অরক্ষিত গণিতবিদ অধ্যাপক কেপি বসুর বাড়ি

প্রকাশিত: ৩:৩৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭

অরক্ষিত গণিতবিদ অধ্যাপক কেপি বসুর বাড়ি

অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংসের মুখে বাংলার বিখ্যাত গণিতবিদ অধ্যাপক কালীপদ (কেপি) বসুর স্মৃতিবিজড়িত ঝিনাইদহের হরিশংকরপুরের প্রাসাদোপম বাড়িটি। তদারকি না থাকায় কেপি বসুর একমাত্র স্মৃতিচিহ্নটি দখল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গুণী এ ব্যক্তির স্মৃতি রক্ষায় সরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকায় দিন দিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে বাড়িটি। এরই মধ্যে বাড়ির বেশ কয়েকটি ভবনের পলেস্তারা খসে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় অধিকাংশ ভবনই পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। বিদ্যুত্ না থাকায় সন্ধ্যার পর ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে বাড়িতে। ২০০৫ সালের দিকে কেপি বসুর বাড়ির পরিত্যক্ত একটি ভবনের নিচতলায় অস্থায়ীভাবে হরিশংকরপুর ডাকঘরের কার্যক্রম চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯০৭ সালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামের নবগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে নয় বিঘা জমির ওপর নয়নাভিরাম প্রাসাদোপম বাড়িটি নির্মাণ করেন কালীপদ বসু। ভবন নির্মাণের জন্য বিদেশী কাঠ ও সৃজনশীল কারুকাজ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বাড়ি থেকে সিঁড়ি নামানো হয় ওই সময়ের প্রমত্তা নবগঙ্গা নদীতে। বাড়িটির অপরূপ সৌন্দর্য এখনো গ্রামের মানুষকে বিমোহিত করে। বাড়ির নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন শতশত দর্শনার্থী হরিশংকরপুর গ্রামে ভিড় করেন। ঐতিহাসিক এ বাড়িটি সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থীরা।

জানা গেছে, বাংলার এ বিখ্যাত গণিতবিদ কালীপদ বসু (কেপি বসু) ১৮৬৫ সালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মহিমাচরণ বসু। কেপি বসুর শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় নিজ গ্রামের পাঠশালায়। গ্রাম্য পাঠশালায় শিক্ষক নাছিম বিশ্বাসের কাছে জটিল অংকের সমাধান করার শিক্ষা নেন তিনি। এর পর তিনি লর্ড রিপন কলেজে ভর্তি হন এবং এখান থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতশাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৮৯২ সালে তিনি ঢাকা কলেজে গণিত শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং আমৃত্যু ওই কলেজের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

শিক্ষকতা জীবনে তিনি পাঠদানের মধ্যেই নিজের কর্মকাণ্ডকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তার ‘আধুনিক অ্যালজাবরা’ বইটি আধুনিক গণিত অধ্যয়ন ও অনুশীলনের পথকে সুগম করেছে। এছাড়া তিনি অসংখ্য নতুন অংক উদ্ভাবন করে এ শাস্ত্রের কলেবর বৃদ্ধি ও উত্কর্ষসাধন করেছেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি অ্যালজাবরা ও জ্যামিতিশাস্ত্রের গবেষণা চালিয়ে গেছেন। তার ঐকান্তিক সাধনায় ‘অ্যালজাবরা মেডইজি’, ‘মডার্ন জিওমেট্রি’ ও ‘ইন্টারমিডিয়েট সলিড জিওমেট্রি’ প্রভৃতি গ্রন্থ রচিত হয়।

১৯১৪ সালে তিনি পার্নিসাস ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। কেপি বসুর ভাই ও পরিবারের অন্য সদস্যরা ভারতে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে কলকাতার বসু পাবলিসার্স কেপি বসু পরিবারের স্মৃতি বহন করে।

স্মৃতি হিসেবে কেপি বসুর নামে ঝিনাইদহ শহরে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। কেপি বসুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি সরকারিভাবে সংস্কার করে দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, বিশাল এ বাড়িতে এখন কেপি বসুর কর্মচারী বলাই কুমারের সন্তানরা বসবাস করেন। ওই বাড়িটি সংরক্ষণের কোনো সরকারি উদ্যোগ নেই। ফলে নতুন প্রজন্ম কেপি বসু কিংবা তার তৈরি এ ভবন সম্পর্কে কোনো তথ্য জানতে পারছে না। তাই দ্রুত সরকারিভাবে ভবনটি সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক জাকির হোসেন বলেন, সরকারিভাবে পর্যায়ক্রমে সংরক্ষণের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। অচিরেই গণিতবিদ অধ্যাপক কালীপদ বসুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ