আহমেদ নাসিম আনসারী
ঝিনাইদহ আস্তে আস্তে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে বাপ-দাদার এই পেশা। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার ও সময়ের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে কামার শিল্প। কাজের অভাবে কামার শিল্পীরা ধুকছে, এভাবেই নিজের জীবণযুদ্ধের কথা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে জানালেন ঝিনাইদহ প্রধান হাটখোলার ৬৫ বছরের কামার কমল কর্মকার।
তবে তিনি আরও জানান, সামনের কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। কোরবানীর পশু জবাই ও গোস্ত বানানোর কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র বানানোর কাজে ১১ মাস অলসের পর এক মাস তারা নাওয়া-খাওয়া, ঘুম ভুলে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। হাতে অতিরিক্ত কাজ থাকার কারণে এখন অনেকেই নতুন কাজ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন ২৪ ঘন্টা কামার পল্লীতে ঠুং ঠাং শব্দ লেগেই আছে।
সরেজমিনে কামার পল্লিতে যেয়ে দেখা যায়, কয়লার আগুনে লাল টকটকে তেঁতে ওঠা লোহায় হাতুড়ি দিয়ে দু’দিক থেকে ইচ্ছামতো পেটাচ্ছেন কামাররা। লাল রঙ ফিকে হয়ে এলে পানিতে ভিজিয়ে আবারও পেটানো হচ্ছে। কেউ বা শান দিয়ে ধার দিচ্ছে ছুরি-চাপাতি। রেত দিয়ে কেউ আরও ধারালো করছে দা কিংবা চাপাতি।
ডাকবাংলা বাজারের কামার র্দুলভ কর্মকার জানান, ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। কোনো দিকে তাকানোর ফুরসত নেই তাদের। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে তাদের দা, ছুরি ও চাপাতি তৈরি এবং মেরামতের কাজ।
তিনি অঅরও জানান, লোহা, কয়লা ও শ্রমের মূল্যবৃদ্ধি এবং পুঁজির অভাবে বছরের অন্য সময় ব্যবসা ভাল করতে না পারলেও এই সময়টাতে বেচাকেনা ভাল হওয়ায় তারা ব্যস্ত রয়েছে পৈত্রিক পেশায়। সারা বছরের কর্মহীন ক্ষতি তারা পুষিয়ে নিতে চায় এই কয়েকদিনে। সে কারণে কামার পল্লীর কারিগরদের চোখে ঘুম নেই।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলার ৬৭ ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ কামার পরিবার কাটাচেছ প্রচন্ড ব্যস্ত সময়।
কামার ক্যামল কর্মকার জানান, এ শিল্পের প্রধান উপকরণ লোহা ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় কামাররা সমস্যায় পড়েছেন। আগে ২০-৩০ টাকায় এক বস্তা কাঠ কয়লা পাওয়া যেত। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০-৮০ টাকায়। গত বছর লোহার কেজি ছিল ৮০ টাকা। এ বছর তা কিনতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। কাজেই বাধ্য হয়ে আমাদের দাম বাড়াতে হচ্ছে।
এ পেশা বাপ দাদার কাছ থেকে পাওয়া, তাই কষ্ট হলেও এ পেশা ধরে রাখতে চান ঝিনাইদহের এই কামার কারিগররা।