আইন মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব পরিচয় দিয়ে নাম্বার সংগ্রহ ! অতপর বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চরমপন্থি পরিচয়ে চাঁদা দাবী!

প্রকাশিত: ৭:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯

 

ঝিনাইদহ সংবাদ ডেস্ক ঃ
আইন মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব পরিচয় দিয়ে নাম্বার সংগ্রহ ! অতপর বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চরমপন্থি পরিচয়ে চাঁদা দাবী! করা হচ্ছে । এ ঘটনায় সরকারী চাকরীজীবীদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে কেও কেও থানায় জিডি করেছেন। আবার কেও গোপনে বিকাশের মাধ্যমে টাকাও পরিশোধ করছেন।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চারজন নাজির, হরিণাকুন্ডু ও কালীগঞ্জ হিসাবরক্ষন অফিসের কর্মকর্তাসহ অডিটর এবং জেলার ৬ সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহকারীদের কাছে চাঁদ দাবী করা হয়েছে। জানা গেছে দুই সপ্তাহ আগে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ মুন্সিখানার (আরএম) প্রধান সহকারী মানস কুমারের কাছে আইন মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব পরিচয় দিয়ে ফোন আসে। তার কাছে ঝিনাইদহ জেলার ৬ সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহকারীদের মোবাইল নং চাওয়া হয়। মানস কুমার বিষয়টি ঝিনাইদহ জেলা রেজিষ্ট্রি অফিসকে অবহিত করলে অফিসের এক্সট্টা মহরার জাকির হোসেনকে নিয়ে নাম্বার পাঠানো হয়।

কথিত আইন মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিবের ০১৮৮৫৪৯৫৪৮৬ নাম্বারে ফোনে করে আবার নাম্বারগুলো পাঠানো হয়। নাম্বার দেওয়ার পর থেকে জেলার ৬ উপজেলার সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহকারীদের মোবাইল ফোনে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন পুর্ববাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির বিপ্লব ও গাজী মহিউদ্দীন পরিচয় দিয়ে একের পর এক চাঁদা দাবী করা হচ্ছে। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ সাবরেজিষ্ট্রি অফিসের প্রধান সহকারী আশরাফ হোসেন ঝিনাইদহ সদর থানায় গত ৪ ফেব্রয়ারী একটি জিডি করেছেন। যার জিডি নং ১৭৩।

ডিসি অফিসের প্রধান সহকারী মানস কুমার খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, আইন মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব পরিচয় দিয়ে ফোন করার কারণেই তিনি নাম্বারগুলো সংগ্রহ করে দেন। তিনি বলেন অনেক সময় ভুয়া পরিচয় দিয়েও এমন কান্ড ঘটানো হয়। বোঝা যাচ্ছে এ ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে।

ঝিনাইদহ সদর সাব রেজিষ্ট্রার মৃত্যুঞ্জয়ী শিকারী বলেন, ডিসি অফিস থেকে মোবাইল নাম্বার চাওয়ার কারণে আমরা দিয়েছি। এখন সরকারের এজেন্সিগুলোর উচিৎ দুস্কৃতিকারীদের মোবাইল ট্রাকিং করে খুজে বের করা।

হরিণাকুন্ডু সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সহকারী ফজলুর রহমান বলেন, আমার কাছেও চাঁদা দাবী করা হয়েছিল, কিন্তু আমি জিডি করিনি। এদিকে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রধান নাজির জাহিদ হাসান লিপু, নাজির আব্দুল হান্নান, রতন কুমার ও সাইফুল ইসলামের কাছেও চাঁদা দাবী করা হয়েছে। তারাও ঝিনাইদহ সদর থানায় জিডি করেছেন বলে প্রধান নাজির জাহিদ হাসান লিপু জানান। তিনি আরো জানান, ফোন করে পুর্ববাংলা দলের পরিচয় দিয়ে বলা হয় “র‌্যাবের সাথে যুদ্ধ করে আমাদের বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। তাদের সাহায্যের জন্য ০১৯০৯০৮৮১১৭ বিকাশ নাম্বারে টাকা দিতে হবে। অন্যথায় সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের খুন জখম করা হবে”।

একই ভাবে হরিণাকুন্ডু উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসার মৃগেন্দ্র নাথ সাহা, অডিটর রুজদার আলী ও কালীগঞ্জ হিবাস রক্ষন অফিসারকে মোবাইলে চাঁদা দাবী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান খান বলেন, আমরা এ বিষয়ে অবগত আছি। নাম্বারগুলোর রেজিষ্ট্রেশন না থাকার কারণে পরিচয় সনাক্তকরা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ট্রাকিং করে দুর্বৃত্তদের অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, এরা প্রতারক চক্র। এদের হুমকীতে বিচলিত না হতে সংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ র‌্যাব ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান,আইন মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব পরিচয় দিয়ে নাম্বার সংগ্রহ ! অতপর বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চরমপন্থি পরিচয়ে চাঁদা দাবী! করা হচ্ছে এমন বেশ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত শুরু করি । আমাদের বিভিন্ন ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে জানতে পেরেছি এই সমস্থ ফোনকল ঢাকার মিরপুর থেকে করা হচ্ছে। এরা শুধুমাত্র ধান্দাবজির একটি গ্রুপ। তাদের গ্রেফতারের চেস্টা চলছে। তিনি আরো জানান, এতে আতঙ্কিত হবার কিছু নাই। তাদের ফোন পেয়ে কোনো টাকা পয়সা না দেওয়ার অনুরোধ সহ র‌্যাবকে জানানোর জন্য বলেছেন র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

 

 

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ