকার
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সড়ক,ঝিনাইদহ
০১৭১১২৬০৩৯৩ / ০১৭১১৪৫২০৫১
Design and developed by zahidit.com