ঝিনাইদহ সদর খাদ্য গুদামের ১০ মে. টন চাল পাচারের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা

প্রকাশিত: ৩:৪৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০১৭

ঝিনাইদহ সদর খাদ্য গুদামের ১০ মে. টন চাল পাচারের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা

সুন্দর সাহা ॥ ঝিনাইদহ জেলার সদর খাদ্য গুদাম হতে সরকারি চাল পাচারের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। জেলা শহরের একজন ব্যবসায়ীর ঘর থেকে পাচার হওয়া চাল এলিট ফোর্স র‌্যাব কর্তৃক হাতে নাতে ধরা পড়ে। এ ঘটনায় দু’জন ব্যবসায়ী ও গুদাম কর্মকর্তা জসিম উদ্দীনকে আটক করা হয়। যে তিনজনের নামে ঝিনাইদহ থানায় মামলা হয়। তবে অদৃশ্য কারণে ঝিনাইদহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাবুল হোসেন তার গুদাম কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত জিম্মায় ছাড়িয়ে আনেন। থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ার ভয়েই এমনটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, ওই সময়ে গুদামে মজুদ ঘাটতি তখনও সমন্বয় করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে গুদাম কর্মকর্তাকে ছাড়িয়ে আনা জরুরি ছিল বলে ব্যাপক প্রচার রয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার পরও তাৎক্ষণিক একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গুদামের মজুদ পরীক্ষা না করার বিষয়টি রহস্যজনক। জসিম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। তবে তিনি জানান যে, এই চাল পুলিশ/আনসার সদস্যদের রেখে যাওয়া চাল-তিনি ব্যসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন। একটি শৃঙ্খলিত বাহিনীর কোন সদস্য স্বল্পমূল্যের রেশন বিক্রি করে এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাছাড়া সরকারি গুদামে রেকর্ডপত্র ব্যতিত গুদামে চাল রাখা বা বিক্রি করা দন্ডনীয় অপরাধ। সরকারি গুদামে চালের মজুদ প্রায় শূন্য হয়ে যাওয়ায় সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে আতপ ও সিদ্ধ চাল আমদানি করে মজুদ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ঝিনাইদহ গুদামের অনুকুলে ৭০০ মেট্রিক টন সিদ্ধ এবং একশ’ টন আতপ চালের প্রোগ্রাম হয় বলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং ওসিএলএসডি জানান। সম্প্রতি ভারত থেকে উন্নতমানের সিদ্ধ চালের জাহাজ মংলা বন্দরে আসে। এই সরু চালের বাজারমূল্য অনেক। এই চাল বাজারে বিক্রি করে বাজার থেকে নিম্নমানের চাল গুদামে নেওয়া হলে বড় মুনাফা হবে। খাদ্য বিভাগের একটি চক্র এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য তৎপর হয়। এই তৎপরতার অংশই ঝিনাইদহের চাল পাচারের নেপথ্যের কাহিনী বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

সূত্র মতে, কন্ট্রোলার মুভমেন্টের সাথে যোগাযোগ করে ভারতীয় সিদ্ধ চাল ঝিনাইদহ গুদামে নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে দর দাম ঠিক করে খুলনা থেকে আসা চালের ট্রাক গুদামে না এনে সরাসরি ব্যবসায়ীর আড়তে উঠনো হয়। কালীগজ্ঞ এবং শহরের পাশ্ববর্তী কয়েকটি মিল থেকে নিম্নমানের চাল এনে মজুদ দেখানো হয়। এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। খাদ্য বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা এ বিষয়ে অবগত ছিলেন। সপ্তাহে অন্তত একদিন আগত ট্রাকের চালান পরীক্ষা করে প্রতিস্বাক্ষর করেন তদারকি কর্মকর্তা। তিনি চালানে বর্ণিত চালের মান ও মজুদ দেখে গুদাম কর্মকর্তার গ্রহণকৃত চালানে প্রতিস্বাক্ষর করেন। জসিমকে যখন আটক করা হয় তখন ভূয়া ডিও দেখিয়ে মজুদ ঠিক দেখানো হয়। পরবর্তীতে গোপনে চাল ঢুকিয়ে সমন্বয় করা হয়েছে। আগত এবং জব্দকৃত চালের মান ও বিলিকৃত চালের মান পরীক্ষা করা হলে অসংগতি মিলবে। সরবরাহ করা চালের প্যাকেজ, সেলাই প্রকৃত প্রেরিত চালের বস্তার সাথে মিল নেই্। জেলা খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তিন সদস্যের একটি খাদ্য বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে জড়িত ব্যক্তিকে দিয়ে গঠিত কমিটির রিপোর্ট প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার প্রয়াস পাবে বলে অভিযোগ ওঠে। ইতিমধ্যে কমিটি রিপোর্ট জমা হয়েছে। জসিমকে নির্দোষ এবং ফুলের মতো পবিত্র হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় তা’হলে ভারতীয় উন্নতমানের সিদ্ধ চাল আসল বস্তাসহ বাজারে কী করে এলো? চাল আটকের পর বিভিন্ন গুদামে যেখানে চাল নেই সেখানে ঝিনাইদহ গুদামে এতো চাল পরিবহন কী ইঙ্গিত দেয়। শুধু জসিম নয়, অনেক রাঘব বোয়াল এই অপকর্মের সাথে জড়িত এমনটাই মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। আর তাই তড়িঘড়ি ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে তাকে বদলি করা হয়েছে। স্বচছতার জন্য গুদাম সিল করে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মালামাল ওজন করা হলে কিছুটা হলেও অনিয়ম ধরা পড়তো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে পথে না গিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে ঝিনাইদহ জেলার সদর খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি জসিম উদ্দীন শতভাগ ওজন ছাড়াই গুদাম কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদের কাছে আজই দায়িত্ব হস্তান্তর করে দায়মুক্ত হতে চাইছেন। এই চক্রের রাঘববোয়ালরাও চাইছেন এভাবেই ঘটনা ধামাচাপা দিতে।

 

ঝিনাইদহ জেলার সদর খাদ্য গুদামের ওসিএলএসডি জসিম উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি লোকসমাজকে জানান, ‘র‌্যাব কর্তৃক আটককৃত ২০০ বস্তা অর্থাৎ ১০ মেট্রিক টন চাল আমার গুদামের নয়। এই চাল কোথা থেকে কীভাবে ব্যবসায়ীরা এনেছেন সেটা আমার জানার কথা নয়। তাছাড়া, সরকারি গুদামের চালের বস্তায় এখন বাজার সয়লাব। আর তদন্তে আমার গুদামে কোন চাল কম পাওয়া যায়নি।’ এদিকে, চালসহ জসিমকে আটকের পর তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, ‘আটক চাল পুলিশ/আনসার সদস্যদের রেখে যাওয়া চাল তিনি ব্যসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন।’ আর এখন বলছেন আটক চাল তার গুদামের নয়। তার এই স্ববিরোধী বক্তব্যই প্রমাণ করে ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।’

 

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসান মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি লোকসমাজকে বলেন, র‌্যাব কর্তৃক আটককৃত ২০০ বস্তা অর্থাৎ ১০ মেট্রিক টন চাল আদালত নিলামে বিক্রি বা সরকারি গুদামে সংরক্ষণ করার জন্য নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক ঝিনাইদহ সদর গুদামে চাল সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশাদুল হককে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। কমিটির অন্য দু’সদস্য হলেন- সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসান মিয়া ও শৈলকূপা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোজাম্মেল হোসেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হাসান মিয়া আরও জানান, গুদামের স্টক নিরীক্ষণ করে চাল কম পাওয়া যায়নি। এর চেয়ে বেশি কিছু তিনি বলতে পারবেন না বলে জানান। তবে তিনি বলেন, গুদাম কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনকে মাগুরায় বদলি করা হয়েছে। তার স্থলে গুদাম কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ যোগদান করবেন। রোববার নাগাদ দায়িত্ব হস্তান্তর হবে। অপরাধ না করলে কেন ওসিএলএসডি জসিম উদ্দীনকেকে বদলি করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই ভাল বলতে পারবেন।

 

এ বিষয়ে জানার জন্য ঝিনাইদহ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বাবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি লোকসমাজকে বলেন, ‘তদন্তে সদর খাদ্য গুদামের ওসিসএলএসডি জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। সে কারণে তাকে অন্যত্র পদায়নের জন্য সুপারিশ করি। আরসি ফুড তাকে মাগুরা জেলায় বদলির নির্দেশ দিয়েছেন।’ গুদামের চাল পাচার করে ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি প্রসঙ্গে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বলেন, ওসিএলএসডি জসিম উদ্দীন তার সামনেই বলেছেন আটক চাল পুলিশের রেশনের বিক্রি করা। কিন্তু কোন কাগজপত্র ছাড়া অন্যের বিক্রিত চাল গুদামে রেখে এবং তা বিক্রি করে অন্যায় করেছেন। তাছাড়া তদন্ত কমিটি খামালের বস্তা গণনা করে রিপোর্ট দিয়েছেন। শতভাগ পরিমাপ করা ছাড়া বলা যাবে না এটা গুদামের চাল কিনা। গুদামের ভাল সিদ্ধ চাল বিক্রি করে খারাপ চাল খামালের মধ্যে রাখার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাবুল হোসেন বলেন, এটাও শতভাগ পরীক্ষা করা ছাড়া বলা যাবে না। এমন অভিযোগ তার কাছেও এসেছে বলে তিনি জানান। যে গুদামকর্তা চার্জ নেবেন তাকে খাদ্য শষ্য শতভাগ ওজন করে চার্জ গ্রহণের জন্য বলবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে স্ববিস্তার জানার জন্য খাদ্য অধিদফতরের খুলনা বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ড. এসএম মহসিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কয়েকবার রিং দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বদরুল হাসানের সাখে যোগাযোগ করে তাকেও পাওয়া যায়নি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

vulkan vegas, vulkan casino, vulkan vegas casino, vulkan vegas login, vulkan vegas deutschland, vulkan vegas bonus code, vulkan vegas promo code, vulkan vegas österreich, vulkan vegas erfahrung, vulkan vegas bonus code 50 freispiele, 1win, 1 win, 1win az, 1win giriş, 1win aviator, 1 win az, 1win azerbaycan, 1win yukle, pin up, pinup, pin up casino, pin-up, pinup az, pin-up casino giriş, pin-up casino, pin-up kazino, pin up azerbaycan, pin up az, mostbet, mostbet uz, mostbet skachat, mostbet apk, mostbet uz kirish, mostbet online, mostbet casino, mostbet o'ynash, mostbet uz online, most bet, mostbet, mostbet az, mostbet giriş, mostbet yukle, mostbet indir, mostbet aviator, mostbet casino, mostbet azerbaycan, mostbet yükle, mostbet qeydiyyat